সোমবার ● ১৭ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিএনপি নেতা ইলিয়াস নিখোঁজের ৫ বছর আজ
বিএনপি নেতা ইলিয়াস নিখোঁজের ৫ বছর আজ
মো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (৪ বৈশাখ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৫০মি.) বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। সপ্তাহ। মাস। বছর। দেখতে দেখতে এভাবে ডায়েরীতে থেকে ১৮২৫টি দিন চলে গেছে। দীর্ঘ দিনেও সিলেটের বিএনপির এ নেতার খোঁজ পাওয়া যায়নি! সাধারণ মানুষের মনে এখন একটি প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। এ অপেক্ষার শেষ কোথায়? এ প্রশ্নের সদোত্তর দিতে পারছে না কেউ। নিখোঁজের ঘটনার উদ্ধার তৎপরতাও থেমে গেছে। দিনে দিনে সবকিছু যেন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। সিলেটের বিএনপির প্রভাবশালী এ নেতাকে সরকার গুম করে রেখেছে এমন অভিযোগ শুরু থেকেই করে আসছে বিএনপি। তবে সিলেটের মানুষ আজও ভুলেনি তাদের নেতা ইলিয়াসকে। তার সন্ধান কামনায় চলছে মিলাদ-দোয়ামাহফিল। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে বিএনপি নেতা. ইলিয়াস আলী ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আনসার আলী নিখোঁজ হন। দীর্ঘ ৫ বছরের মাথায় এসেও কান্না থামেনি ইলিয়াস পরিবারসহ নেতাকর্মীদের। ইলিয়াস মাথা সূর্যবান বিবি পুত্রের জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি এখন শুকিয়ে গেছে। টিক মত চলা ফেরা করতে পারছেনা। কারো কাছে তাঁর এখন কিছু বলা বা চাওয়ার নেই। চোখে মূখে ক্ষোভ আর হতাশার চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবুও নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তার পরিবার, নিজ দলের নেতাকর্মীরা ও বিশ্বনাথের সর্বস্থরের মানুষ। ইলিয়াস আলীর মতো একজন প্রভাবশালী উদীয়মান তরুণ রাজনীতিবিদ নিখোঁজ হওয়ার পেছনের কারণও আজোও জানাতে পারেনি কেউ। সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীর সন্ধান কি আর পাওয়া যাবে? এক ইস্যুতে অন্য ইস্যু চাপা পড়ার মতো ধীরে ধীরে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে ইলিয়াস ইস্যুও। অপেক্ষা করতে করতে পেরিয়ে গেল ৫টি বছর। কিন্ত শেষ হচ্ছে না অপেক্ষার প্রহর। কবে শেষ হবে এই অপেক্ষার পালাক, কবে ফুঁটবে ইলিয়াস আলী ও আনসার আলীর পরিবারের মুখে হাসি এই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়া গেছে এমন একটি ব্রেকিং নিউজ টিভি’র পর্দায় দেখার জন্য এখনও টিভি’র সামনে বসে থাকেন অনেকেই।
অপরদিকে, বিশ্বনাথ বিএনপি আর আগের অবস্থানে নেই। নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সঙ্গেও যেনো হারিয়ে গেছে বিএনপির অবস্থান। এক সময় বিশ্বনাথের রাজপথে জোরালো অবস্থান ছিল বিএনপির। বিএনপির জোরালো অবস্থানের কাছে অন্যদলগুলো যেনো অসহায় ছিল। এখন বিশ্বনাথে খেই হারিয়ে ফেলেছে দেশের অন্যতম এই রাজনৈতিক সংগঠনটি। আর এসবের মূলে রয়েছেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি দিন দিন দলে বেড়েছে মতপার্থক্য, রেষারেষি।
ইলিয়াস জীবিত না মৃত এ নিয়ে গত ৫ বছর থেকে আলোচনার ঝড় বইছে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সারা দেশে। কিন্তু ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ইলিয়াসের সন্ধান মেলেনি। সিলেটবাসীর বিশ্বাস, জনতার ইলিয়াস আবার জনতার কাছে ফিরে আসবেন। সাময়িকভাবে হয়তো তাকে বন্দি, আটক বা গুম করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আবার ফিরে আসবেন। ইলিয়াস নিখোঁজের পর সিলেটসহ দেশের সর্বত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে রাজপথে নেমে আসেন দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। ইলিয়াসের সন্ধানের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। এসব কর্মসূচিতে ৮ জন প্রাণ হারান। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল ইলিয়াসের জন্মস্থান সিলেটের বিশ্বনাথে হরতাল চলাকালে উপজেলা সদরের থানা ঘেরাও করতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেঁধে মিছিল সহকারে উপজেলা সদরের দিকে এগোতে থাকেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় মিছিলকারীদের পুলিশ বাধা দিলে ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বিশ্বনাথে স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয় মনোয়ার, সেলিম ও জাকির। আহত হন অনেকেই। ওই সংঘর্ষে বিক্ষুব্ধ জনতা উপজেলায় হামলা-ভাংচুর করেছিল। এতে উপজেলা পরিষদের ১৯টি দফতরের ১ কোটি ৬২ লাখসহ প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় বিশ্বনাথে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করে দায়ের করা হয় ৬টি মামলা। এসব মামলায় বিশ্বনাথের জনপ্রতিনিধি, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও অনেক সাধারণ মানুষসহ প্রায় ১৮ হাজার লোককে আসামি করা হয়। ৬ ইউপি চেয়ারম্যানসহ শতাধিক নেতাকর্মী কারাবরণ করেন। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবার এখনও আশাবাদী তিনি আবার ফিরে আসবেন। সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবি। তিনি পুত্র শোকে কাতর। অনেকটা শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তার প্রিয় পুত্রের জন্য।
নিখোঁজ ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা বলেন, গত ৫ বছরেও কোনো সুসংবাদ পাইনি। মহান আল্লাহর কাছে প্রতিদিন সাহায্য চাচ্ছি ইলিয়াসের জন্য। একমাত্র আল্লাহই পারেন ধৈর্যের প্রতিদান দিতে।
তিনি বলেন, আমি আমার স্বামীকে যে কোনো মূল্যে ফেরত পেতে চাই। তাকে ফিরে পেতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত। শুধু আমি নই, আমার মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল তার বাবার জন্য ব্যাকুল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সে হতাশ। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, মা অনেক দিনতো হয়ে গেল তারপরও বাবা ফিরছেন না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারি না।
লুনা বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চাকুরি ও সন্তানের লেখা-পড়ার কারণে স্বামীর নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া হয় কম। ইলিয়াস আলীর নিজ এলাকায় বিএনপি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ইলিয়াস আলীর ভালবাসার কারণে এলাকার অসংখ্য নেতাকর্মী নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। মাঝে মাঝে তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে এবং তাদের প্রয়োজনে এলাকায় আসা হয়।
ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন,দীর্ঘ দিন হলেও আজোও ইলিয়াস আলীর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন টিভি’র সামনে একটি ব্রেকিং নিউজরে আশায় বসে থাকি।
কৃষক সুরুজ আলী বলেন, ইলিয়াসের কথা মনে হলে চোঁখ দিয়ে পানি আসে। তিরি ফিরে আসবেন এই আশায় বুক বেঁধে রয়েছি।
বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটের কোটি মানুষের নেতা ইলিয়াস আলী। সরকার তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষানিত হয়ে তাকে গুম করে রেখেছে। ইলিয়াস আলীকে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে মানুষ কতটুকু ভালবাসেন, তা উপজেলা নির্বাচনে ব্যালেটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এতে দলের নেতাকর্মীরাও আনন্দিত। ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা বিএনপি খাটি বলে তিনি দাবি করেন। অবিলম্ভে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।