মঙ্গলবার ● ২ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » পটুয়াখালীর তরমুজ যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে
পটুয়াখালীর তরমুজ যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে
হাসান আলী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: (১৯ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৫মি.) পটুয়াখালীর কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, বাউফল, দশমিনা এলাকার চিত্রই যেন পাল্টে দিয়েছে বাণিজ্যিক ভাবে তরমুজের আবাদ। দিনে দিনে তরমুজ হয়ে উঠেছে রবি মৌসুমে চরাঞ্চলের অন্যতম অর্থকারী ফসল। স্বল্প সময়, কম খরচ এবং ভাল দাম পাওয়ার কারনে এর আবাদ ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলের সর্বত্র। মাত্র কয়েক বছর আগেও রবি মৌসুমে এসব এলাকার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের জমি পতিত পড়ে থাকত। মাটি, পানি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিবছরই বাড়ছে তরমুজ চাষ। বাড়ছে চাষির সংখ্যা। এখানকার এলাকায় উৎপাদিত তরমুজ আকারে বড় হওয়ায় ইতিমধ্যে দেশজুড়ে কুড়িয়েছে সুনাম। ফলে মৌসুমের এসময় তরমুজ ক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের পদচারনায় সরগরম থাকে এখানকার প্রতিটি জনপদ। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে হঠাৎ বৃষ্টি আর পোকার আক্রমনে এবার মাঠের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তবে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাতের ফলে এখনও ক্ষেত থেকে সম্পূর্ণভাবে তরমুজ সংগ্রহ করেনি কৃষকরা। ফল আসার সময় হঠাৎ বৃষ্টিতে পঁচে গেছে অনেক গাছ এবং ফল। দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমন। রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ন্যায্য মুল্য না পাওয়ার অভিযোগ। এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে উন্নত জাতের বীজ প্রদান না করা এবং পরামর্শদানের অসহযোগিতাকে দায়ী করেছেন অনেক চাষী। তবে কৃষি অফিস জানায়, পরামর্শ না নিয়ে বীজ বপন করায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয়টি নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব বাজার নিয়ন্ত্রক অফিসের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তরমুজ চাষিরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন চরাঞ্চলসহ জেলার একাধিক উপজেলা থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে। ঢাকাগামী লঞ্চ, ট্রলার ও ট্রাকযোগে গলাচিপা, কুয়াকাটা, কলাপাড়া এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, ঝিনাইদাহ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৮হাজার ৫০হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে কলাপাড়ার ধানখালী, ধুলাসার, লতাচাপলী, কুয়াকাটা, চরচাপলী, রাঙ্গাবালী সদর, চরমোন্তাজ, কাছিয়াবুনিয়া, গলাচিপার আমখোলা এবং বাউফলের কয়েকটি ইউনিয়নে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। কৃষকদের দাবী, মার্চের প্রথম দিকে টানা চার-পাচ দিনের বৃষ্টিপাতে তরমুজ চাষীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। বৃষ্টিপাত না হলে চলতি বছর তরমুজ ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেত। তবে বিপর্যয়ের ফলে চাষীরা এ বছর দাম ভাল পাচ্ছেন বলে জানান আরৎ মালিকরা।
রাঙ্গাবালীর কাউখালী গ্রামের কৃষক নাশির হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, এবছর ২ একর জমিতে তরমুজের চাষে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তিন ধাপে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। তবে মার্চ মাসের বৃষ্টিপাতের কারনে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তা না হলে আরো ৫০ হাজার টাকা তার বেশি লাভ হত । কিন্তু এ বছর দাম ভাল পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
কলাপাড়ার কুয়াকাটার তরমুজ চাষী মনির সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, এ বছর তিনি ৪ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। বৃষ্টিতে ১ একর জমির তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৩ ধাপে সাড়ে তিন লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। সে ক্ষেত্রে তার এ বছর তরমুজ চাষ থেকে তিন লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে।
গলাচিপার গাব্বুনিয়া গ্রামের দুদা মুন্সি জানান, তারা দুই ভাই ৯ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছন। ৩ লাখ টাকা খরচ করে ৪ ধাপে প্রায় ১২লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। চালিতাবুনিয়ার নাসির সিকাদার জানান, বৃষ্টিতে ক্ষতি না হলে তিনি ১০লাখ টাকার তরমুজ উৎপাদন করতেন। তবে তিনি জানান, কৃষি অফিস তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করলে ফলন আরো ভাল হত।
পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের তরমুজ দেশের সর্বত্র ব্যাপকভাবে সমাদৃত। কৃষকদের সময়োপযোগী পরামর্শ ও উন্নত বীজ সরবারহ করা হলে দক্ষিণাঞ্চলের রবি কৃষিতে ইতিবাচক অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন অনেকেই।