রবিবার ● ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বহুতল ভবন নির্মান
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বহুতল ভবন নির্মান
মেহেরপুর প্রতিনিধি :: (১৪ ফাল্গুন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪২মি.) মেহেরপুরের গাংনী পৌর শহরে আদালতের নিষেধাজ্ঞাধীন জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের কারন ব্যাখ্যা দিতে সাংবাদিক সম্মেলনের নামে জনসভা করেছেন গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। তবে বহুতল ভবন নির্মান থেকে সড়ে এসে তহহাট বা কিচেন মার্কেট নির্মান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
২৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকাল ১১ টার দিকে বিতর্কিত স্থানে অনুষ্ঠিত কথিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র নবির উদ্দিন ও পৌর সচিব শামিম রেজাসহ কাউন্সিলররা। সংবাদ সম্মেলনে পৌর এলাকার দুই শতাধিক লোক জড়ো করেন তিনি।
পৌর সভার টেন্ডার নোটিশ থেকে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর কয়েকটি পত্রিকায় গাংনী পৌর এলাকার উন্নয়নমুলক কাজ ও রক্ষনাবেক্ষনের নামে ৩৩টি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে দরপত্র আহবান করা হয়।
প্রথমত বহুতল ভবন বলে নির্মান কাজ শুরু করলেও চাপের মুখে বহুতল ভবন থেকে সরে এসে তহহাট (কিচেন মার্কেট) নির্মান বলে প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। অথচ যেখানে এই মার্কেট নির্মান করা হচ্ছে ওই জমিতে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ( সিস্থিবস্থার আদেশ) দেওয়া আছে।
ওই টেন্ডারের ২৭ নাম্বার প্রকল্পের ২৮ লাখ টাকা ব্যায়ে বহুতল ভবন নির্মানের কথা বলে হলেও সংবাদ সম্মেলনের সময় বলা হয় তহহাট নির্মানে ব্যায় ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক প্রকল্পের কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হলে পরে দেওয়া হবে বলে আর দেওয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পৌরবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক। তিনি পৌর মেয়রকে প্রশ্ন করে বলেন, জেলা পরিষদ পাশে মার্কেট নির্মান করেছে তখন স্থানীয়রা কোনা প্রশ্ন তোলেনি। তাহলে পৌরসভা মার্কেট তৈরি করার সময় কেন স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেন, এখানে দির্ঘদিন ধরে হাট বসে আসছে। আমরা পৌর বাসি হিসেবে এখানে হাট চাই। কোন বহুতল মার্কেট চাইনা।
পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, নিজের জীবন থাকতে এই জমি কাউকে নিতে দেবনা। এই জমি পৌর সভার থাকবে। কেউ এসে দাবি করলেই তার হবেনা। আমি দির্ঘদিন রেজিষ্ট্রি অফিসের সাথে যুক্ত ছিলাম । কিভাবে জমি জাল হয়, কিভাবে জমির পুরাতন কাগজ তৈরী করতে হয় তা আমার জানা আছে। তার পরও আদালতে যদি কারো জমি পাওনা হয় তাহলে তৈরিকৃত ভবন সহ তাকে দিয়ে দেওয়া হবে। পৌর মেয়র বলেন, এখানে দেড়শত বছর ধরে হাট বসছে। এতদিন কেউ এ জমি নিয়ে কোন দাবি না করলেও যখন মার্কেট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে তখন মৃত আজিম উদ্দিনের পরিবারের লোকজন দাবি করছে এই জমি তাদের।
মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ জমি নিয়ে আদালত স্থিতিবস্থার আদেশ দিয়েছেন। স্থিতিবস্থা মানে কাজ বন্ধ রাখা নয়, তাই কাজ করা হয়েছে। জমির কাগজ, মার্কেটের প্রকল্পের অনুমোদন ও টেন্ডারের সচ্ছতা সম্পর্কে এক প্রশ্ন করা হলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।
পৌরসভার সব ঠিকাদারই তার নিকটজন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় ঠিকাদার তিনি। তাছাড়া পৌর সভার কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পৌর পরিষদের তাই পৌর মেয়র কাউন্সিলররা দাড়িয়ে থেকে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। রাতের আধারে মার্কেট নিমান সমন্ধে তিনি বলেন রাতের বেলায় আমি কাজ করতে বেশী পছন্দ করি। তাছাড়া দ্রুত উন্নয়ন করতে হলে সবসময় কাজ করতে হয়।
পুরতান মার্কেট ভাঙার সময় কোন টেন্ডার বা নিলাম করা হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে যান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাংনী মৌজার সাবেক ২০৫৬ দাগের ০.১৩ একর (১৩ শতক) জমি বাংলা ১৩৪২ সালে বন্দোবস্ত নিয়ে স্বত্তবান ও দখলী পান মৃত আজিম উদ্দিন। কিন্তু এসএ রেকর্ডে ভ্রমাত্মকভাবে সরকারের নামে রেকর্ড হয়। এর বিরুদ্ধে ১৯৮২ সালে আজিম উদ্দীন মেহেরপুর মুন্সেফ আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন এবং পরবর্তি বছরে তিনি ডিক্রী প্রাপ্ত হন। এর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ মিস ছানি মামলা দায়ের করলেও তা নামঞ্জুর হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ জেলা জজ আদালতে আপিল করে। মেহেরপুর বিজ্ঞ সাব জজ আদালত শুনানি শেষে মামলাটি খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে সরকার পক্ষ ১৯৮৮ সালে উচ্চ আদালতে সিভিল রিভিশন মামলা দায়ের করলেও ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী উচ্চ আদালতের এক আদেশে মেহেরপুর সাব জজ আদালতের রায় বহাল রাখেন। আজিম উদ্দীন মন্ডল মারা গেলে আব্দুল গণিসহ তার সাত ছেলে ও দুই কন্যা ওই সম্পত্তির ওয়ারিশ (মালিকানা) হন।
এ ছাড়াও আরএস রেকর্ড ভ্রমাত্মকের সংশোধনী জন্য ২০১৫ সালে মেহেরপুর যুগ্ম জেলা ২য় আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন আব্দুল গণি। পরে আদালতের কাছে তারা নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদালত ওই আবেদনটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতিবস্থার আদেশ দেন।