বৃহস্পতিবার ● ৫ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » মাদকমুক্ত যুবসমাজ গঠনে আমাদের করণীয়
মাদকমুক্ত যুবসমাজ গঠনে আমাদের করণীয়
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল:: মাদক দ্রব্যের ব্যবহার বর্তমান বিশ্বের একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা ৷ মাদকাসক্তির কারণে দেশের যুবসমাজ তথা যুবশক্তি দ্রুত ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলছে৷ মাদকদ্রব্য মৃতু্য ও ধ্বংস ডেকে আনে ৷ মানুষের দৈহিক সুস্থতা, নৈতিকতা ধ্বংস করে যুব সমাজকে অধঃপতনের মুখ ঠেলে দিচ্ছে ৷ মাদক দ্রব্য তাই সমাজ ও জাতির জন্য বিষাক্ত বিষবাষ্প ৷ আমাদের দেশে প্রচলিত মাদকদ্রব্যগুলো হল -গাঁজা, ভাঙ, আফিম, তাড়ী, মদ, ঘুমের ঔষধ, হেরোইন, বুপ্রেরনফিন, পেথিডিন, ফেনসিডিল ও ইয়াবা ইত্যাদি ৷ এই সকল মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি বা এর ওপর নির্ভরশীলতাই মাদকাসক্তি ৷ মাদকাসক্তি এমন একটি মারাত্মক অবস্থা যেখানে ব্যবহৃত দ্রব্যের প্রতি ব্যবহারকারীর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতার জন্ম নেয় ৷ মাদকদ্রব্য ব্যবহারের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যায় এবং মাদক গ্রহণ না করলে শরীরে ব্যথা, মাংসপেশীর খিঁচুনী, অস্থিরতা, বমি-বমি ভাব, সর্দি, কোষ্ঠকাঠিন্য, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়৷
মাদক থেকে যুবসমাজ দূরে থাকার উপায় যথা : ১৷ ব্যক্তিজীবনে মাদকদ্রব্য গ্রহণ না করা ৷
২৷ নেশা গ্রহণকারী বন্ধুদের সাথে মেলামেশা না করা ৷
৩৷ নিয়মিত কর্ম ব্যস্ত থাকা ৷
৪৷ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ৷
৫৷ অবসর সময়ে খেলাধূলা ও সুস্থ বিনোদনের চর্চা করা ৷
৬৷ ব্যক্তি জীবনে কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে তা অভিভাবক/ শিক্ষক/ অপরের সাথে পরামর্শ করা ৷
৭৷ জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ধারাবাহিক পরিশ্রম করা ৷
৮৷ সততা, নিষ্ঠা ও দেশ প্রেমের সাথে জীবন যাপন করা ৷
মাদকমুক্ত যুব সমাজ গঠনে আমাদের করণীয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১৷ সমাজের সকল ধরনের মাদক বিরোধী অভিযানের সাথে ছাত্র ও যুবকদেরকে সম্পৃক্ত করা ৷
২৷ নিজে ধূমপান/ মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা ৷
৩৷ সন্তানদের দিয়ে বিড়ি/ সিগারেট ক্রয় না করা ৷
৪৷ সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা ৷
৫৷ সন্তানদের খেলাধূলা / সাংস্কৃতিক চর্চায় উত্সাহিত করা৷
৬৷ অবসর সময় সন্তানদের সাথে কাটান ৷
৭৷ সন্তানদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া ৷
৮৷ নিজ নিজ এলাকায় মাদক চোরাচালান, বিক্রয় ও বিতরণের ঘাটি উচ্ছেদ কার্যক্রমের সক্রিয় অংশগ্রহণ করা ৷
৯৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী সভা, সমাবেশ, র্যালি, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা ৷
১০৷ চিকিত্সকদের চিকিত্সাপত্র ব্যতিরেকে কোন প্রকার নেশা জাতীয় ঔষধ বিক্রি না করা ৷
১১৷ ঔষধ বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতাদেরকে মাদক জাতীয় দ্রব্য ক্রয়ে নিরুত্সাহিত করা ৷
১২৷ স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও কুফল সম্পর্কে তুলে ধরা ৷
১৩৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদক বিরোধী আইন প্রয়োগে সচেষ্ট থাকা এবং মাদক সরবরাহকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা ।
১৪৷ এনজিও প্রতিনিধিদের স্ব-স্ব এলাকায় মাদক বিরোধী প্রচার অভিযানে সংশ্লিষ্ট করা (যেমনঃ পোষ্টার, ব্যানার, র্যালি)
১৫৷ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাদকের কুফল সম্পর্কে তুলে ধরা ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে উদ্বুদ্ধ করা ৷
১৬৷ ওয়ার্ড কমিশনারগণের নেতৃত্বে পরিবার ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে মাদকাসক্তি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা ৷
১৭৷ গণমাধ্যমে মাদক বিরোধী প্রচারণা ও প্রতিবেদন বেশী বেশী প্রকাশ করা ৷
১৮৷ প্রত্যেক নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করা ৷
১৯৷ সমাজে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা ৷
২০৷ অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ৷
২১৷ যুবসমাজের অনুকূল সুস্থ নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা ৷
২২৷ মাদক এর ব্যাপারে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকা ও মাদক কে সর্বদা ‘না’ বলা ৷
মাদক একটি সামাজিক সমস্যা ৷ তাই সামাজিকভাবে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে৷ শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ডাক্তার, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, ছাত্র সবাই এই সমাজের বাসিন্দা ৷ প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে ৷ এই ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ৷ সকলের প্রচেষ্টায় মাদক দ্রব্যের ব্যবহার নির্মুল করার জন্যে আসুন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই ৷
লেখক পরিচিতি : লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, কলাম লেখক ও সংগঠক)
নির্বাহী সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা এবং
উপদেষ্টা, সামাজিক পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা
১৩ সেগুণবাগিচা, ঢাকা-১০০০
ফোন : ০১৫৫২৬৩১১১৮