বৃহস্পতিবার ● ১৬ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » অর্ধকোটি টাকার প্রকল্প ৯ মাসেও কাজ শুরু হয়নি
অর্ধকোটি টাকার প্রকল্প ৯ মাসেও কাজ শুরু হয়নি
সিলেট প্রতিনিধি :: (২ চৈত্র ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৩৭মি.) মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার অর্ধকোটি টাকার ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হলেও কাজ শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
চলতি বছরের ২ মার্চ এ ৯টি প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের সর্বশেষ তারিখ ছিল। কিন্তু টেন্ডারের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ এ কাজগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে-বড়লেখা হাজীগঞ্জ বাজারের স্টেশন রাস্তা আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন, বাঁশতলা সিএন্ডবি হতে পচাই মিয়া’র বাড়ি পর্যন্ত সিসিকরণ, হাটবন্দ কটির বাসা হতে নাজমার বাসা পর্যন্ত ড্রেন নিমার্ণ, ফকির শাহের মোকাম রাস্তা সিসিদ্বারা উন্নয়ন, মুড়িরগুল আব্দুল মুতলিব, পানিধার অরিরাম কর’র বাড়ির সামনের রাস্তা সিসিকরণ ও ৩টি স্থানে কালভার্ট নিমার্ণ, মহুবন্দ আজিমগঞ্জি বাসা হতে মৌলানা আব্দুল মুতলিব’র বাসা পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ, আহমদপুর রফিক হাজী ও এডিসি জনাব হারুন’র বাড়ির সামনের রাস্তায় সিসিকরণ।
বড়লেখা পৌরসভা ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের (দরপত্র বিজ্ঞপ্তি নং-৫) এর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের ১১টি কাজের টেন্ডার গ্রহণ করা হয় গত বছরের জুন মাসের ৯ তারিখে। এরপর নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে ২টি কাজ কোনমতে শেষ হলেও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণে অন্য ৯টি কাজ দেখেনি আলোর মুখ। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) মোতাবেক ঠিকাদারদের কাজ শুরু করার কথা চলতি বছরের ২ জানুয়ারি এবং কাজ সমাপ্তের তারিখ বেঁধে দেওয়া হয় ২ মার্চ পর্যন্ত। নিয়ম অনুয়ায়ী টেন্ডারের গ্রহণের পর উক্ত টেন্ডার বৈধতার মেয়াদ ১২০ দিন।
কিন্তু প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ সম্পন্নতো দূরের কথা, শুরুই করেনি।
সূত্র জানায়, এই সকল টেন্ডারে ঠিকাদার নয় এমন অনেক ব্যক্তি অন্যের লাইসেন্সে অংশগ্রহণ করে কাজগুলো পান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কাজে প্রকৃত ঠিকাদারের নামে কাজ নেওয়া হলেও তারা এর দায়িত্বে নন। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে শুধু মাত্র তাদের লাইসেন্সগুলো ব্যবহার করা হয়। যার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও ঠিকাদারদের কাজের চাপ দেয়নি।
পৌর শহরের ব্যবসার প্রাণ কেন্দ্র স্টেশন রোড এলাকার রাস্তাটির উন্নয়ন কাজে স্থবিরতার ফলে বেড়েছে ভোগান্তি। অল্প বৃষ্টিতে ড্রেনের ময়লা পানি আর কাঁদায় সয়লাব রাস্তায় জনসাধারণের চলাচলে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
স্টেশন রোড এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা সাব্বির আহমদ, উজ্জ্বল ঘোষ, ইফতে খায়রুল বাবলু ক্ষোভের সঙ্গে সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, ‘স্টেশন রোড এলাকা বড়লেখা হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু। রাস্তটি কাজের টেন্ডার অনেক আগে হয়েছে শুনেছি। কিন্তু কাজের বেলায় কোন অগ্রগতি দেখছি না। শুধু আজ হবে, কাল হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন আমরা নজিরবিহীন কষ্ট করছি।’
বাঁশতলা রাস্তা উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকারী মখলিছুর রহমান বলেন, ‘কাজের অনুমতি পেয়েছি মাত্র দেড়মাস আগে। কাজটি দ্রুত শুরু করব।’ ফকির শাহের মোকাম রাস্তা উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকারী মহিউদ্দিন আহমদ গুলজার বলেন, ‘টেন্ডার হওয়ার পর মধ্যখানে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। তাই অফিসিয়াল কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে পারিনি।’
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেহীন সিদ্দিকী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সঠিক সময়ে হাটবন্দ কটির বাসা হতে নাজমার বাসা পর্যন্ত ড্রেন নিমার্ণ না করায় ড্রেনের জায়গা বেদখল হচ্ছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতে সড়কে পানি উঠছে। এতে জনগণকে চরম কষ্ট করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বড়লেখা পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী নূরুল আলম সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, ‘১১টি প্রকল্পের মধ্যে দুটি’র কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারদের বারবার তাগিদ দেওয়া হয়। সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তাঁরপরও যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করা হয় তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুয়ায়ি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।