শুক্রবার ● ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » চিকিৎসকসহ নানা সংকটে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
চিকিৎসকসহ নানা সংকটে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
বরগুনা প্রতিনিধি :: (২১ মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.০৬মি,) বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ নানা সংকটে রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্খিত সেবা। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, বাউন্ডারি ওয়াল। রয়েছে জরাজীর্ণ ভবন,আসবাবপত্র ও ঔষধ সংকট।
বেতাগী পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের দেড়লাখ মানুষের সাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যান কর্মকর্তার কার্যলায় সুত্রে জানা গেছে, ১১ বছর আগে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে অনুযায়ী জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ৩১ শয্যারও জনবল নেই এখানে। ফলে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা
পাচ্ছেনা উপজেলার সাধারণ মানুষ। এখানে ২৮ জন সরকারি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যান কর্মকর্তাসহ বর্তমানে কর্মরত ৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে দইুজন একজন রয়েছে বাহিরে কিংবা ছুটিতে। যার কারনে হিমশিম খাওয়ায় ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, এসব সংকট সমাধানের দাবিতে ইতোমধ্যে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে কিন্ত অবস্থা যেই-সেই।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রতিদিন অনেক রোগী ফিরে যাচ্ছেন।
বৃহষ্পতিবার ২ ফ্রেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৭০ জন থেকে ৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও ৩২ জন রোগী।
চিকিৎসক না থাকায় ভর্তি থাকা রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। নাশির হোসেন (৬৫) নামের এক রোগী তার অাঞ্চলিক ভাষায় বলেন,‘এ্যাহানে আইয়াও লাভ কি, ব্যথায় কাতরাচ্ছি, কিন্ত ডাক্তার কাছে দেহি নাই।’ এ
ছাড়াও প্রয়োজনীয় ঔষধ না থাকায় বাইরের দোকান থেকে বেশিরভাগ
ঔষধ কিনতে হয় রোগীদের।
হাসপাতালের চারপাশে দেওয়াল না থাকায় বখাটেদের উৎপাত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে প্রায়শই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে। উপজেলার কেওড়াবুনিয়া গ্রামের মো: হযরত আলী বলেন, যে ঔষধ দেয় হেতে
কিছুই অয়না,প্রায় ঔষধই বাইর থেকে আনতে অয়।
হাসপাতালে রোগীদের মাঝে সরবরাহ করা খাবারের মান ও পরিমান নিয়েও
অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, রোগী প্রতি খাবারে বর্তমানে এসে দাড়িয়েছে ১২৫ টাকায়। স্বাধীনতা পরবর্তী কয়েক দফা অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও খাবারের মান ও পরিমান বাড়েনি। নিয়মানুযায়ী প্রতিদিন পূর্ণবয়স্ক সাধারণ একজন রোগীর জন্য বরাদ্দ চাউল (মিনিকেট) ৩৫০ গ্রাম, ডাল (মশুরী) ১০ গ্রাম, তৈল ১০ গ্রাম, গোল আলু ১৫০ গ্রাম,তরকারি ১৫০ গ্রাম,হলুদ ৩ গ্রাম,মরিচ ৩ গ্রাম,পিয়াজ
৫ গ্রাম, রোশন ২ গ্রাম, লবন ১০ গ্রাম,মসল্লা ১ গ্রাম,কাঠ ১ কেজি,মাছ প্রকারভেদে ৫৩ গ্রাম থেকে ১৭১ গ্রাম (সিলভারকার্প,রুই,কাতলা পাংগাস ও ইলিশ মাছ), মাংস (মুরগী) ১৬৮ গ্রাম,খাসী ১০১ গ্রাম, পাউরুটি ১৪০ গ্রাম, কলা ১টি (সবরি-সাগর),ডিম ১টি (ফার্ম) ও চিনি ১৫ গ্রাম। এছাড়া সপ্তাহে খাসির মাংস দেওয়ার কথা ১দিন, ৪দিন মাছ এবং মুরগী ৩ দিন।
কাগজে কলমে এসব হিসাব নিকাশ ঠিক থাকলেও বাস্তবে মানা হচ্ছেনা কিছুই। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক রোগী অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা খাবার তারা অনেকেই খেতে পারেন না। নির্ধারিত মাছের বদলে দেওয়া হয় শর্তের বাইরে অন্য মাছের টুকরো। প্রায় প্রতিদিনই একই ধরনের সবজি। একাধিক রোগীদের অভিযোগ ও নমুনা সংগ্রহ করে দেখাগেছে, রান্না করা ডিমের প্রায়শই থাকে নস্ট। ভাল করে মাছ না ধোয়ায় আঁশটে থেকে যায়। গন্ধযুক্ত রুটি ও ভাত থেকে খারাপ গন্ধ বের হয়ে আসে। ঠিকাদার মো: তোতা মোল্লা অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে এ প্রতিনিধিকে বলেন, ইচ্ছার ঘাটতি নেই। তবে কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে বিল উত্তোলন পর্যন্ত সব ব্যয় ভারই এর মধ্যে থেকে মেটাতে হয়। তাছাড়া সঠিকভাবেই মালামাল সরবরাহ করা হয় কিন্ত রান্নার সাথে সংশ্লিষ্টদের গাফেলতি ও চুরির কারনেও রোগীরা পরিমানে কম খাবার পেতে পারেন, তা তার জানা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যান কর্মকর্তা ডা: শেখ কুদরত-ই-খুদা জানান,সংকটের মাঝেও আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। খাবার নিয়ে কোন অভিযোগ এখনো আমার কানে আসেনি। সকলের সহযোগিতায় আমি আসার পর থেকে ওষুধ সংকটসহ অন্যান্য বিষয় সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বেতাগী হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান কবির বলেন নানা সমস্যায় এখানে বর্তমানে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। দ্রুত সংকট নিরসনে এ বিষয়ে একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি।
এব্যপারে জেলা পরিষদের ৬নং আসনের সদস্য নাহিদ মাহমুদ হোসেন লিটু সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে সিটিজেনভয়েস ২৪.কম কে বলেন, অবহেলার কারনে হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জড়িত, আমি এই বিষয়টি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়, ডিসি স্যার এবং ইউএনও সাহেবকে অবহিত করবো। প্রয়োজনে উর্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি গোচরে আনবার চেষ্টা করবো।