শনিবার ● ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » ওসমানীর পৈতৃক বাড়ি ‘নূর মঞ্জিলেই প্রতিষ্ঠিত হয় যাদুঘর
ওসমানীর পৈতৃক বাড়ি ‘নূর মঞ্জিলেই প্রতিষ্ঠিত হয় যাদুঘর
হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: (১৩ ফাল্গুন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.২৭মি.) সিলেট শহরের নাইওরপুল এলাকার বাগান বেষ্টিত মনোরম ও মনোমোগ্ধকর পরিবেশে অবস্তিত ‘নূর মঞ্জিল’। বাগান বেষ্টিত বাংলো ধাচের টিনশেডের বাড়ি। দূর থেকে যে কাউকে আকর্ষণ করবে। এর সামনের পথ দিয়ে হেঁটে গেছেন অনেকে। কেউ গিয়েছেন গাড়িতে চড়ে কিংবা রিকশায়। একটু সময়ের জন্য হলেও এর দিকে তাঁকিয়েছেন আনমনে।
সেই বাড়িতেই জীবনের শেষ সময়টুকু কাটিয়েছেন বাংলার বীরসেনানী মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মাদ আতাউল গনি ওসমানী। ‘নূর মঞ্জিল’ জেনারেল ওসমানীর পৈতৃক বাড়িটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘ওসমানী যাদুঘর’।
অনেকে ওসমানী শিশু উদ্যানের সাথে একে গুলিয়ে ফেলেন। আসলে কয়েকগজের দূরত্বে যাদুঘর এবং শিশু উদ্যান প্রায় একই এলাকায় হওয়ায় যারা আগে আসেননি তাদের একটু বিপাকে পড়তে হয়। ওসমানী শিশু উদ্যান থেকে সামান্য উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে নাইওরপুল মসজিদে যাবার আগে রাস্তার বামদিকে ওসমানী যাদুঘরের অবস্থান।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল ওসমানীর মহান অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই জাদুঘরটির রক্ষনাবেক্ষন করছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।
যাদুঘরের তিনটি গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে জেনারেল ওসমানীর ব্যবহারের জিনিস পত্র। রয়েছে তার বার্ণাঢ্য জীবনের আলোকচিত্র।
ইতিহাসে পাতায় অমলিন এই যাদুঘরটিতে লোক সমাগম নেই বললেই চলে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে আট জন করে দর্শনার্থী আসেন। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অলস সময় পাড় করেন অফিস কর্মকার্তারা।
বিভিন্ন সময়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা আসে এম এ জি ওসমানীর স্মৃতি বিজড়িত এই যাদুঘরে। প্রবাসীরাও আসেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল ওসমানী সম্পর্কে জানতে।
১৯৮৫ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি এই জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৭ সালের ৪ঠা মার্চ এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।
‘নুর মঞ্জিল’ হলো কয়েকটি কক্ষ সমৃদ্ধ একটি টিনশেড ভবন যেটির সামনে রয়েছে একটি চমৎকার চত্বর। জাদুঘরে পৌঁছাতে হলে আপনাকে মূল ফটক থেকে কিছুটা পথ হেঁটে অতিক্রম করতে হবে। জাদুঘরে ঢোকার মুখেই অভ্যর্থনাকারীদের পাশাপাশি জেনারেল ওসমানীর একটি বিশাল প্রতিকৃতি আপনাকে স্বাগত জানাবে। অভ্যর্থনা কক্ষে রক্ষিত রেজিস্টারে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। জাদুঘরের লবিতে বসার সুব্যাবস্থা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য সবদিন এই জাদুঘরটি খোলা থাকে। এই জাদুঘরটি সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫:৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরটি পরিদর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য বিশ টাকা, অনূর্ধ বার বয়সের শিশুদের জন্য দুই টাকা দিতে হয়।
তবে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষর্থীরা সহকারী কিপার ও প্রধান তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে বিনামূল্যে যাদুঘর পরিদর্শন করতে পারেন।
জাদুঘরের পক্ষ থেকে জেনারেল এম এ জি ওসমানীর জন্মদিবস (১লা সেপ্টেম্বর), মৃত্যুদিবস (১৬ই ফেব্রুয়ারি), স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ) এবং বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর) পালন করা হয়ে থাকে।
যাদুঘরে যা রয়েছে: যাদুঘরের সংরক্ষিত জিনিস গুলো তিনটি গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। প্রথম গ্যালারীতে জেনারেল ওসমানীর ব্যবহারের খাট, চেয়ার, টেবিল, বই, বুক সেলফ, কাপড় ও আলনা, বিভিন্ন সময়কার স্মৃতি বিজড়িত ছবি দেয়ালে টাংগানো রয়েছে।
দ্বিতীয় গ্যালারীতে ওসমানীর কর্মজীবনে অর্জিত বিভিন্ন পদক, র্যাংক, উপহার সামগ্রী, মুক্তিযুদ্ধ সময়কার বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের আর্ট করা ছবি, রণাঙ্গনে যুদ্ধের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার ছবি, বসার ঘরের বেতের সোফা।
তৃতীয় গ্যালারীতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পনা করার জন্য বাংলাদেশের ম্যাপ, পড়ার জন্য জার্নাল, টেবিল-চেয়ার, খাট, খাবারের টেবিল, নামাজের চৌকি, টুপি, রেফ্রিজারেটর।