বুধবার ● ২৬ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » বীজ ব্যবসায়ীর প্রতারণা : আত্রাইয়ে ২০ বিঘা জমিতে ধানের বদলে চিটা
বীজ ব্যবসায়ীর প্রতারণা : আত্রাইয়ে ২০ বিঘা জমিতে ধানের বদলে চিটা
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: (১৩ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৫১মি.) নওগাঁর আত্রাই উপজেলার দর্শনগ্রামের কৃষক প্রিন্স মাহমুদ বাজারের এক বিক্রেতার কাছ থেকে বোরো ধানের বীজ কিনে তা ১২বিঘা জমিতে রোপন করেছিলেন তিন মাস আগে। সঠিকভাবে পরিচর্যাও করেছেন তিনি। সময়মতো ধানগাছগুলোর শিষও বের হয়। কিন্তু শিষের ধানগুলোর দানা শক্ত না হয়ে আস্তে আস্তে বেশির ভাগ ধানই চিটা হয়ে যায়।
এতে ওই এলাকার কৃষকরা ধানের বদলে চিটা হওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। তারা সরকারের কাছে এর ক্ষতিপূরন চান এবং সেই সঙ্গে প্রতারক কোম্পানি ও ডিলারের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি দাবী করেন।
প্রিন্স মাহমুদ অভিযোগ করে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি নাটোরের সিংড়া সদর বাজার থেকে মেসার্স আল-আমিন নামের একটি দোকান থেকে জিরা ধানের বীজ চেয়েছিলেন। তাঁকে তখন অধিক উৎপাদনের কথা বলে গাজীপুর সিড লিমিটেড কোম্পানির তাজ জিরা নামের ধান বীজ দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে দুই কেজি ওজনের ২৭ ব্যাগ বীজ কিনেন তিনি। কিন্তু তাঁকে ভেজাল বীজ দেওয়া হয়। আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি ওই দোকানের মালিক। তিনি গাজীপুর সিড লিমিটেড কোম্পানির ডিলার বলে দাবি করেন। বর্তমানে ওই ডিলার পলাতক রয়েছেন। প্রতিদিনই ভুক্তভোগী কৃষকরা ডিলারের দোকানে আসে বলে জানান স্থানীয়রা।
তিনি আরো বলেন, ওই বীজের চারা লাগানো ১২ বিঘা জমির প্রায় ৯৫ শতাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। ১২ বিঘা জমিতে প্রায় ২৫০ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও এখন ২০ মণ ধানও হবে না। এতে সেচ খরচসহ তাঁর প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
প্রিন্স মাহমুদ একা নন আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নের নন্দীগ্রাম ও ইসলামপুর গ্রামের আরও অন্তত ৩০ জন কৃষক তাঁর মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অধিক উৎপাদনের লোভে বাজারে দৃষ্টিনন্দন মোড়কে হাইব্রিড জাতের ধান বীজ কিনে তা রোপন করে এখন হা-হুতাশ করছেন ওই সমস্ত কৃষক।
২৬ এপ্রিল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বোরো ক্ষেতের ধান দূর থেকে দেখে সব ধান পেকে গেছে। কিন্তু কাছে যেতেই দেখা যায় প্রায় সব ধান চিটা। ধানের শিষগুলো হাতে নিয়ে দেখা যায় প্রতিটি ধান গাছের থোড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ ধানই চিটা। অথচ ওই সমস্ত খেতের পাশেই অন্য কৃষকদের ধান ভালো রয়েছে। তাঁদের খেতে ধানের দানা শক্ত হয়ে গেছে। ধানের ভারে শিষগুলো হেলে পড়েছে।
দর্শনগ্রামের মনসুর আহমেদ, কাওছার আলী ও আব্দুর রাজ্জাকসহ ছয়-সাতজন কৃষক সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, বাজার থেকে বীজ কিনে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। জমি তৈরি, নিড়ানি ও সার-কিটনাশকসহ প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন খেতে যে ধান হয়েছে তাতে লাভ তো দূরের কথা খরচের অর্ধেক টাকাও উঠবে না।
ভুক্তভোগী বর্গাচাষি আব্দুর রাজ্জাক সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, তিনি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বাজার থেকে বীজ কিনে তা রোপন করেছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর এক বিঘা জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। বীজ ভেজাল হওয়ায় তাঁর সব কষ্ট পানিতে গেছে।
আল আমিন ট্রেডার্স এর ডিলার মো. আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আমার কোম্পানি ওই সব জমির ধানের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গেছে। যদি বীজের কারণে এই সমস্যা হয় তাহলে কৃষকদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আত্রাই উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মৃধা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগের নজর এড়িয়ে অনেকেই বাজারে দৃষ্টিনন্দন মোড়কে বিভিন্ন জাতের বীজ বাজারজাত করছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা সুনিদিষ্টভাবে অভিযোগ করলে ওই সমস্ত বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম কাউছার হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, যেহেতু ডিলার আমার উপজেলার বাইরের তাই তাকে আটক করে এই সব ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরন আদায়ের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আর আগামীতে সরকারি কোন বরাদ্দ এলে এই সব ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে প্রদান করে চেষ্টা করবো তাদের অপূরনীয় লোকসান কিছুটা পূরণের জন্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, সরেজমিনে আমরা কৃষকের জমির ধান পরিদর্শন করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করবো।