সোমবার ● ৩০ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » প্রমা’র হাতে দেশ সেরার পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রমা’র হাতে দেশ সেরার পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (১৭ মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.২০মি.) দারিদ্রতাকে জয় করে ২০১৭ সালের ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে’ লোকগীতিতে জাতীয় পর্যায়ে ১ম স্থান অর্জন করে সিলেটের বিশ্বনাথের প্রমা রাণী সরকার। সে সিংগেকাছ-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী। রবিবার সকালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রমা’র হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রমা’র পদক প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে সিংগেরকাছ-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোহর আলী সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, তার (প্রমা) এ সাফল্য শুধু স্কুলের নয়, সমগ্র বিশ্বনাথ তথা সিলেটবাসীর। এমন রত্নের যত্ন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পশ্চিমগাঁও গ্রামের হতদরিদ্র মৎসজীবি জগিন্দ্র সরকার ও নির্মলা রাণী সরকার দম্পতির ৫ম সন্তান প্রমা রাণী সরকার ২০০৪ সালে জন্ম গ্রহন করে। সেদিন কে জানত শ্যামলা বর্ণ রঙ নিয়ে দরিদ্র মৎসজীবির ঘরে জন্ম নেয়া সেই প্রমা একদিন বাংলাদেশ জয় করবে। লেখাপড়ার প্রতি তেমন টান না থাকলেও ছোট বেলা থেকে সংগীতের প্রতি গভীর টান ছিল প্রমার। যে কারণে রেডিও বা টিভিতে এশবার কোন গান শুনলেই পরবর্তি সময়ে সে হুবহু একই সুরে ও তালে গাইতে পারত সে গানটি। এক সময় তার এই অভ্যাসের কথা সহপাঠী ও শিক্ষকরা জানতে পারেন। যার কারণে বিদ্যালয়ে কোন অনুষ্ঠান হলেই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে গান গাইতে হত।
গত বছর প্রমা নিজের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনছার আলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোহর আলী’র উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ‘আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়’ লোকগীতি গানে অংশগ্রহণ করে। আর তাতেই বাজিমাৎ করে প্রমা রাণী সরকার উপজেলা পর্যায়ে ১ম স্থান অধিকার করে। পরবর্তীতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও ১ম স্থান অর্জন করে। এরপর ঢাকায় গিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েও ১ম স্থান অর্জন করে। আর তাতেই লেখা হয়ে গেল অনেক সাফল্যের এক গল্প। প্রমা নিজ বিদ্যালয় তথা বিশ্বনাথ উপজেলা তথা সিলেটবাসীর জন্য এমন গৌরব ও সম্মান জনক সাফল্য নিয়ে আসে।
দারিদ্রতাকে জয় করে বিশ্বনাথের নিভৃত পল্লীর মৎস্যজীবি পরিবারের সন্তান প্রমা রাণী সরকার লোকগীতিতে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করায় তার (প্রমা) বিদ্যালয়ে যেমন আনন্দের বন্যা বইছে, ঠিক তেমনি আনন্দ বইছে তার নিজ গ্রাম পশ্চিমগাঁও গ্রাম তথা উপজেলায়ও। হাজার হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে একে একে সাফল্যের চূড়াঁয় পৌঁছা প্রমা রাণী সরকার নিজ বিদ্যালয় বা গ্রাম বা উপজেলা বা জেলা বা বিভাগকে এমন গৌরবজনক সম্মান এনে দিলেও কীর্তিমান ওই দরিদ্র পরিবারের কন্যা নেই কোন সংগীত শিক্ষক, এমনকি কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র। এসব থাকলে হয়তো বা প্রমার চমৎকার এ প্রতিভা আরো দ্যুতি ছড়াতো।