সোমবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » গলদা চিংড়ির দরপতনে বাগেরহাটে চাষিরা দিশেহারা
গলদা চিংড়ির দরপতনে বাগেরহাটে চাষিরা দিশেহারা
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: (১০ মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.২৫মি.) গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় চিংড়ির ভান্ডারখ্যাত বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার হাজারো চিংড়ি চাষি দিশে হারা হয়ে পড়েছেন। অধিক মূল্যে মাছের পোনা ও খাবার ক্রয় করে চিংড়ি বিক্রয়ের সময় দাম কম থাকায়
চাষিরা তাদের খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় এলাকার
চিংড়ি চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। গলদা চিংড়ি চাষের
উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন এলাকার হাজারো চাষি। সরেজমিনে চিতলমারী সদর
বাজার, বাখেরগঞ্জ বাজার, ডুমুরিয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মৎস্য আড়ৎ,
চিংড়ির ডিপো ঘুরে দেখা গেছে, ছোট আকারের গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৪শ
টাকা, মাঝারি ৬শ টাকা ও বড় আকারের চিংড়ি প্রতি কেজি ৭শ টাকা দরে
বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন খোলা বাজারেও কম মূল্যে প্রচুর পরিমানে চিংড়ি
পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে চিংড়ির দাম কম থাকায় দেনার
দায়ে বাধ্য হয়ে চাষিরা নাম মাত্র মূল্য চিংড়ি বিক্রি করছেন।উপজেলা মৎস্য
অফিস সুত্রে জানা গেছে, বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী
সদর, চরবানিয়ারীসহ ৭ ইউনিয়নে চলতি বছরে ৬ হাজার ৮শ পনের হেক্টর
মৎস্য ঘেরে সাড়ে ৭ হাজার মৎস্য চাষি চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করেন । গত
ডিসেম্বর পর্যন্তএ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি উৎপাদিত হয়।
চিংড়ি চাষের সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জড়িত।
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ পরিবার
মৎস্য ঘেরে চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীল। গত বছর জুন মাসের ভয়াবহ
বন্যা ও ঝড়ে এলাকায় প্রায় শতভাগ চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আগেই গলদা চিংড়ির বড় ধরনের দর পতনে এলাকার হাজার হাজার চিংড়ি চাষির মাথায় হাত উঠেছে। এখানকার অধিকাংশ চাষি বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবাসায়ী ও সুদেকারবারিদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে বেশি দামে মাছের পোনা ও মাছের ফিড ক্রয় করে চাষাবাদে ব্যয় করেছেন। এ পরিস্থিতিতে চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় তারা খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারছেন না। দেনার দায়ে জর্জরিত এসব চাষিরা ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোন পথ দেখছেন না। চরবানিয়ারী ইউনিয়নের শ্যামপাড়া গ্রামের চিংড়ি চাষি দিজেন গাইন, স্বপন মন্ডল, সুমন মীর, সদর ইউনিয়নের রায় গ্রামের বিনয় সিংহ, পারডুুমুরিয়া গ্রামের লতিফ শেখ, কবির শেখ, হেমায়েত সরদারসহ অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সুদে কারবারিদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে তারা চিংড়ির চাষ করেছেন। কিন্তু চিংড়ির দাম কম থাকায় তারা উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারছেনা। এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মন্ডল জানান, কিছু অসাধু চাষি গলদা চিংড়ির খাবার হিসেবে পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করায় সম্প্রতি গলদা চিংড়িতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। ফলে আমদানীকারক দেশ দুটি চালান মাছ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কারনে মাছের দর পতন ঘটে। তাছাড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারনেও মাছের বাজার দর কম রয়েছে।