বুধবার ● ১৮ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিলেটবাসীর সম্পদের প্রমাণপত্র খাচ্ছে উইপোকা
সিলেটবাসীর সম্পদের প্রমাণপত্র খাচ্ছে উইপোকা
সিলেট প্রতিনিধি ::(৫মাঘ ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১০মি.) ধুলোয় ধুসর গোটা রেকর্ডরুম। র্যাক ভর্তি করে রাখা হয়েছে নথিপত্রের বালাম বই। এসব বইয়ে স্থায়ী ঠিকানা গড়েছে ‘উইপোকা’। খুবলে খুবলে খাচ্ছে সিলেটবাসীর সম্পদের লিখিত প্রমাণপত্রের বইয়ের পাতা।
শুধু তাই নয়, পুরাতন হতে হতে বালামের কাগজও ছিঁড়ে পড়ছে এদিক-ওদিক। জনগুরুত্বপূর্ণ এসব বালাম বই কিংবা ইনডেক্সের কোনো নকল কপিও নেই। ফলে কারও কাগজপত্র ‘উইপোকায়’ খেয়ে ফেললে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে দুর্ভোগে পড়তে হবে মালিকদের। এমন চিত্র সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রারের রেকর্ডরুমের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমি রেজিস্ট্রির সকল বৈধ দলিল রাখা হয় রেকর্ড রুমেই। এর আগে একটি টিনশেড ভবনে ছিল সিলেটের রেকর্ডরুম। যেখানে রাখা হত সিলেটবাসীর সম্পদের দলিল। কিন্তু ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে দেন। ওই ভবনে স্থানাস্তরিত করা হয় রেকর্ডরুম।
কিন্তু স্থান সংকুলান হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তাতে ঘর বেঁধেছে উইপোকা। তাছাড়া সঠিক তদারকি আর লোকবল না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজও। এরই মধ্যে বেশ কিছু নথিপত্র হারিয়ে গেছে বা নষ্ট হয়ে গেছে।
ফলে ওইসব নথির জন্য কেউ আবেদন করলে সেগুলো সরবরাহ করা যাবে না। এতে অনেক সেবাগ্রহীতা তথ্য নিতে এসে নথি হারানো বা নষ্ট হওয়ার কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন। এ বিষয়ে বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি চালাচালি করলেও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জানা যায়, রেকর্ডরুম হচ্ছে সংরক্ষিত এলাকা। ওই এলাকায় রেকর্ডকিপার ছাড়া আর কারও প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু নির্ধারিত কর্মকর্তা না থাকায় মাস্টার রোলে থাকা উমেদারদের দিয়ে চালানো হচ্ছে কাজ। এতে করে ঘটছে নানা দূর্নীতির ঘটনাও।
সিলেটে অনেক দলিল বইয়ের বালামের কোনো অস্তিত্ব নেই। এমন কি নেই ইনডেক্স বুকও। ফলে দলিলের কপি পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এসব দলিল না পাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে- বিভিন্ন সময় ভূমিখেকোরাই টাকার বিনিময়ে বালাম বই ও ইনডেস্ক থেকে কাগজ ছিঁড়ে ফেলছে। এনিয়ে হইচই হয়েছে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে।
সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেকর্ডরুমের জন্য সরকারিভাবে নিয়োগকৃত পিয়ন প্রয়োজন। এসব পিয়নরাই রেকর্ড কিপারের সঙ্গে কাজ করেন।
সিলেটের সাব-রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিকী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, রেকর্ডরুম সিলেটবাসীর সম্পদ। এখানে সবার সম্পত্তির মূল দলিল রয়েছে।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া দুঃখজনক। এটি সংরক্ষণ করতে বেশি টাকা লাগবে না। সরকারিভাবে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তিনি তার তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন বলে জানান।
সিলেট সদর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি হাজী মাহমুদ আলী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, রেকর্ডরুমে রেডর্ককিপার রাখা ও সংরক্ষণের দাবি দীর্ঘদিনের। দলিল লেখকরা এ নিয়ে সব সময় সোচ্চার। শুধুমাত্র পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণেই জমির বহু মালিক ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এ জন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম খান সায়েক সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলছেন, রেকর্ডরুম সংরক্ষণ করে রি-ইনডেক্স ও রি-বালাম করার দাবি দীর্ঘদিনের। এছাড়া, বালাম বইয়ের একাধিক কপি থাকতে হবে। এতে করে উইপোকায় একটি ধ্বংস হলে যাতে বিকল্প কপি থাকে সে উদ্যোগ খুব দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। নইলে সিলেটবাসীর সম্পদ ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাবে। ফলে বাড়বে প্রকৃত ভূমি মালিকদের ভোগান্তি। লাভবান হবে ভূমিখেকোরা।