বুধবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঢাকায় গৃহবধু উর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু
ঢাকায় গৃহবধু উর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু
পাবনা প্রতিনিধি :: (১৪ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৪৭মি.) ঢাকার আদাবরে স্বামীর ভাড়াটিয়া বাসায় পাবনার মেয়ে গৃহবধু তাসলিমা খাতুন উর্মী (২৫) এর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। উর্মীকে হত্যা করা হয়েছে না তিনি আÍহত্যা করেছেন তা নিয়ে উর্মীর পিতা ও আত্মীয়সজনদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশ গত ২৪ ডিসেম্বর রাত সোয়া ৮ টায় ঢাকা আদাবর থানার শেখেরটেক এর ভাড়াটিয়া ফ্লাট বাসার ৫ তলা থেকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় নিহত উর্মীর মৃত দেহ উদ্ধার করেছে।
সূত্রমতে জানা গেছে, নিহত উর্মী পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামের মো. মোকসেদ আলীর কন্যা। বিগত ২০১২ সালের ২৩ মার্চ সাঁথিয়া উপজেলার বায়াগ্রামের মৃত আজগর আলী প্রামাণিকের পুত্র আব্দুল আলিমের সাথে করমজা গ্রামের মোকসেদ আলীর কন্যা তাসলিমা খাতুন উর্মীর বিবাহ হয়।
বিবাহের পর প্রথমে স্বামী-স্ত্রী ঢাকার রাজাবাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করতো। এরপর তারা ঢাকা আদাবর শেখেরটেক রোড নং-১০, বাসা নং-২৬/এ, এর ৫ম তলার উত্তর পাশে ফ্লাটে বসবাস করতো। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ঢাকা ল্যাব এইডে চাকুরী করতো। উর্মী ছিল রিসিপসনে এবং স্বামী আব্দুল আলিম ডেপুটি ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন।
গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে উর্মী তার পিতা মোকসেদ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে কথাবর্তা বলেন।
এদিন বেলা ৪ টার দিকে ০১৬৭০-৮৬০৩১০ মোবাইল নম্বর থেকে কথিত মামুন নামের এক যুবক উর্মীর পিতা ও উর্মীর ছোট বোনকে জানায়, আপনাদের মেয়ে উর্মী সম্ভবত মারা গেছে। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে উর্মীর মা রত্মা খাতুন তার জামাই আলিমকে ফোন করে উর্মীর সম্পর্কে জানতে চায়। তখন জামাই আলিম জানায়, আমি অফিসে আছি পরে জানাচ্ছি।
নিহত উর্মীর মামা পাবনা মটর মালিক শেরে খান লাল বাবু জামাই আলিমকে ওই দিন রাত ৭ টার দিকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি বাসার সামনে, বাসার গেট বন্ধ ও তালা মারা। বাসাওয়ালা বাড়ি নেই, আমি দেখছি। এর ১০/১৫ মিনিট পরে জামাইকে পুনরায় ফোন করলে তিনি চিৎকার করে কেদে ফেলে বলেন, উর্মী গলায় ফাঁসি নিয়েছে। এরপর আদাবর থানার পুলিশ রাত সোয়া ৮ টার দিকে বাসার ৫ তলার সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁসি নেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় উর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ উর্মীর লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসি মেডিসিন বিভাগে প্রেরণ করেন।
ময়না তদন্ত শেষে ২৫ ডিসেম্বর উর্মীর মৃতদেহ তার পিতার কাছে হস্তাস্তর করা হয়। ওই দিনই উর্মীর মৃতদেহ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামে পিতার বাড়িতে নিয়ে আসা হয় এবং নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়। উর্মীর মৃতদেহ পাবনার সাঁথিয়া গ্রামের বাসায় নিয়ে আসার সময় ঢাকা থেকে জামাই আব্দুল আলিম সহ ৩ জন সঙ্গে এসেছিল। গ্রামের বাড়িতে নিহত উর্মীর মৃত্যু সম্পর্কে আলিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি আবলতাবল বলার সময় উর্মীর আত্মীয়স্বজনের রোশানল থেকে রক্ষা করতে আলিমের লোকজন এসে জোরপূর্বক তাকে নিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে আলিমের সাথে শ্বশুর মোকসেদ আলী ও তার আত্মীয়স্বজনদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। উর্মীর পিতা মোকসেদ আলী জানান, মেয়ে উর্মীর ইচ্ছামতো মেয়েকে আলিমের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। তাদের পারিবারিক অশাস্তি হলেও উর্মী পিতা-মাতাকে কখনো তা জানায়নি। উর্মীর পিতা মনে করেন জামাই আলিম তার মেয়ে উর্মীকে হত্যা করে হত্যাকান্ড ঘটনাকে ধামাচাঁপা দেওয়ার জন্য আÍহত্যার নাটক সাজিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আবাদর থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলা নং-১০১৪, তাং-২৪/১২/২০১৬ ।
উল্লেখিত মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আদাবর থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহ্ কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, নিহত উর্মীর মৃতদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া গেলে উর্মীর মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাবে।