মঙ্গলবার ● ৩ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ দু’নারীর আত্মহত্যা
গাজীপুরে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ দু’নারীর আত্মহত্যা
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরে ২ জানুয়ারি সোমবার পৃথক ঘটনায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ দু’নারী আত্মহত্যা করেছে। নিহত কলেজ ছাত্রী চাদনী (১৬) ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার তেলজুরী গ্রামের মিলু শেখের মেয়ে। সে তার মা জোসনা বেগম ও সৎ বাবা বেলাল হোসেনের সঙ্গে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হাবিবপুর এলাকায় বসবাস করতো।
নিহত অপর গৃহবধূ কাজলী বেগম (৩২) স্বামীর বাড়ী জেলার কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামে অবস্থান করে বাড়ীতে বাঁশ-বেত শিল্পের কাজ করতো।
জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রাস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী চাদনী আক্তার ২০১৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। চাদনীর সৎ বাবা বেলাল হোসেন ৬/৭ বছর আগে উপজেলার হাবিবপুর এলাকায় বনের জমিতে ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। বছর দু’এক আগে চাদনীর মা জোসনা বেগম স্বামী বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণের একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানা যায়। তখন বিষয়টি স্থানীয় ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।
এদিকে স্থানীয় শাকিল নামে এক যুবকের সাথে চাদনী প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরলে তার মা বাধা দেয়। এনিয়ে মা ও মায়ের কলহ সৃষ্টি হয়।
চাদনীর মা জোসনা বেগম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, সোমবার সকাল ৯ টার দিকে এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে মেয়েকে বকাঝকা করেন। এক পর্যায়ে চাদনী তার পড়ার ঘরে দিয়ে আড়ার সাথে ওরনা পেচিয়ে আত্মহত্যার করে। এক পর্যায়ে জোসনা বেগম ও তার ছেলে ঘরের ভিতরে গিয়ে তাকে নিচে নামিয়ে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। ঘর থেকে বের করার সাথে সাথেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর থেকে জোসনা বেগমের স্বামী বেলাল হোসেন ও চাদনীর প্রেমিক শাকিল হোসেন পলাতক রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান , চাদনী মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী তাদের বাড়ী যায়। এলাকাবাসীর উপস্থিতি টের পেয়ে লাশ ফেলে বাড়ীর সবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এলাকাবাসী তাদের কৌশলে বাড়ীতে ডেকে আনলেও এক পর্যায়ে বেলাল পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে থানা পুলিশ সোমবার বিকেল ৪ টার দিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
কালিয়াকৈর থানার ওসি তদন্ত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, থানা একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে ঘটনাটি হত্যা না আতœহত্যা।
অন্যদিকে একইদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জে পাওনাদারের নির্যাতন ও অপমানে গৃহবধূ কাজলী বেগম (৩২) আত্মহত্যা করেছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন নিহতের স্বামী আলামিন মিয়া। সোমবার সকালে নিজ ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ওইদিন দুপুরে কালীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্য মামলা (নং ১) দায়ের করেছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আমিনুর রহমান।
নিহতের স্বামী আলামিন জানান, প্রতিদিনের মত সোমবার ভোরেও তিনি ঢাকায় রিক্সা চালাতে চলে যান। সকালে কাজলী গৃহস্থলীর নানা কাজকর্ম সারে। এর ফাঁকে একই এলাকার মৃত শাজাহানের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন (৩৫) বাড়ীতে এসে পাওনা টাকা দাবি করে। কিন্তু কাজলী দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। আর এই নির্যাতনের অপমান সইতে না পেরে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
নিহতের শিশু ছেলে দিগন্ত (১১) বলেছে, সকালে সালাউদ্দিন কাকা মাকে বকছে আর মারছে। পরে মা আমারে ফুফুর বাড়ি থেকে স্কুলের জামা আনতে কয়। স্কুলের কাপড় লইয়া বাড়িতে আইয়া মায়রে ঘরের আড়ে লটকা দেইখ্যা বঁটি লইয়া কাপড় কাইটা মাটিতে নামাই।
স্থানীয়রা জানান, সকালে সাড়াশব্দ না পেয়ে তারা ঘরে ঢুকে দেখেন কাজলী ঝুলে আছেন। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেন। পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা সকালে কোন এক সময় তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আমিনুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিহতের গায়ে আঘাতের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তার থুতনির নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলম চাঁদ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ঘটনার কথা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। লাশ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। আপাতত অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।