মঙ্গলবার ● ১৭ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » চট্টগ্রামে জাহাঙ্গীরের প্রতারণায় দিশেহারা অনেকে
চট্টগ্রামে জাহাঙ্গীরের প্রতারণায় দিশেহারা অনেকে
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :: (৪ মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩০মি.) বিবাহিত ও ৩ সন্তানের জনক হলেও অবিবাহিত সেজে প্রেমের ফাদ পেতে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের সর্বস্ব লুটে নেওয়ার পর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আদায় ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের অভিজাত শপিংমল মিমি সুপার মার্কেটের দিতীয় তলার ২৩৮ নং দোকান প্যান্টালুনস এর স্বত্বাধীকারী জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের ছোট ঢেমশা ফকির পাড়ার মোজাহের মিয়ার পুত্র।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মিমি সুপার মার্কেট চট্টগ্রামের একটি অভিজাত শপিংমল হওয়ার সুবাধে সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজন কেনাকাটা করার জন্য এখানে আসেন, বিকিকিনির পাশাপাশি ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের মিষ্টি ব্যাবহার দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে অবিবাহিত সেজে প্রেমের ফাদ পাতেন এবং যখন কেউ তার ফাদে ধরা পরে তার সাথে ভালবাসার অভিনয়ের মাধ্যমে তার সর্বস্ব লুটে নেওয়ার পর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন মেয়েটির পরিবারের কাছ থেকে।
অভিযুক্ত প্রতারক ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের সর্বশেষ শিকার হয়ে অপমান সইতে নাপেরে পরিবারের সম্মান বাঁচাতে গত বছরের ২রা নভেম্বর বাসার বৈদ্যুতিক সকেটে হাত দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদর পাড়া ৯নং গলির মাষ্টার আবদুর রহমানের মেয়ে চট্টগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী “নুসরাত ফারিয়া নওশিন”।
নুসরাত ফারিয়া নওশিনের মেঝমামা রফিকুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, নওশিনের পরিবার চট্টগ্রামের চকবাজারে বসবাস করে, কেনাকাটা করতে মিমি সুপার মার্কেটে আসা-যাওয়ার সুবাদে প্রতারক ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে পরিচয় হয় নওশিনের, তারা বড়লোক সেটা জানতে পেরে অবিবাহিত সেজে নওশিনের সাথে প্রেমের ফাদ পাতে জাহাঙ্গীর, তার পাতা ফাদে গভিরভাবে জড়িয়ে পড়ে নওশিন, যাওয়া-আসা, অন্তরঙ্গ মেলামেশার কিছুদিন পরে নওশিন জাহাঙ্গীরকে বিয়ের কথা বললেই নিজের স্বরুপে ফিরে আসে জাহাঙ্গীর এবং তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে নওশিনের পরিবারের কাছথেকে ১ কোটি টাকা আদায় করার প্রচেষ্টা চালায়, তখন নওশিন জানতে পারে জাহাঙ্গীর বিবাহিত ও ৩ সন্তানের জনক, নওশিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
নওশিনের মেঝমামা রফিকুল ইসলাম আরো বলেন ব্ল্যাকমেইলিং বিষয়টা নওশিন তার অভিভাবকদের জানালে পরিবারের ও নওশিনের সম্মানের বিষয়টা চিন্তা করে কাউকে কিছু না জানিয়ে এতকিছুর পরও জাহাঙ্গীরের সাথে নওশিনের বিয়ে দিতে সম্মত হয় নওশিনের পরিবার, এসময় প্রতারক জাহাঙ্গীর ঝোপ বুঝে কোপ মেরে নওশিনকে বিয়ে করার বিনিময়ে ১ কোটি টাকা দাবী করে নাহলে তাদের পরিবারের সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।
তাই নওশিনের পরিবার সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে কোন আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন না করে কিছুটা নিরব ভুমিকা পালন করে, নওশিনের পরিবার চুপ থাকার কারণে টাকা আদায়ে আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠে প্রতারক জাহাঙ্গীর, নওশিনকে ফোন করে টাকা না দিলে তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় জাহাঙ্গীর, তখন অপমান সইতে না পেরে পরিবারের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে বাসার বৈদ্যুতিক সকেটে হাত দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় নওশিন, গুরুত্বর আহত অবস্থায় নওশিনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে নওশিন, প্রতারকের প্রতারণার ঝড়ে নিভে যায় একজন সম্ভবনাময় কলেজ ছাত্রীর জীবনপ্রদীপ।
নওশিনের মৃত্যুর ব্যাপারে কোন আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করেছেন কিনা জানতে চাইলে নওশিনের মেঝমামা রফিকুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আমার ভাগ্নীর ও আমাদের পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে কোন আইনগত ব্যাবস্থা নেইনি এমনকি আমার ভাগ্নীর মৃত্যুর বিষয়টাও একটা দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছি সবাইকে, কিন্তু আমার ভাগ্নীর মৃত্যুর পরও জাহাঙ্গীর আমার ভাগ্নীর বান্ধবীদের সাথেও অশালীন আচরণ সহ বিভিন্ন হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে যারফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘটনাটি জনসমক্ষে আনতে হল, আর কোন মেয়ে যাতে এই প্রতারকের খপ্পড়ে পরে মৃত্যুর মুখে পতিত না হয় এব্যাপারে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরুধ করছি।
নওশিনের বান্ধবী নিপু, মিশু, সুমি, ফারজানা, রিতু, রুহি ও তাসফিয়া সহ আরো অনেকে অভিযোগ করে অভিযুক্ত ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদককে বলেন, তাদের সম্পর্কের কথা আমরা সবাই জানতাম, নওশিন বড়লোকের মেয়ে হওয়ার কারণে জাহাঙ্গীর প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আদায়ের জন্য নওশিনকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করছে সেটা আমরা বুঝতে পারিনি, আর যখন বুঝতে পারলাম তখন সব কিছু শেষ হয়ে গেল, আমরা হারিয়ে ফেললাম ফুলের মত নিস্পাপ আমাদের প্রানপ্রিয় বান্ধবীকে, আমরা এটাকে আত্মহত্যা বলবনা, আমাদের বান্ধবীকে পরিকল্পিত ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে এই প্রতারক জাহাঙ্গীর, আমরা তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
মিমি সুপার মার্কেটের ব্যাবসায়ী ও অভিযুক্ত ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধুর কাছে জানতে চাইলে তারা সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও নওশিনের মৃত্যু কি কারণে হয়েছে সেটা জানতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
প্রতারণা ও অর্থ আদায়ের প্রচেষ্টার কারণে নওশিনের মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইলে ফোন করে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর ব্যাস্থতার অজুহাত দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন, এরপর বার বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আর কোন নওশিন যাতে এই প্রতারকের খপ্পড়ে পরে মৃত্যুর মুখে পতিত না হয় এব্যাপারে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরুধ করেছেন নওশিনের পরিবার।