রবিবার ● ৮ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » বাংলাদেশে নতুন ভাবে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা
বাংলাদেশে নতুন ভাবে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা
উখিয়া প্রতিনিধি :: (২৫ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.১৩মি.) সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবি-কোষ্টগার্ডের কড়া নজরদারি সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
প্রায় প্রতিদিন ভোর রাতের দিকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে উখিয়ার কুতুপালং বস্তি এলাকায়। পরে সুযোগ বুঝে কিছু কিছু রোহিঙ্গা বস্তি ছেড়ে তাদের লক্ষ্যস্থলে চলে যাচ্ছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা বস্তির আশে পাশে ঝুঁপড়ি করে বসবাসের সুযোগ নেওয়ার সুবাধে রোহিঙ্গার পরিধি বাড়ছে দিন দিন।
সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন বালুখালী এলাকায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার নুরুল আবছার ও এক চিন্থিত ইয়াবা গড়ফাদারের নেতৃত্বে নতুন করে আরো একটি বস্তি গড়ে উঠলেও প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই। অনিয়ন্ত্রতিত এসব রোহিঙ্গারা জীবন জীবিকার তাগিদে অপরাধ প্রবণতায় সম্পৃক্ত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শ্রমের বাজার দখল, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বনভূমি বেহাতসহ সর্বোপরি সার্বিক বিষয়ের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এনিয়ে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা করে ৭ জানুয়ারি বালুখালী নতুন বস্তি এলাকা পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের একস্থানে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
১৯৯১ সালে নাফনদী অতিক্রম করে আসা প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের আওতায় এনে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলেও কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ আরমান শাকিল সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, নিবন্ধিত এ ক্যাম্পে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছে ইউএনএইচসিআর। ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও আনসার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, বস্তি এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গারা তার নিয়ন্ত্রণে নয় বিধায় সেখানে প্রায় সময় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও করার কিছু নেই। বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ২০১০ সালে অনুপ্রবেশকারী প্রায় ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাস করছে। সম্প্রতি মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে বর্মী সেনা তান্ডবে নিমর্মতার শিকার প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা মংডু প্রদেশ ছেড়ে গত দেড় মাসে বস্তি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। গত ৫ দিনে আরো প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে সীমান্তের নাফনদীর জিরো পয়েন্ট থেকে ১ কিলোমিটার পশ্চিমে বালুখালী এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় এনজিও সংস্থা হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক এম এ কাশেম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, নাফনদীর কাছাকাছি নতুন ক্যাম্প সৃষ্টি হওয়ার সুবাধে রোহিঙ্গারা সরাসরি অনুপ্রবেশ করে ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে পারে। এ কারণে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাবে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ ভূমিকা না রাখলে এসব রোহিঙ্গারা জীবন জীবিকার তাগিদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে পারে। ফলে এলাকার আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। নিবন্ধিত রোহিঙ্গা নেতা ফয়সাল আনোয়ারের মতে নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন একটি বস্তি বিদ্ধমান থাকতে সীমান্ত এলাকায় আরো একটি বস্তি গড়ে উঠা মোটেও শুভ নয়। যেহেতু এদের নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে আলাদা লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। সম্প্রতি বনবিভাগের উপর হামলা এটাই প্রতিয়মান হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, রেজিষ্ট্রার্ড, আনরেজিষ্ট্রার্ড ছাড়াও উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এমনিতে রোহিঙ্গার ভারে ন্যুয়ে পড়া জনপদ উখিয়ার জনজীবন সার্বিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। উপরোন্তু এসব রোহিঙ্গাদের সীমাবদ্ধতায় আনা না হলে সাম্প্রতিক সময়ে বালুখালীতে গড়ে উঠা আরো একটি রোহিঙ্গা বস্তি এলাকাকে ঘিরে স্থানীয়দের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। স্থানীয় চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধূরী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, তার ইউনিয়নে নতুন রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে তোলার ব্যাপারে যাদের ইন্ধন রয়েছে এদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কায় কিসলু সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ক্রাইম জোন হিসাবে পরিচিত বালুখালী এলাকায় নতুন বস্তি গড়ে উঠার ব্যাপারে এ মুহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। যেহেতু সামনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার একটি টিম আসছে। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আরো একটি বস্তি গড়ে তোলা কোন ভাবেই কাম্য নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, তিনি ছুটিতে আছেন বিধায় এব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এব্যাপার উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, প্রায় ১০৫ হেক্টর বন বাগান দখল করে নতুন রোহিঙ্গারা ঝুঁপড়ি বেধে আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।