সোমবার ● ২০ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৌচাষ শুরু: অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৌচাষ শুরু: অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি :: (৬ চৈত্র ১৪২৩ বাঙলা: বাংরাদেশ সময় রাত ৯.৩০মি.) ঈশ্বরদীতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৌচাষ শুরু করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা নিউ এরা ফাউন্ডেশন। সম্ভাবনাময় মৌচাষের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি সফলতা পাওয়ায় ঈশ্বরদীর বিভিন্ন অঞ্চলে আলোচনা শুরু হয়েছে। ঈশ্বরদীতে মৌচাষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, লিচু চাষে ঈশ্বরদী দেশের অন্যতম এলাকা হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে লিচু চাষে প্রসিদ্ধতম ঈশ্বরদীর অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ডই হলো লিচু চাষ। লিচুর সাথে জড়িয়ে আছে এই এলাকার মানুষের আরেক অর্থনৈতিক ও কর্ম-সংস্থানের বিশাল সম্ভাবনা। আর তা হলো লিচু বাগানে মৌচাষ। মধু চাষের সম্ভাবনা দেখে লিচুর উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিউ এরা ফাউন্ডেশন এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সলিমপুর ইউনিয়নের ১৫ জন মহিলা-পুরুষ সদস্যকে বিসিকের সহযোগিতায় দু’দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাতে কলমে মৌচাষ শিখিয়ে এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে মধু উৎপাদন শুরু করেছে।
মধুচাষ অনেক প্রাচীন হলেও দেশে ১৯৭৭ সালে বিসিকের উদ্যোগে আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে মধুচাষ শুরু হয়। মৌচাষ একটি সহজ ও লাভজনক অর্থনৈতিক কর্ম যা বাড়ির মহিলারাও করতে পারে। এ জন্য দৈনন্দিন কাজের কোন ব্যাঘাত ঘটেনা বরং পরিবারের বাড়তি আয় হয়। একটি মৌবক্স থেকে গড়ে এক হাজার টাকা আয় করতে পারে তারা। লিচু ছাড়াও সরিষা, কালোজিরা আম, তিল মধুর প্রধান উৎস। মৌচাষ পরিবেশ ও কৃষির জন্যও উপকারী। মৌচাষ ফসলের পরাগায়নে সহযোগিতা করে বিধায় ফসলের ফলন ২০থেকে ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়। মধূ উত্তম পানীয়, বল বৃদ্ধিকারক, সুস্বাদু ও সকল রোগের মহৌষধ। মধুর গুণাগুণ সম্পর্কে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনেও উল্লেখ আছে। এছাড়াও মধু বিভিন্ন ঔষধ, প্রসাধনী ও খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুতের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রওশন জামাল নিউ এরা ফাউন্ডেশন কর্তৃক মৌচাষের মাধ্যমে মধু উৎপাদন উদ্যোগের প্রশংসা করে সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন এটি কৃষির একটি সমন্বিত উদ্যোগ। তিনি আরো বলেন,“মৌচাষের মাধ্যমে কৃষির বহুমূখীকরণ হচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। তাছাড়া মধু স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী , সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য।” সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগী কৃষক সমন্বিতভাবে কাজ করলে কৃষির আরো উন্নয়ন হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন ।
নিউ এরা ফাউন্ডেশনে কর্মরত কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান- “মৌচাষ একটি কৃষি-পরিবেশ বান্ধব শিল্প। কিন্তু শিল্পটি সুসংগঠিত নয় বিধায় অবহেলিত ও বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে। লিচু, সরিষা, কালিজিরা, তিল ফসল উৎপাদন এলাকার দরিদ্র-বেকার নারী-পুরুষ সহজেই মৌচাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারে। তবে মৌচাষকে টেকসই করতে হলে সরকারীভাবে বিষয় ভিত্তিক গবেষণা, মধু ক্রয়, প্রক্রিয়া জাতকরণ ও রপ্তানীর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও জাপানে বাংলাদেশে উৎপাদিত মধুর চাহিদা রয়েছে। তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মধু উৎপাদন করে দেশের মধু বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করাও সম্ভব। এটি করতে পারলে দেশের দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে এপি কোম্পানী, প্রসিকা, বাসা, ট্রপিকাহানি ও প্রাণসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানী প্রক্রিয়াজাত করে মধু বিদেশে রপ্তানী করছে।
দেশের দরিদ্র-বেকার মানুষ সরকারী-বেসরকারীভাবে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পেলে মৌচাষ একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক শিল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশের ও বিদেশের সঠিক মধুর চাহিদা নিরুপণ করে এর উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানীর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নিউ এরা ফাউন্ডেশন ভ্যালুচেইন প্রকল্পের আওতায় নিজস্ব অর্থায়নে ও কারিগরী তত্বাবধানে সংস্থার পিছিয়ে পড়া আগ্রহী সদস্যদের দ্বারা মধু চাষ করে সরাসরি তাদের খামার থেকে সংগ্রহ করছে। খামার থেকে সংগৃহীত মধু প্রচলিত সাধারণ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাতকরণ শুরু করেছে। ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের চরমিরকামারীতে অবস্থিত সংস্থার সমৃদ্ধি কর্মসূচি’র অফিস থেকে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা দরে ভেজালমুক্ত শতভাগ খাঁটি মধু বিক্রয় করা হচ্ছে। আশার কথা হলো, ভ্যালু চেইন প্রকল্পের অধীন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নিউ এরা ফাউন্ডেশন ঈশ্বরদীর লিচু চাষীদের উন্নয়নে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেছে।