বৃহস্পতিবার ● ৫ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে
অনলাইন ডেস্ক :: (২২ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বেলা ১.৫৩মি.) ভারতের দুটি সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। রাজধানী ঢাকাসহ অনেক এলাকায় কমে গেছে ইন্টারনেটের গতি।
বিশেষ করে দেশের যেসব ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল) অপারেটরদের ব্যান্ডউইডথের ওপর নির্ভরশীল তাদের গ্রাহকরা সংকটে পড়েছে। আইটিসি অপারেটররা মূলত ভারত থেকেই ব্যান্ডউইডথ সংগ্রহ করে।
ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বলেন, “আমরা জেনেছি, গতকাল ভারতের টাটা ইনডিকম কেবল বা টিআইসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কয়েক দিন আগে কাটা পড়ে ভারতি এয়ারটেলের ‘আই ২ আই’ সাবমেরিন কেবল। গত মাসে সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘আইমিউই’সহ ভারতের কয়েকটি সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক। এসব কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেটের গতি অনেক কমে গেছে। আজ (গতকাল বুধবার) এ অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। গতি স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। ”
এ বিষয়ে দেশের একমাত্র নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কেবলে কোনো সংকট নেই এবং যাঁরা আমাদের ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করছেন তাঁরা স্বাভাবিক গতির ইন্টারনেটই ব্যবহার করতে পারছেন। ’
মনোয়ার হোসেন জানান, ‘দেশে বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে রপ্তানি করা ১০ জিবিপিএসসহ প্রায় ৩০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে আমরা সরবরাহ করছি ১৭৭ জিবিপিএস। বাকিটা ছয় আইটিসি অপারেটরের মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে। ’
প্রসঙ্গত, দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা গত দেড় বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০১৫ সালের আগস্টে ভারতে ১০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি বা লিজের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে বিএসসিসিএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের চাহিদা ১২৬ জিবিপিএস। এর মধ্যে এসসিসিএলের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩৩ জিবিপিএস। আর বাকি ৯২ জিবিপিএস আসছে ভারত থেকে আইটিসি অপারেটরদের মাধ্যমে। অর্থাৎ দেশে নিজেদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ব্যবহার হচ্ছে ভরতীয় ব্যান্ডউইডথ। এ বাস্তবতায় অব্যবহৃত পড়ে থাকছে বিএসসিসিএলের প্রায় ১৬৭ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ। এই মূল্যবান সম্পদ কোনো কাজেই লাগছে না।
কিন্তু গতকাল মনোয়ার হোসেন জানান, চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে নিজস্ব ব্যান্ডউইডথের ব্যবহারও বেড়েছে। আমাদের বর্তমান সাবমেরিন এসএমডাব্লিউ-৫-এর ক্ষমতা এখনো ৩০০ জিবিপিএস সরবরাহের। বাংলাদেশ এরই মধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৫-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এখন পটুয়াখালীর ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ঢাকায় সংযোগের বিষয়টি অপেক্ষমাণ। আশা করা হচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে এটা চালু হবে। ৫৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ওই সাবমেরিন কেবল থেকে প্রথম পর্যায়ে পাওয়া যাবে আরো ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ। পরে পাওয়া যাবে প্রায় এক হাজার ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ।
দেশে ব্যান্ডউইডথ এভাবে অব্যবহৃত থাকার পরও কেন ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে—এমন প্রশ্নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের একমাত্র সাবমেরিন কেবলটি মেরামত বা অন্য কোনো বিপর্যয়ের কারণে মাঝে মাঝে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করতে পারে না। তখন বিকল্প কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ নিতে হয়। এ কারণেই দেশে ছয়টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আইটিসি অপারেটরকে বাইরে থেকে ব্যান্ডউইডথ আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হয়। এসব অপারেটর মূলত ভারত থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ আমদানি করছে এবং বিএসসিসিএলের চেয়ে অনেক কম দামে তারা ব্যান্ডউইডথ আমদানি করতে পারছে। সূত্র: কালের কন্ঠ।