শুক্রবার ● ১০ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » পাবনা » ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়: অভাবী রাজিয়া সুলতানা
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়: অভাবী রাজিয়া সুলতানা
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি :: (২৬ ফাল্গুন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.০৯মি.) ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় কথাটির যতার্থতা প্রমান করেছেন ঈশ্বরদী শহরের সাদি রোডের ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস কারিনী ও পোস্টাল অপারেটর আনিসুরের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। স্বামীর স্বল্প আয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করার পরও জাতির উন্নয়নে বিনা টাকায় শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। শিক্ষা বঞ্চিত এতিম,টোকাই,দরিদ্র ও প্রতিবন্ধিসহ অবহেলিত শিশুদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যেই এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই প্রথম ঈশ্বরদীতে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
জানাযায়, প্রায় বিশ বছর আগে এতিম শিশুদের দুঃখ,কষ্ট দেখার পর রাজিয়া সুলতানার স্বপ্ন জাগে এতিম ও অবহেলিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর। সেই থেকে অপেক্ষার পালা শুরু হয় রাজিয়া সুলতানার। কখন আসবে সেই স্বপ্নের সময়,যখন সে ঐসব শিশুদের নিজে আদর যত্ন করে লেখাপড়া শিখাতে পারবেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন পুরণের দিন ঘনিয়ে আসে। অনেক চেষ্টার পর গত গত ২৪ জানুয়ারি মাত্র চারজন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। আনুষ্ঠানিকতায় স্থানীয় দু’একজন জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা অংশ নেন। স্থানীয় ভালো মনের দু’চারজন শিক্ষানুরাগী মানুষেরও অংশ গ্রহন তাকে সাহস যোগায়। শুরু হয় জোড়ালো ভাবে শিক্ষার্থী সংগ্রহ অভিযান। মাত্র ৪৫ দিনে বিদ্যালয়ের আদর্শ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। সব শিক্ষার্থীকে রাজিয়া সুলতানা বিভিন্ন স্থান থেকে খুঁজে কুড়িয়ে এনেছেন। ভালমনের কেউ কেউ শিক্ষার্থী সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন। তিনিসহ পাঁচজন শিক্ষক শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের সংসারের ব্যয় কমিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের বই,খাতা কলম,পোষাক ও খাবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। নিজের সন্তানের মত শিক্ষার্থীদের আদর যত্নে শিক্ষাদান করছেন। তার নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে মৌ মায়ের কাজে খুশি হয়ে নিজেও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস করে থাকেন। বিষয়টি তার কাছেও খুব ভাল লাগে। মায়ের কাজে সে গর্বিত। তার মায়ের মত দেশের অন্য মায়েরা যদি এ ধরনের কাজে অংশ নিত তাহলে দেশের মানুষের চেহারায় ব্যাপক পরিবর্তণ আসতো বলেও মৌ মন্তব্য করে। সুলতানা রাজিয়া সাংবাদিকদের জানান,অভাবের সংসারে নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি দুঃসাহস নিয়ে বিদ্যালয়টি ভাড়াটিয়া ঘরে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি চালাতে গিয়ে তিনি ইতিমধ্যে গ্রামের বাড়ির কিছু জমিও বিক্রি করেছেন।এসব শিশুদের জন্য তিনি জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত রয়েছেন। যত কষ্টই হোক আমি ওদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করে প্রমাণ করবো যে,ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তার এসব কর্মকান্ড দেখে স্বজনদের অনেকেই নিছক পাগলামী বলেও মন্তব্য করেছেন বলেও তিনি জানান। এলাকার অনেকেই তার এই মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমনকি তার স্বামী পোস্টাল অপারেটর আনিসুর রহমানও স্ত্রীর এই উদ্যোগকে ছোট করে দেখেননা। তিনিও সাধ্যমত স্ত্রীকে সাহায্য করেন এবং স্ত্রীর কাজের প্রশংসা করেন। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন , রাজিয়া সুলতানার আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না হলেও সাহস ও উদ্যোগ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩১ জন হলেও এক সময় এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে,তখন কি সেই ব্যয়ভার তার পক্ষে বহণ করা সম্ভব হবে ? এ জন্য এখনই ভাবতে হবে তাকে ,তার দেশপ্রেমী শুভাকাঙ্খিদের এবং সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি,ব্যবসায়ী ও দানবীরদের। আবার কেউ কেউ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্তাব্যাক্তিদেরও বিষয়টিকে খাটো করে না দেখে সঠিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন।