মঙ্গলবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » শাসনও করেন , সোহাগও করেন
শাসনও করেন , সোহাগও করেন
অধ্যাপক আকতার চৌধুরী :: (প্রসঙ্গ অনলাইন পত্রিকার নিবন্ধন) অবশেষে অনলাইন সংবাদপত্র গুলোকে সরকার নিবন্ধনের মাধ্যমে স্বীকৃতি বা বৈধতা দিতে যাচ্ছে। এটা কম সু-সংবাদ নয়। অন্তত আমার মত নিরীহগোছের সংবাদসেবীদের জন্য ।মাননীয় তথ্যমন্ত্রী তাঁর কথা রেখেছেন। এ জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।তিনি অনলাইন পোর্টাল মালিকদের সংগঠন বনপার সাথে বৈঠকে বলেছিলেন-অনলাইন নীতিমালা ঘোষিত হোক না হোক , আগে নিবন্ধন শুরু করা হবে।
এ সংবাদে সত্যি চোখের কোনে আনন্দাশ্রু।কক্সবাজারের মত জায়গা থেকে বিগত ৮টি বছর কিভাবে যে একটা অনলাইন পত্রিকা চালিয়েছি তা অন্তত আমি আর আমার ওপর ওয়ালা ভাল জানেন।
নীতিমালা না থাকাটা যতটা কঠিন , আরো কঠিন সেল্প সেন্সরশীপ। প্রতিটি শব্দ যেন আসমান সমান বোঝা।।
প্রতিটি মুহুর্ত কেটেছে দু:শ্চিন্তায় । এক একটা নিউজ অনলাইনে ছাড়ি ,আর আমার হার্টবিট আরো বাড়তে থাকে। খালি ভাবি ,না জানি আবার কোন মাইনকা চিপায় আটকে যাচ্ছি!
এমন চিন্তা ছিল সারাক্ষণ। তার উপর সংবাদ সংগ্রহে অবৈধতার গ্লাণি আর প্রতিকূল পরিবেশ কাটাতে হয়েছে সবচেয়ে বেশী আমাদের মত অনলাইন সংবাদসেবীদের।
অনেকের ধুর ধুর ছাই ছাই আর বক্রচাহুনী স্বযন্তে এড়িয়ে গেছি জারজ সন্তানের মায়েদের মত পিতার স্বীকৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে।ধন্যবাদ দিতেই হয় সরকারকে , এমন একটা রেমিটেন্সবাহী শিল্পকে দেরীতে হলেও স্বীকৃতি দিতে।
অবাক হওয়ারমত ব্যাপার , নিরবে এ প্রজজ্ম তারুণ্যের উচ্ছাসে কতবড় একটি পূজি বিনিয়োগ করেছে! বাংলাদেশে কতটা অনলাইন সংবাদপত্র আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ৫০০০ এর কম নয় । এই পাচঁহাজার অনলাইন সংবাদপত্র যদি প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে থাকে তা বছরে দাড়ায় ৩শ কোটি টাকা। (এ পরিসংখ্যান শুধূ আঞ্চলিক অনলাইনগুলোর জন্য, তথ্য সঠিক নাও হতে পারে)। সরকারের স্বীকৃতি পেলে তারুণ্যের এই বিশাল ইনভেস্টমেন্ট বিদেশী বিজ্ঞাপন আকৃষ্ট করে দেশের রেমিটেন্সে বিশাল একটি যোগান দিতে সক্ষম হবে বলেও মনে করি।
আজ বলতে দ্বিধা নেই, সরকার আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলোকে যে ভর্তুকি দিয়ে পালনপোষণ করছে অনলাইন সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে তার তিল পরিমাণ নেই। কিন্তু শাসন করার ক্ষেত্রে ১৬ আনাই আইন তৈরী করে রেখেছে। ৫৭ ধারা আর সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল আমাদের মাথার উপর ঝুলেই আছে।
আমাদেরও দাবী থাকতে পারে – শাসনও করেন , সোহাগও করেন। ন্যায্য মূল্যে ইন্টারনেট সেবা, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রীর মূল্য কমানো, অনলাইন সংবাদপত্রগুলোকে সরকারী বিজ্ঞাপন , ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে ব্যাংক লোন , সংবাদপত্রের জন্য বিদ্যমান সুযোগসুবিধা অনলাইনকেও প্রদান, প্রেস কাউন্সিলে বিচারসহ সংবাদপত্রের জন্য বিদ্যমান শাস্তির সাথে সংগতি রেখে অনলাইনের জন্যও শাস্তির বিধান প্রদান করা হোক।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ‘ আজ বাস্তবতা । এটা আর দলীয় শ্লোগান নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনলাইন সংবাদপত্রগুলো অবদান অস্বীকার করার জো নেই । এটাকে আরো জোরদার করা যেতে পারে অনলাইন সংবাদপত্রগুলোকে কাজে লাগিয়ে।
অনলাইন সংবাদপত্রগুলোর যেসব সংগঠন ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল (বনপা)ও বাংলাদেশ জাতীয় অনলাইন প্রেস ক্লাব তার অন্যতম।অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে এসব সংগঠনকে কাজে লাগানো দরকার।তদুপরি মেইনষ্ট্রিম বা মূলধারার সাংবাদিকতার সাথে অনলাইন সাংবাদিকতার একটা সমন্বয় খুবই প্রয়োজন।প্রয়োজন সাংবাদিকতার একতা।মেইনষ্ট্রিম সাংবাদিকতাকেও সৃজনশীল পদ্ধতিরমত অনলাইন সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষিত করতে হবে।তাহলে সাংবাদিকতার মহান পেশা মর্যাদার আসনে পুন:স্থাপিত হবে।হয়তো একদিন অনলাইন আর অফলাইন সাংবাদিকতা বলে কিছু থাকবে না। সেদিনের প্রত্যাশায় থাকলাম।