শনিবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » ২০১৭ সালের প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা
২০১৭ সালের প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা
লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল :: (১৭ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৫মি. ২০১৭ ইংরেজি) খ্রিষ্টীয় বর্ষ ২০১৬ বিদায় নিয়ে ২০১৭ সালের আজ প্রথম দিন। বিদায়ী বছরে আমাদের যথেষ্ট প্রাপ্তি রয়েছে, যদিও ২০১৬ সাল ছিলো দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাস জেঁকে বসার বছর। এই বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৫টি জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে পুরোহিত, ভিক্ষু, যাজক, শিয়া, ও আহমদিয়া সম্প্রদায় এবং বিদেশী নাগরিক হত্যা। পুলিশ বলেছে দেশী জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবি এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের মতে, এখন জঙ্গিদের বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই। তবে অভিজ্ঞ মহলের মতে জঙ্গি তৎপরতার স্রোতটি ক্ষীণ হয়ে পড়লেও একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিষয়ে সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। ২০১৬ সালে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল প্রায় স্থীতিশীল। ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বেশ কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে, আরো কয়েকজনের রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় সাফল্য বয়ে এনেছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অক্ষুণœ রাখা সম্ভব হয়েছে। নানা সমস্যার পরও শিক্ষা, বিদ্যুৎ, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনেকাংশে সফলতা অর্জিত হয়েছে। দেশের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বছরের শুরু থেকে নির্বাচনী ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারকে। মোট ৬ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল দেশে প্রথমবারের মতো নিজস্ব দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করে। বছরের শেষের দিকে জেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া নারাযণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। যা দেশের গণতন্ত্র চর্চায় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য ও সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আরো তরাম্বিত হতো। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমি আশা করি, নতুন বছর ২০১৭ ভালো কাটবে, সবার জীবনে বয়ে আনবে সাফল্য। তবে নানা তথ্য, উপাত্ত ও অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় যে, জাতীয় রাজনীতিতে সমঝোতা হবে বা সুবাতাস বইতে পারে এমন কোন লক্ষণ আমি দেখছি না। রাজপথ উত্তপ্ত থাকতে পারে নতুন বছর জুড়ে। আমি আশা করি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং দেশে যাতে সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ হয়, উন্নয়নের পথের বাধাগুলো অপসারিত হয়, তারা সেই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। কোন রাজনৈতিকদল আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতার প্রশয় নিবেন না বলে আশা করি। সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশপ্রেমের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করতে হবে। আশা করি, নতুন বছরে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশার আলোকে মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কর্মসংস্থান প্রভৃতি নিশ্চিত করতে এবং সমাজের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করবে। সকল নাগরিকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমকে অধিক শক্তিশালী করতে হবে। বাঙালীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে সমঅধিকার আইনগত অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সর্বদা আমাদের কাজ করতে হবে। ২০১৭ সালের সম্ভাবনার জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে জানুয়ারি প্রথম দিবস থেকেই, যেনো মানুষের সুখ-শান্তি ও গণতন্ত্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে আমরা সকল রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐক্য চাই। জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করে তার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। আমি মনে করি বিদায়ী বছর ২০১৬ সালের জঙ্গি-সন্ত্রাসের চেহারাটি বাংলাদেশের প্রকৃত চেহারা নয়, বাংলাদেশের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়, পরোপকারী ও ধর্মভীরু। রাজনৈতিক নেতৃত্বে শুভবৃদ্ধির উদয় হলে সকলের প্রচেষ্টায় আমরা সমৃদ্ধশালী স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। ২০১৭ সাল সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি।
লেখক পরিচিতি :
লায়ন মো. গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, কলাম লেখক ও সংগঠক)
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি