রবিবার ● ২২ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » গোপালগঞ্জ » আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক), গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৯মাঘ ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩১মি.) গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভের আশায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন, আল্লাহুমা আমিন, ছুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা ২২ জানুয়ারি রবিবার শেষ হয়েছে।
মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং কেঁদে বুক ভাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কামনা করা হয়। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়।
২২ জানুয়ারি রবিবার বেলা ১১টা ১১ মিনিট থেকে ১১টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত ৩২ মিনিট স্থায়ী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লীর হজরত মাওলানা সা’দ আহমেদ। তাৎপর্যপূর্ণ এই আখেরি মোনাজাতে জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়।
মোনাজাত চলাকালে ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকা থেকে শুধু ভেসে আসে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির কন্ঠে ‘হে আল্লাহ, ইয়া আল্লাহু, আমিন’, ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনি।মোনাজাত শুরুর পর ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকায় নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
রবিবার আখেরী মোনাজাতে শরীক হতে সূর্য উদোয়ের পুর্ব থেকে শুরু হয় ইজতেমা মুখী ধনী দরিদ্র যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে মুসল্লিরা ধাবিত হয় ইজতেমা ময়দানে। অগণিত মুসুল্লি এজতেমা এলাকার বিভিন্ন সড়ক, মিল কারখানা ও বাড়ির ছাদে বসে মোনাজাতে অংশ নেন। অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোনাজাতে শরিক হন। সকাল ৯টার দিকে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেলে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া সড়ক, অলিগলিতে অবস্থান নেন। পুরোনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তাা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ি, কলকারখানা-অফিস, দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ২/৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকায় যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষের কাফেলা। নানা বয়সি ও পেশার মানুষ এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকায় আসেন।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের আশপাশের মহাসড়ক-সড়কে (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে ঢাকা র্যাডিসন পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ স্টেশন রোড থেকে মীরেরবাজার পর্যন্ত, আশুলিয়া সড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল সড়ক পর্যন্ত) গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সব সড়ক দিয়ে রোববার ভোর থেকে মুসল্লিরা হেঁটে দলে দলে লোক ইজতেমা স্থলে আসেন। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী জংশন দিয়ে চলাচলকারী সব ট্রেন এ জংশনে যাত্রা বিরতি দিচ্ছে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে এ জংশন দিয়ে ১৪টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে। এ ছাড়া বিআরটিসির ২২৮টি বাস যাতায়াত করেছে।
ইজতেমার ২য় পর্বের আখেরি মোনাজাতেও লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃৃবৃন্দ শরিক হন। এ ছাড়া পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দলমত শ্রেণী পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
মোনাজাতের আগে চলে হেদায়তি বয়ান। রবিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট থেকে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে হেদায়েতি (দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি) বয়ান করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লীর হযরত মাওলানা সা’দ আহমেদ। এসময় তার বয়ানের বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এর আগে সংক্ষিপ্ত বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওয়াশিকুল ইসলাম।
এর আগে দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ শামীমের বয়ানের মধ্য দিয়ে। দুপুরে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজে ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বি ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ। এ দিন বাদ জুমা বাংলাদেশের মাওলানা ফজলুল হক, বাদ আসর দিল্লির মাওলানা রবিউল হক ও বাদ মাগরিব হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ বয়ান করেন।
দ্বিতীয় দিন শনিবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা জমশেদ, বাদ জোহর মাওলানা মোরসালিন, বাদ আসর মাওলানা ইউসুফ এবং বাদ মাগরিব মাওলানা সা’দ বয়ান করেন।