বুধবার ● ৩ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে বিএনপির সভায় হামলা ও ভাংচুর: আহত ১৫
ঝিনাইদহে বিএনপির সভায় হামলা ও ভাংচুর: আহত ১৫
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২০ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.০৭মি.) বিএনপির দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপ, হামলা ও ভাংচুরের মধ্যদিয়ে ৩ মে বুধবার ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভা শেষ হয়েছে।
এ সময় ভাংচুর করা হয়েছে ঝিনাইদহ পৌরসভার ডা. কে আহম্মেদ কমিউনিটি সেন্টার। ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেন, সাহেব আলী, আফাঙ্গীর হোসেন, মহিদুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, রবিউল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী ও মইনুদ্দীন খানসহ ১০থেকে ১৫ জন নেতকর্মী। এদের মধ্যে ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ঝিনাইদহে জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভায় এই ঘটনা ঘটে। সভাস্থলে প্রবেশে বাঁধা ও দাওয়াত না দেওয়ার অজুহাতে বিএনপির এক পক্ষের নেতাকর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। ঝিনাইদহ পৌর বিএনপির সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা অভিযোগ করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শৈলকুপার এড. আসাদুজ্জামান আসাদ ও ঝিনাইদহের মীর রবিউল ইসলাম লাভলুর চক্রান্তে আওয়ামীলীগের সহায়তায় এই হামলা চালানো হয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ করব।
তিনি আরো জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের এই সভা বানচাল করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর রবিউল ইসলাম লাভলু অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে জেলাব্যাপী ক্ষোভ বিরাজ করছে। মুলত দলীয় নেতাদের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ হিসেবে বহিরাগতরা এই হামলা চালিয়েছে। লাভলু বলেন প্রধান অতিথি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের সাথে আমি সভাস্থলে উপস্থিত হলে তাকে ঢুকতে দিলেও আমাকে সভায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
এ সময় শৈলকুপা থেকে আগত জেলা বিএনপির নবাগত সদস্যদেরকেও ঢুকতে দেয়নি। এ নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তৃতীয় পক্ষ হামলা চালিয়ে কমিউনিটি হলের কাচ ভাংচুর করে। এদিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার পর উত্তেজনকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন।
এ ছাড়া সভায় অন্যানের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, মানবাধিকার বিষয় সম্পাদক এড আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক জাসাস নেতা মনির খান, সহ-তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক আমিরুজ্জামান খাম শিমুল, নির্বাহী সদস্য ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, নির্বাহী সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টু, আব্দুল ওহাব, সাবেম এমপি শাহানা রহমান রানী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর রবিউল ইসলাম লাভলু, বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক, জাহিদুজ্জামান মনা, মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, এড এম মজিদ, এড আব্দুল আলীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, এ সরকারের দুঃশাসন বিশ্বের বিখ্যাত স্বৈর শাসকদের অপশাসনকেও হার মানিয়েছে। আজ বিএনপির পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের নামে শতাধীক করে মামলা। খালেদা জিয়া নাকি নিজে গাড়িতে বোমা মেরেছে। তিনি বলেন, হামলা, মিথ্যা মামলা আর হুলিয়া কখনো সৎ রাজনীতির নজীর হতে পারে না। এদেশে আওয়ামীলীগ ভাল কিছুর নজীর স্থাপন করতে পারেনি। তারা পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো বিরোধী পক্ষ দমনে নোংরা ভাবে ব্যবহার করছে।
অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন আরো বলেন, সৎ, দক্ষ, কর্মঠ ও ভাল মানুষকে নেতৃত্বে আনতে হবে। যারা পকেট কমিটি করবে তাদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না। তারা হাতে ক্ষমতা পেলে গুন্ডপান্ড তৈরী করবে। তিনি বলেন দেশের মানুষের কল্যান ও গনতন্ত্রকে মুক্ত করতে বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপি মাঠে আছে, আন্দোলনেও আছে। তিনি বলেন, সরকারের দোসর ও লেলিয়ে দেওয়া সংস্থাগুলো বিএনপিকে ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি বলে আওয়ামীলীগের কোন ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন আরো বলেন, দেশের মানুষকে শান্তি দিতে ও বিপন্ন গনতন্ত্র রক্ষায় দেশনেত্রী বেগম খালদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই নিজেদের মধ্যে সংঘাত তৈরী করা যাবে না। আজ যারা বিএনপি হয়ে বিএনপির উপর হামলা করছে তাদের অবস্থান হবে জাহান্নামে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান বলেন, বিএনপির হারানো কিছুই নেই।
এই সরকার হামলা, মামলা গুম করে সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে। বিএনপি কর্মীরা বাড়ি ঘুমাতে পারে না। তাই ঝড় ঝঞ্জার মধ্যে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এই হামলার বিচার দাবী করে বলেন, ন্যায় বিচার না পেলে জেলা বিএনপির আর কোন সভা করা সম্ভব হবে না।