বৃহস্পতিবার ● ৩০ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে পানগুছি’র দু’পাড়: ১৪ মৃতদেহ উদ্ধার
স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে পানগুছি’র দু’পাড়: ১৪ মৃতদেহ উদ্ধার
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: (১৬ চৈত্র ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.০০মি.) বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে যাত্রীবাহি ট্রলার ডুবির ঘটনায় সময় বাড়ার সাথে সাথে নিহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সাথে পানগুছি নদীর দু’পাড়ে স্বজন হারানো মানুষের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ।
কারো পিতা, কারো ভাই, বোন, মেয়ে ও ছেলে খরস্রোতা পানগুছি নদীতে ভেষে গেছে। স্বজন হারানো মানুষ গুলো খুজে ফিরছে নিহত স্বজননের মৃত দেহটি। মৃত দেহ উদ্ধারের খবর পেলেই সেখানে ছুটে যাচ্ছে স্বজনেরা। অনেকেই আবার নিজ উদ্যোগে ট্রলার নিয়ে নদীতে খুজে ফিরছেন স্বজনের মৃতদেহ। জীবিত না হলেও মৃত দেহ ফিরে পেতে চায় তারা।
নদীর পাড়ে নিজ স্ত্রী’কে খুজতে থাকা পিরোজপুর জেলার বালিপাড়া গ্রামের গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, গত দুই দিন ধরে স্ত্রী নাসরিন বেগমের মৃতদেহটির জন্য অপেক্ষ করছি। এখনও পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পায়নি।
স্ত্রীর খোজে নদীর পাড়ে দাড়িয়ে থাকা পুলিশ কনেস্টবল জাহিদ হোসেন লিটন বলেন, ঘটনার দিন ডুবে যাওয়া ট্রলারে আমিসহ আমার ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী ছিল। ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সময় আমি ও আমার ছেলে-মেয়ে নদীর পাড়ে সাতরিয়ে উঠতে পারলেও আমার স্ত্রী নাসিমা বেগম নদীতে ভেসে যায়। এখন পর্যন্ত তার লাশ আমি পায়নি।
মায়ের লাশ নিয়ে ফিরতে থাকা কালিকাবাড়ী গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও চিংড়াখালী গ্রামের লোকমান সরদার জানান, লাশ উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ ১৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়েছে।
এদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনায় আজ ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টা পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৪ জনে। নৌবাহিনীর কমান্ডার শাহরিয়ার ও বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক সরদার মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উদ্ধার হওয়া ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন, মোরেলগেঞ্জর চিংড়াখালী গ্রামের তবিবুর রহমান তোতার স্ত্রী মুন্নি বেগম (৩৫), কালিাকাবাড়ি গ্রামের আব্দুস ছালাম শেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম(৩৫), কাছিকাটা গ্রামের কাশেম শেখের ছেলে আব্দুল মজিদ শেখ (৭৫), কাছিকাটা গ্রামের নাসির শেখে পুত্র নাজমুল (৬), বুরুজবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গফুর হাওলাদরের ছেলে আনছার হাওলাদার (৫০), রায়েন্দা গ্রামের সামসুল হুদার ছেরে আল সামস্ আবির (১৬), বাশবাড়িয়া গ্রামের আলম চাপরাশির স্ত্রী সালমা (৩০) ও তার দুই বছরের শিশুপুত্র সাজ্জাদ, কাছিকাটা গ্রামের নাসির শেখের পুত্র নাজমুল (৬)।
এছাড়া গত বুধবার ও মঙ্গলবার উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, মোরেলগঞ্জের পুটিখালী গ্রামের হালিম হাওলাদার কন্যা রিমা বেগম (২৫), মোরেলগঞ্জের কালিকাবাড়ি গ্রামের মহসিন হোসেনের স্ত্রী বিউটি বেগম (৩৮), গুয়াবাড়িয়া গ্রামের হাসেম হাওলাদারের স্ত্রী সিয়ার বানু (৫০), চিংড়াখালী গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৭৫) ও উত্তর ফুলহাতা গ্রামের মোয়াজ্জেম হাওলাদারের স্ত্রী নাদেরা বেগম (২০)।
নৌবাহিনীর কমান্ডার শাহরিয়ার সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, ট্রলার ডুবির ৩য় দিনে নিখোজের তালিকা অনুযায়ী ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি নিখোজদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে, ট্রলার ডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে মোরলগঞ্জ উপজেলা সভা কক্ষে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড.শাহ-ই্-আলম বাচ্চু, পৌর মেয়র মনিরুল হক তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী খান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম মাহামুদ আলী, রাজনেতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানিয় সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সভায় ট্রলারের এ মর্মান্তিক ট্রাজেডিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা সহ সরকারি নিয়মানুযায়ী খেয়া পারাপার নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়।
সভায় পানগুছি নদীতে খেয়াপারাপারে জন্য সরকারি ভাবে দুটি ট্রলার ও দুই পাড়ে দুটি যাত্রী ছাউনি নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া প্রতি ট্রলারে ২৫ জন করে যাত্রী ও একটি বাসের যাত্রী একটি ট্রলারে বহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ট্রলার ডুবির এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়াও তিনি এ উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিস ও স্থাণীয় ভাবে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ব্যাক্তিদের খাবারের ব্যবস্থা করেন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে প্রায় ৮০ জন যাত্রী নিয়ে খেয়াপারাপারের ইঞ্জিন চালিত ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ এখনও ৯ জন নিখোজ রয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড। মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের উদ্ধার করতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যতক্ষণ না তাদের পাওয়া যাচ্ছে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তাদের উদ্ধারে এখনো নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা স্থানীয়দের সাথে নিয়ে নদীতে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, ট্রলারডুবির ঘটনায় বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোমিনুর রশিদকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যে তদন্ত কমিটি আজ জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের তদন্ত রির্পোট দাখিলের কথা রয়েছে।