বুধবার ● ৪ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ম্রো ন্যশনাল পার্টির আত্মসমর্পণ আজ
ম্রো ন্যশনাল পার্টির আত্মসমর্পণ আজ
হাসান মাহমুদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: পার্বত্য চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি)’র আত্মসর্ম্পন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। পার্বত্য বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী ম্রো ন্যাশনাল পার্টি ৭৩ সদস্য আজ আত্মসর্ম্পন করার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হবে আলীকদম উপজেলার কুরুপ পাতা আর্মি ক্যাম্পে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতি মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আত্মসমর্পণের পথে এগিয়ে আসা ৬৪ এমএনপি’র সদস্যের একটি তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এ সব সদস্যরা জমা দিতে প্রস্তুত এমন অস্ত্র সরঞ্জামাদির তালিকাও চুড়ান্ত করা হয়েছে। এসব অস্ত্র স্বস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৩০টি গাদা বন্দুক, ৬টি রাইফেল ও ১০ রাউন্ড গুলিসহ তাদের ব্যবহৃত আরো সরঞ্জামাদি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় ২০১১ সালে ম্রো আদিবাসী যুবকদের নিয়ে ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) কর্মকান্ড শুরু করে। দেশীয় ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২০১২ সালের দিকে আলীকদমের পোয়া মুহুরীতে ঘাঁটি গেড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড শুরু করে সন্ত্রাসী গ্রুপটি। এরপর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ করে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা সম্পর্কে জানান দেয়।
এছাড়া, লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের নিওয়াকপাড়ার থংয়া ম্রো, মংহ্লাপাড়ার মইশা ম্রো, কাইওয়াই ম্রো, লুলেং হেডম্যান পাড়ার আম শে প্রু ম্রো, সড়ই ইউনিয়নের তাংলাই ম্রো এবং জেলার রুমা উপজেলার ফতেসিংপাড়ার কাইওয়াই ম্রোসহ অনেকেই সংগঠনটির শসস্ত্র কর্মকান্ডে জড়িত। তাদের অধিকাংশ এবার আত্মসমর্পণ করার পথে এগুলেও গ্রুপটির সকল সদস্য আত্মসমর্পণ করবে কিনা সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
সূত্র জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এমএনপির কর্মকান্ড। তাছাড়া দলীয় কোন্দলের কারণে পর পর পাল্টা অভিযানে উভয় পক্ষের বেশ কিছু সদস্য হতাহতের পর গ্রুপটির কর্মকান্ড অনেকটা নেতিয়ে পড়েছে। তাই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলে নিরাপত্তা বাহিনী ও ম্রো আদিবাসী জনপ্রতিনিধিরা এই উদ্দ্যোগ নেন। জেলার থানচি ও আলীকদম উপজেলার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের এমএনপি প্রধান মেনচিং ম্রো গ্রেফতার হওয়ার পর উপজেলার ১নং আলীকদম ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার পালে ম্রো এই গ্রুপটির পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। একই বছরের ৫ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় এই গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেনরুং ম্রো। অপরদিকে ওই বছরের ৭ জুন সংগঠনটিকে দমন করে অবৈধ কর্মকান্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সংগঠনের উগ্রপন্থীদের রোশানলে পড়ে আলীকদমের দুর্গম পোয়ামুহুরি এলাকার পাহাড় ভাঙা গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয় পালে ম্রো। স্থানীয়দের ধারণা পালে ম্রো সংগঠনটির দায়িত্ব নিলেও সে সংগঠনটির উত্থান চায়নি। পরবর্তীতে গ্রুপটির মতার লড়াইয়ে মেতে উঠে দুই নেতা লোহব ম্রো এবং মেনরুং ম্রো। কেউই হার স্বীকার করতে রাজি না হওয়াতে গ্রুপটি বিভক্ত হয়ে যায় দুটি গ্রুপে। লোহব গ্রুপ এবং মেনরুং গ্রুপ। দীর্ঘদিন এই দুই গ্রুপের মধ্যে বিরাজমান বিবাদ নিরষণ না হওয়াতে পারষ্পারিক সংঘর্ষে হতাহত হয় অনেকেই।
সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে গত মাসের ২২ তারিখের মধ্যে আত্মসর্পণ করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এ কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। এ উপলক্ষ্যে গত ১৬ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় আলীকদম জোনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান, আলীকদম জোনের উপঅধিনায়ক, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অং প্রু ম্রো, মাং সাই প্রু, সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাংলাই ম্রো এবং এমএনপি’র প্রতিনিধি হিসেবে আলীকদমের স্থানীয় চারজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মিজানুর রহমান পিএসসি’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে বেশ কয়েক বার ফোন করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
থানচি উপজলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বকুলী মার্মা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ প্রক্রিয়াটির বিষয়ে শুনে আসছি। অবশেষে বাস্তবায়রেন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্দ্যোগ। আমি আশা করব পথহারা এসব ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরে আসবে এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পরিবার পরিজনদের সূখ দুঃখের অংশীদার হবে।
আপলোড : ৪ নভেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : সন্ধ্যা ৬.০৮ মিঃ