শুক্রবার ● ৬ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » ঈশ্বরদীর ভেড়া চাষী কোয়েল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে
ঈশ্বরদীর ভেড়া চাষী কোয়েল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে
তামিমুল ইসলাম তামিম, ঈশ্বরদী :: এক সময়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরু-মহিষের বাথান দেখা গেলেও বিজ্ঞানের উন্নতিতে কলের লাঙ্গলের প্রচলন শুরু হওয়ায় এখন আর বাথান চোখে পড়েনা ৷ সে সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক বাড়িতেই গরু মহিষের পাশাপাশি ভেড়া পালন করতেও দেখা যেত ৷ কালের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হালের লাঙ্গলের চাহিদা কমে কলের লাঙ্গলের প্রচলন বা চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় গরুমহিষের পাশাপাশি ভেড়াপালনও যখন প্রায় বিলুপ্তির পথে ঠিক তখনই ঈশ্বরদীর লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নের বিলকেদার গ্রামের তোরাব আলী বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিশ্বাস গড়ে তুলেছেন ভেড়ার খামার ৷ তিনি ঈশ্বরদীর ভেড়া চাষিদের অনুকরনীয় হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন ৷ শুধুমাত্র খামারে ভেড়া পালন করেই বছরে লাখ টাকা উপার্জন করছেন ৷ বিলুপ্ত প্রায় ভেড়াপালনের যুগেও ভেড়াপালন করে তিনি এলাকায় একজন ভাল মানুষ হিসেবেও সুখ্যাতি ছড়িয়ে দেয়ার সাথে সাথে নিজের আর্থিক উন্নতি এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারছেন ৷ শুধু তাই নয় ,এই ভেড়ার খামারে উপার্জিত অর্থ থেকে তিনি গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের-লেখা পড়া ও কন্যা দায়গ্রহস্থ পিতাকে এবং অসুস্থ রোগীদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন ৷
মোঃ আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিশ্বাস পড়াশুনা শেষ করে ওষুধের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন ৷ ২০১০ সালে শখের বসে তিনি নিজ বাড়িতে একটি ভেড়া পালন শুরু করেন ৷ সেই ভেড়া থেকে বর্তমানে তার বিশ্বাস ভেড়া খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১’শ ২৬টি ভেড়া হয়েছে ৷ ভেড়ার খামার করে কোয়েল সফল এবং ঈশ্বরদী সফল ভেড়া খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন৷ গত পাঁচ বছরে তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ৷ বিরামহীনভাবে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে ৷ ঈশ্বরদীর একজন আদর্শ ও প্রতিষ্ঠিত ভেড়া খামারি কোয়েলের দেখা দেখি তার এলাকায় ও আশপাশের বেকার যুবকরা পরামর্শ নিয়ে ভেড়া পালন শুরম্ন করেছেন ৷ ওইসব যুবকরাও ভেড়াচাষে সফলতা অর্জন করবে বলে মনেকরা হচ্ছে ৷
ভেড়া খামারি কোয়েল বিশ্বাস জানান, শখের বসে একটি ভেড়া পালন শুরু করি ৷ ভেড়ার সংখ্যা ১৭ হলে একজন রাখাল নিয়োগ দেয়া হয় ৷ বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে আমার বিশ্বাস ভেড়া খামারে ১’শ ২৬টি ভেড়া রয়েছে ৷ দু’জন রাখালকে মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতন দিয়ে পদ্মার চরে ভেড়া চড়ানো হয়৷ ভেড়ার খামার থেকে তিনি পাঁচ বছরে প্রায় চার লাখ টাকার ভেড়া বিক্রিও করেছেন ৷ সরকারি ভাবে দুই বার ভেড়া পালনে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজে এবং অন্যদের ভেড়া পালনে সহযোগিতা করতে শিখেছি ৷
দেশে বেকারত্ব দুরীকরণ এবং প্রোটিনের চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ করার জন্য এ পেশায় এসেছি ৷ দেশের এবং জনসাধারনের কথা চিন্তা করে দেশের মানুষের পুষ্টির যোগান দিতেই বেকার যুবকদের ভেড়া পালনে উত্সাহিত করে তুলছি ৷ আমি বিশ্বাস করি এদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা সততার সাথে প্রশিক্ষণ নিয়ে ও শ্রম দিয়ে ভেড়া পালন করলে দেশে বেকারত্ব কমবে ৷ সেই সাথে মাংসের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে ৷
বিশ্বাস ভেড়া খামারের নিয়মিত ডাক্তার মোঃ ইন্তজ আলী বলেন, একটি ভেড়া দিয়ে কোয়েল বিশ্বাসের খামারের বর্তমান বেড়ার সংখ্যা ১’শ ২৬টি ৷ আগামী মাসে আরও ২০টি ভেড়া বাচ্চা দিবে ৷ অন্য প্রাণীর চেয়ে ভেড়ার রোগবালাই কম৷ ভেড়া আগাছা-লতাপাতা খাওযায় খরচ কম লাগে৷ সময় মতো কৃমি নাশক করা থাকলে রোগবালাই কম হয় ৷ তবে ফুড পয়জন হলে একটু সমস্যা দেখা দেয় ৷
ঈশ্বরদীর প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দীন জানা, লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নের বিলকেদার গ্রামের তোরাব আলী বিশ্বাসের ছেলে আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিশ্বাস ওষুধ ব্যবসার পাশাপাশি ভেড়ার খামার করেছেন ৷ ভেড়া একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী ৷ ভেড়ার মাংসে আশ কম, মোলায়েম এবং স্বাদ অনেক বেশি৷ ২০১০ সালে নিজ বাড়িতে একটি ভেড়া পালন থেকে বর্তমানে তার বিশ্বাস ভেড়া খামারে ১’শ ২৬টি ভেড়া রয়েছে৷ ভেড়ার খামার করে কোয়েল সফল এবং ঈশ্বরদীর অনুকরনীয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন ৷ ভেড়া পালনে আর্থিক খরচ কম লাগে ৷ অন্য প্রাণীর চেয়ে ভেড়ার রোগ বালাইও তুলনামূলক অনেক কম হয় ৷ বিশ্বাস ভেড়া খামারে ভেড়া চাষের কারণে কিছুটা হলেও দেশের মাংসের ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট হবে ৷ বিশ্বাস ভেড়া খামারটি প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ মোতাবেক পরিচালিত হয়ে থাকে ৷ এদিকে কোয়েল বিশ্বাসের ভেড়াচাষে এলাকার মানুষের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে ৷আপলোড ৬ নভেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : সন্ধ্যা ৬.৪২মিঃ