মঙ্গলবার ● ১৮ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » যৌতুকের আগুনে পুড়ছে গৃহবধূ নাসরিন
যৌতুকের আগুনে পুড়ছে গৃহবধূ নাসরিন
মেহের আলী বাচ্চু, মেহেরপুর প্রতিনিধি :: (৫ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১৫মি.) দাবীকৃত যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূ নাসরিন (২১) কে পিটিয়ে আহত করেছে পাষান্ড স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। মুমুর্ষাবস্থায় তাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে । অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামে।
জানা গেছে, কসবা গ্রামের মোজাম্মেল হকের মেয়ে নাসরিনের বিয়ে হয় লুৎফর রহমানের ছেলে সাগরের সাথে বছর পাঁচেক আগে। সে সময় ৬০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়া হয়। বেশ ভালই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। ইতোমধ্যেই তাদের কোল জুড়ে আসে পুত্র সন্তান। নাম রাখা হয় জিহাদ। সংসারের নানা সমস্যা তুলে ধরে সাগর তার স্ত্রী নাসরীনের কাছে আবারো ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবী করে। এদাবী পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করায় নাসরীনকে অকথ্য নির্যাতন করে। বাধ্য হয়ে স্বামী সাগরকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে নাসরীন। কিন্তু বিয়ের তিন মাসের মাথায় সেই স্বামীকে বিভিন্ন ধরণের হুমকী দেয়ায় আবারো বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয় নাসরীনকে।
এদিকে গ্রামের লোকজন এক সালিশ বৈঠক করে সাগর ও নাসরীনকে নতুন করে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন পরই সাগরের পাষন্ডতা বেড়ে যায়। আবারো যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। এ দাবী মেনে নিতে না চাইলে তাকে পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্বামী সাগর নাসরীনকে কোন অত্যাচার করবেনা মর্মে অঙ্গীকার করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই রাতেই যৌতুক নিয়ে আবারো শুরু হয় কথা কাটাকাটি। একপর্যায়ে সাগর, শ্বশুর লুৎফর রহমান ও শ্বাশুড়ী ববিতা খাতুন অমানবিক নির্যাতন চালায় নাসরীনের উপর। তার চিৎকারে প্রতিবেশী মিলু মেম্বর, মনি মাষ্টার ও পান্না মুমুর্ষাবস্থায় নাসরিনকে উদ্ধার করে ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নাসরিন জানায়, স্বামী সাগর একজন লম্পট । সে নেশাখোর । নেশা করতে নিষেধ করলে ও নেশার টাকা না দিলে তাকে নির্যাতন করে। যখনই টাকার দরকার হয় তখনই নির্যাতন করে। গত কয়েকদিন ধরে লোকজনকে ধরে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়ে সবাই নির্যাতন করেছে। নাসরিনের পিতা মোজাম্মেল ও মা মর্জিনা জানান, আমার মেয়েকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছ। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।
নির্যাতনের খবর পেয়ে মানবাধিকার সংগঠন মানব উন্নয়ন কেনদ্র (মউক) এর গাংনী উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরামের আহবায়ক ও উপজেলা লোকমোর্চার সাধারন সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, মউকের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর কাজল রেখা, সোনিয়া আক্তার ও উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক মহিবুর রহমান মিন্টু গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাসরিনকে দেখতে যান এবং আইনি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। পরিশেষে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম জামাল আহমেদকে অবহিত করা হয়। তিনি সমস্যা নিরসনে ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সমাধানের আশ্বাস দেন।