বুধবার ● ১ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » মাস্টারদা সূর্য্য সেন ফাঁসীতে যাবার আগে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন
মাস্টারদা সূর্য্য সেন ফাঁসীতে যাবার আগে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন
অনলাইন ডেস্ক ::মাস্টারদা সূর্য্য সেন ফাঁসীতে যাবার আগে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন …. “আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে। এই ত’ সাধনার সময়। বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার এই ত সময়। ফেলে আসা দিনগুলোকেও স্মরণ করার এই ত সময়।
কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমার ভাইবোনেরা, তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিএ্যহীন আমার এই জীবনের একঘেঁয়েমিকে ভেঙ্গে দেয়। উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহুর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহুর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করছিল। জীবনভর উৎসাহ ভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মত সেই স্বপ্নের পিছনে আমি ছুটেছি। জানিনা কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষে পৌছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মত তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমার বন্ধু্রা- এগিয়ে চল। এগিয়ে চল- কখনো পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুন। কখনো হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশির্বাদ করুন।
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহের কথা কোন দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলধা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।
আমাদের সংগঠনে বিভেদ না আসে- এই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভিতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশির্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে।
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক
বন্দে মাতরম্। ”
(মাস্টারদা সূর্য্য সেন ফাঁসীতে যাবার আগে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন এই চিঠি। ফাঁসীর মঞ্চে ওঠানোর আগে ব্রিটিশরা হাতুরী দিয়ে তাঁর দাঁত ভেঙ্গে দেয় এবং তাঁর হাড় ও ভেঙ্গে দেয়। হাতুরী দিয়ে নির্মম ভাবে পিটিয়ে অত্যাচার করা হয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি এবং হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী পোড়ানো হয়নি।ফাঁসীর পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার ‘দ্যা রিনাওন; এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়। তাঁর মৃত শবটাকেও এত ভয় পেয়েছিল কাপুরুষ বৃটিশ সরকার!
আমাদের ক্ষমা কর না হে মহানায়ক! স্বাধীনতার নামে আমরা তোমাকে প্রহসন আর জ্বালাময় অপমান ছাড়া কিছু দিতে পারিনি।) সূত্র: সোমনাথ সেন গুপ্ত। (https://www.facebook.com/somenath.sengupta.5?hc_ref=NEWSFEED)