শুক্রবার ● ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » বাসিয়া নদীর খনন কাজ শুরু ১৭২টি অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে মামলা
বাসিয়া নদীর খনন কাজ শুরু ১৭২টি অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে মামলা
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (২৮ মাঘ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৫৫মি.) অবশেষে সিলেটের বিশ্বনাথের বাসিয়া নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে।১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরের পশ্চিম দিক কালিগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে খনন কাজ শুরু করে খনন কাজ পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে নদী খননের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। তবে উপজেলা সদরের বাসিয়া নদীর দু-পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীর সীমানা নির্ধারণ করে খনন কাজ করার দাবিও এলাকাবাসীর। ইতিমধ্যে নদী খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার দাবিতে বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। উপজেলা প্রশাসন প্রায় দীর্ঘ ছয় মাস ধরে উপজেলা সদর ও কালিগঞ্জবাজারে বাসিয়া নদীর দুই তীরে গড়ে উঠা ১শত ৭২টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে প্রশাসন। বাসিয়া নদীর দুই তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরির করার পর এ উচ্ছেদ মামলাটি দায়ের করা হয়।
এদিকে, উপজেলা সদরের বিশ্বনাথ বাজারের নদীর দুই তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীকে আহবায়ক করে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার ওই কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানাগেেছ।
জানা গেছে, সুরমা নদীর শাখা নদী ‘বাসিয়া’ এক সময় প্রচন্ড খড়স্রোতা ছিল। কালের বির্বতনে পাহাড়ি ঢল ও পলি মিশ্রিত বন্যার পানিতে ভরাট হতে থাকে বাসিয়ার তলদেশ। এছাড়াও বিশ্বনাথ বাজার এলাকায় নদীতে বর্জ্য ফেলে ভরাট করে দেয়া হয়েছে নদীর স্বাভাবিক গতি পথ। সঙ্গে সঙ্গে ভূমি দস্যুতা দখল করে নিয়েছে নদীর দুই তীর। গড়ে তুলেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। অবশেষে নদীটি খনন কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসি খুশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের পশ্চিম দিক থেকে ৭কিলোমিটার খনন কাজের জন্য এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খনন কাজ দেয়া হয়। সিলেট পাউবোর অধিনে নদীর খনন কাজ শুরু হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ খনন কাজ সম্পন্ন হবে।
২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৭কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ‘বাসিয়া নদী পুনঃখনন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করে সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রায় ৬মাস পূর্বে দরপত্র আহবান পূর্বক ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। উপজেলা পরিষদের গেটের সামন থেকে ১কোটি ৮০লাখ টাকায় ৭কিলোমিটার পশ্চিম দিকে কাজটি চলতি মাসে শুরু করার কথা রয়েছে। আর এসকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে গত বছরের ২৫সেপ্টম্বর সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি লিখিত আবেদন করে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে ১শত ৭২টি অবৈধ স্থপনার তালিকা তৈরি করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা সদরের বিশ্বনাথ বাজার থেকে খনন কাজ শুরু না করে বাজারের পশ্চিম দিকের ৭কিলোমিটারের মাথায় থেকে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। পূর্বের খনন কাজের শেষ অংশ থেকে খনন কাজ শুরু না করায় এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। অভিলম্ভে নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খনন কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
এব্যাপারে বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ফজল খান বলেন, নদী খনন করার জন্য আমরা র্দীঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। অবশেষে নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। তবে নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খনন কাজ সম্পন্ন না করা আহবান জানান তিনি।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপ-প্রকৌশলী দ্বিপক রঞ্জন দাস বলেন, নদীটি তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে খনন কাজ করা হবে। প্রথম দুই ধাপে নদী খনন কাজে কোনো অসুবিধা হবে না। তবে উপজেলা সদরের বিশ্বনাথ বাজারে এসে কিছুটা সম্যাসা হতে পারে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদী খনন কাজে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, অবৈধ স্থাপনার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বৈঠক আহবান করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন,রবিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয় এটি প্রেরণ করা হবে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে সিন্ধান্ত গৃহিত হবে।