মঙ্গলবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিলেটে তিন মাসে ৪ আত্মহত্যা
সিলেটে তিন মাসে ৪ আত্মহত্যা
সিলেট প্রতিনিধি :: (২ ফাল্গুন ১৪২৩ বাঙালা : বাংলাদেশ সময় বেলা ২.০৫মি.) সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় তিন মাসে চার জন আত্মহত্যা করেছেন। এসব সুইসাইডকারীদের মধ্যে কেউ ছিলেন সংসারের উপার্জনের মূল কান্ডারি। ৪ জনের মধ্যে কারো সুইসাইড হয়েছে রহস্যজনক। আর এই সুইসাইডের বিচার পাওয়ার আশায় থানায় আশ্রয় না পেয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। করেছেন আদালতে মামলাও।
সচেতন মহল ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এদের সুইসাইডের কারণ হচ্ছে প্রেমজনিত কারণ ও পারিবারিক কলহ। তাই নিজ নিজ পরিবারে গণসচেতনতা গড়ে তুললে এভাবে অকালে ঝরে পড়ত না একটি সম্ভাবনাম জীবন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারী প্রেমে ব্যর্থ হয়েই পপি বেগম (১৭) নামে এক তরুণী সুইসাইড করে। আপন খালাতো ভাই প্রেম করে বিয়ে না করায় এই তরুণীর সুইসাইড করে। আর এ ঘটনায় গোটা উপজেলায় এখনও তোলপাড় চলছে।
সে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ফুলবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের হবিব আলীর মেয়ে। ঐ দিন মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় নিজ ঘরের তীরের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে সে সুইসাইড করে। এ সময় পপির মা ফেরদৌসি বেগম ঘুমে ছিলেন।
নিহতের মা ফেরদৌসি বলেন, আমার সুতারকান্দির বোনের ছেলে লিটনের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। লিটন বিয়েতে রাজি হলেও তার মা ও বড় ভাই বিয়েতে রাজি হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মেয়ে সুইসাইড করে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।
গত ২ ফেব্রুয়ারী গোলাপগঞ্জের লক্ষণাবন্দে মাজহারুল ইসলাম দিলু মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীর রহস্যজনক সুইসাইডের ঘটনা ঘটে। সে উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউপির নোয়াই দক্ষিণভাগ মাজপাড়া গ্রামের মুহিবুর রহমান চান মিয়ার পুত্র। পুলিশ জানায়, ঐ দিন শুক্রবার সকাল আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের ঘর থেকে নিচে নামানো অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে।
নিহতের গলায় আত্মহত্যার চিহ্ন থাকলেও মৃত্যুটি ছিল রহস্যজনক।
মামলার তদন্তকারী অফিসার মীর আবু নাছের জানান, ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসতে একমাস সময় লাগবে।
নিহতের স্ত্রীর ছামিরা বেগম (২২) জানায় তা স্বামীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত ৪/৫ দিন ধরে স্বর্ণ এবং ঘরের নতুন ও পুরাতন রুম নিয়ে তার স্বামীর পরিবারের লোকজন তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। ঐ দিন শুক্রবার ভোর বেলা সে ঘুম থেকে উঠে। এ সময় তার স্বামীকে বিছানা না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে তার লাশ ঘরের তীরের সাথে ঝুলতে দেখে পরিবারের লোকদেরকে জানায়। এ সময় পরিবারের লোকজন তাকে কিলঘুষি মেরে এখান থেকে সরিয়ে দেয়।
নিহতের স্ত্রী ছামিরা আরো জানায়, শিপু (৩০) নামে তার স্বামীর ছোট ভাই বিয়ে করার জন্য কিছুদিন আগে দুবাই থেক বাড়ীতে আসে। সে রুম পাল্টানো ও আমার ব্যবহৃত স্বর্ণ নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। আমার স্বামী বাধা দেয়ায় সে খুন করার হুমকি দিয়ে আসছিল।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী তাদের বিয়ে হয়। তাদের পারিবারিক জীবনে মাহি ইসলাম নামে দেড় মাসে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তার অভিযোগ নেয়নি। বরং তার স্বামী নিজের কারণে সুইসাইড করছেন বলে পুলিশ জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার আশায় সে আদালতে একটি মামলা দায়ের করছে।
২২ বছরের ছামিরা দেড় মাসে শিশু সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। উপার্জনের একমাত্র সম্বল ছিল তার স্বামী।
২০১৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর গোলাপগঞ্জে পারভেজ আহমদ (২৩) নামে এক যুবক সুইসাইট করে। সে গোলাপগঞ্জ পৌর ১নং ওয়ার্ডের ফুলবাড়ী পূর্বপাড়া এলাকার প্রবাসী আক্তার মিয়ার পুত্র। ঐ দিন শুক্রবার গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ী বড় মোকাম জুমার নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে বাড়ী ফিরে তার নিজ রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ছোট বোনের ওড়না পেঁচিয়ে সে সুইসাইড করে। ডিসির ছাড়পত্রের মাধ্যমে লাশের ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার সুইসাইড উপজেলা জুড়ে তোলপাড় হয়। সুইসাইড করার আগে একটি চিরুকিট লিখে যায়। পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে অপমৃত্যু মামলা হয়।
২০১৬ সালে ২৫শে অক্টোবর সুইটি দাস (১৫) নামে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী রহস্যজনক ভাবে সুইসাইড করে। সে উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের বরায়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাঘা লালনগর গ্রামের মৃত হরি চরণ দাসের কন্যা। ঐ দিন মঙ্গলবার পৌরসভার উত্তর বাজার বাঘা কমপ্লেক্সের ২য় তলার একটি ভাড়াটে বাসায় মায়ের শাড়ি পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে সুইসাইড করে। পুলিশ বলছে পারিবারিক কলহের জের ধরে সে সুইসাইড করে। এ ঘটনার পর এলাকায় ধূম্রজাল সৃষ্টির পাশাপাশি তোলপাড়ও সৃষ্টি। ঐ দিন দুপুরে সে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে আসে।
স্থানীয়রা জানান, তার বাসা বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করেন। মায়ের চলাফেরা খারাপ হওয়ায় সে সুইসাইড করে। এ ব্যাপারে ও একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।