রবিবার ● ২২ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » বিবিধ » রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (৯মাঘ ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ২.৩০মি.)রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে রোগীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি শুক্রবার রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার দুবাই প্রবাসী রুপম শীল এর স্ত্রী দু মাসের গর্ভাবস্তায় শারিরীক অসুস্থ হয়ে হঠাৎ রক্ত ক্ষরন হলে রাত ৮ টায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে জরুরী বিভাগের মাধ্যমে তার স্ত্রী অনামিকা শীল’কে প্রসুতি ওয়ার্ডে ৩ নং বেডে ভর্তি করান। রাতেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাচ্ছা নষ্ট হয়েছে নিশ্চিত হলে পরের দিন ২১ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১১টার সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা রোগীর ডিএনসি করান। ডিএনসি শেষে অপারেশন থিয়েটারে সরাসরি রোগী অনামিকা শীল’র স্বামী রুপম শীল এর কাছ থেকে পাঁচ’শ টাকা ঘুষ নিয়ে পরবর্তী যোগাযোগের জন্য নিজের মোবাইল নাম্বার দিতে চাইলে রুপম শীল নাম্বার না নিয়ে স্ত্রীর কাছে চলে আসেন। পরে আবার রোগীর বেডে এসে শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা চিকিৎসকের অস্পষ্ট স্বাক্ষরযুক্ত একটি রোগীর ছাড় পত্র হাতে দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগের পরামর্শ দেন।
স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগের সময় নীচ তলায় সিএইচটি মিডিয়াকে রোগীর স্বামী রুপম শীল অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সরকারী হাসপাতালে ঘুষ দিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে রুপম শীল বলেন গত কাল (শুক্রবার) আমার স্ত্রীর অপরিনত গর্ভপাত হলে রাত ৮ টায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে গাইনী ওয়ার্ডে ৩নং বেডে ভর্তি করি (রেজিষ্ট্রেশন নং ৬০৭/১৮) ।
পরের দিন ১১টায় কর্তব্যরত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা আমার স্ত্রী (রোগী)’কে ডিএনসি করান, ডিএনসি সম্পন্ন করার সাথে সাথে শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা আমার কাছ থেকে পাঁচ’শ টাকা চেয়ে নেন। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এতে টাকা কেন চাইছেন জানতে চাইলে শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন সবাই এখানে চিকিৎসা নিতে এলে টাকা দেয় আপনাকেও দিতে হবে। দেরী না করে টাকা টা দিয়ে চলে যান।
রুপম শীল সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে টাকা দিয়ে চিকিৎসা করালাম, আপনারা একটু বিষয়টি খতিয়ে দেখেন।
বিষয়টি নিয়ে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মং কে চিং এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গাইনী বিভাগের প্রধান গাইনী কনসালটেন্ট ডা. হেনা বড়ুয়া’র সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান গাইনী কনসালটেন্ট ডা. হেনা বড়ুয়া’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন রাঙামাটি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে কাউকে টাকা দিতে হয়না, এই হাসপাতালে কে টাকা নিয়েছে আমাকে বলেন, রিপোর্ট করেন, আমি শুনেছি আমি আসার আগে এখানে টাকা নেয়া হতো, আমি দেড় বছর হলো রাঙামাটি সরকারী হাসপাতালে এসেছি, আমি এসেই এসব ঘুষ বাণিজ্য অনেকটাই বন্ধ করেছি, এরপরও যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে আমাকে বলেন ? রিপোর্ট করেন, আমি যখনই বাইরে যাই ফিরে এসে শুনি আয়া, ওয়ার্ডবয়, ওয়ার্ড ইনচার্জ ও কতিপয় সিনিয়র ষ্টাফ নার্সরা সরকারী হাসপাতালে অনৈতিকভাবে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়।
কর্তব্যরত সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা রোগীর ডিএনসি বাবদ পাঁচ’শ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগের কথা বলা হলে কনসালটেন্ট ডা. হেনা বড়ুয়া স্বীকার করেন যে সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে এর আগে অনেকবার অন্যায়ভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা গরীব রোগীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি অকপটে স্বীকার করেন রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে জনৈক ডাক্তার ও সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা গং এদের একটি সিন্ডিকেট সরকারী হাসপাতালে সরকারী খরচে চিকিৎসা দিয়ে প্রতিদিন রোগীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সিন্ডিকেটটির প্রধান হিসাবে তিনি একজন ডাক্তারের নাম উল্লেখ করেন। ডা. হেনা বড়ুয়া আরো বলেন, এই অশুভ শক্তি এত বেশী ক্ষমতাধর তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ করেও ফল পাননি ভুক্ত ভোগীরা, এখন যেহেতু লিখিত আকারে অভিযোগ পাওয়া গেছে শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই সংঘ বদ্ধ চক্রটির বিরুদ্ধে সরকারী ঔষুধ বিক্রয় করার অভিযোগও রয়েছে বলে জানান ডা. হেনা বড়ুয়া।
গাইনী কনসালটেন্ট ডা. হেনা বড়ুয়া বলেন আমি নিজে গরীব রোগীদের এসব ঘুষখোরদের হাত থেকে রক্ষা করে দেড় বছরে কয়েক কোটি টাকা বাচিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন আপনি যে সময়টা উল্লেখ করেছেন সেসময়ে আমি হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় আরেকটা রোগীর সিজারিয়ান নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, এসময় পাশের রুমে সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা কর্তব্যরত ছিলেন, এই অভিযোগের দায় এড়ানোর শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার কোন সুযোগ নেই।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা রোগীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. বিনোদ শেখর চাকমা সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই বিভাগীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থ্যা নেয়া হবে।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে অনুসন্ধান কালীন হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অনেকবার ঘুষ বাণিজ্য, চরিত্রহীনতার অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অশোভন আচরন, রোগী-স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার ও অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। অদৃশ্য হাতের ঈশারায় এসব অভিযোগ থেকে বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যা। শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার খুটির জোর জনৈক এক ডাক্তার বলে জানান হাসপাতালের শুভদ্রা তঞ্চঙ্গ্যার সহকর্মীরা।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল এমনিতেই জরাজীর্ণ অবস্থা। হাসপাতালের নেই কোন রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, এক্সরে মেশিন ও জেনারেটর ইত্যাদি ব্যবস্থ্যা। জরাজীর্ণ অবস্থায় চলছে অপারেশন থিয়েটার রুম, এতে নেই কোন এয়ারকুলার ও পর্যাপ্ত আলোর সুবিধা। হাসপাতাল জুড়ে নোংরা পরিবেশ, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, বাথরুম ও রান্নাঘর। রোগীদের দেওয়া হয় অত্যন্ত নিম্ন মানের খাবার। রোগীদের সাথে নার্স আয়াদের অশোভন আচরন তো রয়েছেই।
২১ জানুয়ারি শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে সকাল ৮ টা বাজার সাথে সাথে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল চত্ত্বরে দল বেধে চলে আসেন বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পনীর রিপ্রেনটেটিভরা। বর্হি বিভাগে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগী দেখার পরিবর্তে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পনীর রিপ্রেনটেটিভদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। রোগীরা চিকিৎসা পত্র হাতে নিয়ে চিকিৎসকের রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে এসব ঔষুধ কোম্পনীর রিপ্রেনটেটিভরা রোগী বা তার স্বজনদের কাছ থেকে ছো মেরে হাত থেকে নিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসকের দেয়া চিকিৎসাপত্র। ঔষুধ কোম্পনীর রিপ্রেনটেটিভদের বিভিন্ন ছল ছাতুরী ও পরামর্শে ব্যহত হচ্ছে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।
এসব ছাড়িয়ে গরীব রোগীদের উপর এ যেন মরার উপর খারার ঘা, সরকারী হাসপাতালে ঘুষ নিয়ে চিকিৎসা সেবা। এসব দেখার কেউ যেন নেই। তবুও খুড়িয়ে চলছে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল।