বুধবার ● ১১ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » পাবনা » চাটমোহরে শিক্ষা কর্মকর্তা লাঞ্ছিতের ঘটনায় মানব বন্ধন
চাটমোহরে শিক্ষা কর্মকর্তা লাঞ্ছিতের ঘটনায় মানব বন্ধন
চাটমোহর (পাবনা) :: (২৮ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৯মি.) চাটমোহরে কিছু উচ্ছৃংখল আওয়ামীলীগ নেতা কতৃক একের পর এক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এসমস্ত নেতা কর্মী দলের গুরত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবার পাশাপাশি ভেঙ্গে পড়তে বসেছে চাটমোহরের প্রশাসনিক কার্যক্রম। এনিয়ে চাটমোহরের সকল মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ। সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে চাটমোহর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল বাশার মো. শামসুজ্জামান জেলা আওয়ামীলীগের এক সিনিয়র নেতা কর্তৃক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আধাঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন কমসূচি পালিত হয়। পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপজেলা পরিষদ একাত্বতা ঘোষণা করেন। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাসাদুল ইসলাম হীরা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবাদ সভা শেষে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে ওই নেতার বিচারের দাবিতে ইউএনওর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন তারা। আগামী শনিবারের মধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত কারী আওয়ামীলীগ নেতাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান তারা। অন্যথায় আগামী রবিবার থেকে আরো কঠোর কর্মসূচী দেওয়া হবে বলে জানান তারা।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, সোমবার ফৈলজানা ইউনিয়নের কুঠিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের‘মিটিং শেষে স্কুলের দোতলা থেকে নামার পরপরই উক্ত আওয়ামীলীগ নেতা জানতে চান, শিক্ষা অফিসার কে ? পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে তিনি আমাকে চড় মারেন।’ কী কারণে এ ঘটনা ঘটলো জানতে চাইলে শিক্ষা অফিসার বলেন,আমি কিছুই জানি না। তিনি বলেন, ‘জীবনে কোন অন্যায় করিনি, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আজ এমনভাবে লাঞ্ছিত হলাম।’
এ ব্যাপারে উক্ত নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘন করে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে বর্তমান ইউএনও বেগম শেহেলী লায়লা, বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি), তৎকালীন নির্বাচন অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন ফৈলজানা ইউনিয়নে অভিযান চালালে ওই নেতা ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং নির্বাচন অফিসারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মাস দুয়েক পূর্বে নিমাইচড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামকে তার কর্মস্থলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতা। এর পূর্বে হান্ডিয়াল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা কর্তৃক ইউপি সচিব লাঞ্ছিত হবার ঘটনা ঘটেছে। ইতোপূর্বে চাটমোহরে কর্মরত থাকাবস্থায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফিরোজ শাহ্’র সম্মেলন কক্ষ ভাংচুর করে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। পাবনা পল্লী বিদ্যুত সমিতির তৎকালীন জিএম আব্দুল মান্নানকে ও লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। এসকল ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন।
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একের পর এক লাঞ্ছিত হবার ঘটনায় চাটমোহর অফিস পাড়ার জ্বলছে ক্ষোভের আগুন। চাটমোহরের সকল মহলে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিজ্ঞমহল মনে করছেন এই লাঞ্ছনা গোটা উপজেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের। অনেকে মনে করছেন এ সকল ঘটনায় আইন-শৃংখলার আরো অবনতি ঘটতে পারে। ভেঙ্গে পড়তে পারে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সরকারী অন্যান্য দপ্তরের উন্নয়ন কর্মকান্ড।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শেহেলী লায়লা জানান, স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো হয়েছে। এভাবে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করা হলে আমরা কোথায় যাবো। জেলা প্রশাসক মহোদয় যে ব্যবস্থা নিতে বলেন আমি সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।