বুধবার ● ৩ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » ৫৭ ধারা থাকছে না - আইন মন্ত্রী : বনপা’র অভিনন্দন
৫৭ ধারা থাকছে না - আইন মন্ত্রী : বনপা’র অভিনন্দন
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম :: (২০ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.২০মি.) বিজয় নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এর সম্পাদক, বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন (বনপা)’র সভাপতি শামসুল আলম স্বপন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারা নিয়ে নিয়ে জননেত্রী সমীপে : আপনি না থাকলে আমাদের কি হবে ? শিরোনামের লিখাটির স্বার্থকতা পাওয়া গেছে, গত কাল ২ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা থাকছে না”, মন্ত্রীর বক্ত্যবের পর বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা আশ্বস্থ হয়েছেন।
সাংবাদিক শামসুল আলম স্বপন এর লিখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো : “জীবন এবং ক্ষমতা এ দুটিই ক্ষণস্থায়ী । আপনি কতদিন বেঁচে থাকবেন এবং ক্ষমতায় থাকবেন আল্লাহ মালুম । আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যেমন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, আপনি তেমন উন্নত বাংলাদেশ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার। আমরা যারা অনলাইন সাংবাদিকতায় নিবেদিত নি:সন্দেহে তারা আপনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একান্ত সারথী। আপনি ক্ষমতায় না থাকলে এবং বেঁচে না থাকলে ( কুল্লু নাফসিন যাইকাতুল মওয়ুত) আমার মত আপনার যারা ভক্ত এবং অনুসারী তাদের কি হবে ? এটা আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন কিনা আমি জানি না ।
আপনার নিশ্চয় মনে আছে ডিটেনশন আইন তৈরী করা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে । বিরোধী দল এই আইনকে কালাকানুন বলে আখ্যায়িত করেছিল । জাতির জনকের হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় বসে ছিলেন তারা কিন্তু এই আইনটি আপনার দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশী ব্যবহার করেছিলেন। আপনিও বাধ্য হয়ে এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন । শেষ পর্যন্ত মেয়াদ শেষে ‘৭৪’র সেই আইনটি বাতিল হয়ে যায়।
আপনার সরকারের আমলে যখন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা বাক-স্বাধীনতা পূর্ণ ভাবে ভোগ করছে তখনই সাংবাদিকদের মাথার উপর ঝুলিয়ে দেয়া হলো তথ্য-প্রযুক্তি আইনে “৫৭” ধারার খড়গ। এই আইনটি প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় না । কারণ প্রচলিত আইনেই যথেষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে। ‘৫৭’ ধারা বলবৎ হওয়ার সাথে সাথে আপনার সব চেয়ে ভক্ত সাংবাদিক যিনি লিখে ছিলেন ‘ শেখ হাসিনা আমার বোন’ সেই সাংবাদিক প্রবীর শিকদার প্রথম পড়লেন এই আইনের যাতা কলে । আপনার হস্তক্ষেপে তিনি রক্ষা পেলেন অবশেষে।
অনলাইন সংবাদ পত্রের মালিকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন (বনপা)’র সকল সদস্য আপনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অগ্রসৈনিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত লাগায় সুযোগ সন্ধানীরা এই সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্মল বড়ুয়া মিলন,সাধারন সম্পাদক রোকমুনুর জামান রনি,মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জুঁই চাকমা এবং কক্সবাজার জেলা বনপা’র সাংগঠনিক সম্পাদক সরওয়ার আলমসহ ইতোমধ্যে দেশের অনেক সাংবাদিককে ‘৫৭’ধারায় মামলা দিয়ে চরম হয়রানি করা হয়েছে।
এবার ভাবুন আপনার দল ক্ষমতায় নেই । এই আইন যদি বলবৎ থাকে তখন কি হবে আপনার ভক্ত সাংবাদিকদের ? তারা কি সেদিন পারবে আপনার দলের পক্ষে শক্ত হাতে কলম ধরতে ?
সেদিন তো ক্ষমতাসীনরা সাংবাদিকদের পিষে দিবে ‘৫৭’ ধারার যাতাকলে । আপনার সরকারের সফল তথ্যমন্ত্রী আমার পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই হাসানুল হক ইনু সহ আপনার দলের নেতা-কর্মীরা ‘৫৭’ধারার খড়গ থেকে সেদিন কি রক্ষা পাবেন ?
আপনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আপনার একনিষ্ঠ ভক্ত পিআইবি’র মহা-পরিচালক শাহ আলমগীর, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল কিম্বা শাবান মাহমুদসহ দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিকরা কি এই আইনকে সমর্থন করেন ? সাংবাদিক নেতারা যদি এই আইনকে সমর্থন না করেন তা হলে এই আইনের প্রয়োজন কি ?
আমার বিশ্বাস আপনার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আস্থা থাকার কারনেই কিন্তু সাংবাদিকরা এই আইন বাতিলের জন্য বড় ধরণের কোন আন্দোলনের ডাক দেয়নি । তার মানে এই নয় যে সাংবাদিকরা এই আইনকে মেনে নিয়েছে। সাংবাদিক প্রবীর শিকদার গ্রেফতার হওয়ার পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চরম বিক্ষোভ হয়েছিল এই আইনের বিরুদ্ধে । আপনি তখন দেশের বাইরে।
আপনার ভক্ত সাংবাদিকরা ক্ষতি গ্রস্থ হোক নিশ্চয় আপনি চান না। তাই শ্রদ্ধাবনত ভাবে আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ সাংবাদিকদের উপর থেকে তুলে নিন ‘৫৭’ ধারার খড়গ। সাংবাাদিকরা যেন চির দিন আপনাকে স্মরণ করতে পারে শ্রদ্ধার সাথে এই মিনতি টুকু করবো আপনার কাছে।”
সর্বশেষ ৫৭ ধারায় অনলাইন মিডিয়া “নতুন সময় ডটকম” এর নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ রাজু’র বিরুদ্ধে মামলা করে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সেদিনই তাকে গ্রেপ্তার করেন।
সংবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলায় গ্রেপ্তার নতুন সময় ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ রাজুর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
২ মে সোমবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম এ কে এম মঈন উদ্দিন সিদ্দিকী রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) আলী হোসেন আহমেদ রাজুকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে এবং ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না তা জানার জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
অপরদিকে আহমেদ রাজুর আইনজীবী মনিরুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের শুনানি করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
৩ মে বুধবার দেশে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করা হয়েছে। কিন্তু অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা মুক্ত নন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক আরো বলেছেন, নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ আইনে ৫৭ ধারার বিষয়ে পরিষ্কার করা হবে এবং বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার যে কোন ইচ্ছে বর্তমান সরকারের নেই তা এই আইনে প্রমাণ করে দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের প্রধান কলম সৈনিক হচ্ছেন অনলাইন মিডিয়া গনমাধ্যম সংবাদ কর্মীরা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল মালিক বা প্রকাশকরা ।
যারা বছরের পর বছর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বার্থে টিকিয়ে রেখেছেন। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে ৫৭ ধারায় মামলা ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার কারনে দেশের অনেক নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে নিউজ পোর্টাল মালিকরা। আবার কোন কোন নিউজ পোর্টাল মালিকরা ৫৭ ধারা’র মামলা থেকে নিজেদের বাচাঁতে প্রভাবশালী ব্যক্তি বিশেষের দুর্নীতি ও বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত রয়েছেন। গত জানুয়ারি ২০১৭ থেকে এপ্রিল ২০১৭ মাত্র চার মাসে কেউ কেউ তাদের অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে।
৫৭ ধারায় মামলা কারনে অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলির যদি এই চিত্র হয় তাহলে আগামী এক বছরের ভিতর হাতে গুনা কয়েকটি কর্পোরেট অনলাইন নিউজ পোর্টাল ছাড়া বাংলাদেশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ তাদের সামনে খোলা থাকবেনা।
অনলাইন মিডিয়া এখন দেশের অনেক বড় একটি শিল্প। অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলির এ অবস্থার হাত থেকে একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের নীতিনির্ধারকরা বাঁচাতে পারেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারা’র যথেষ্ট অপব্যবহার হয়েছে এবং হচ্ছে । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারা’র প্রয়োগ অার না।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা থাকছে না। এ ঘোষনার পর শেষ পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারা’র আইনটি বাতিল করা হচ্ছে জেনে আশায় বুক বেঁধেছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল মালিক ও অনলাইন মিডিয়ার গনমাধ্যম কর্মীরা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারা কারনে বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে, দেশে যখন অনলাইন নিউজ পোর্টাল মালিক ও অনলাইন মিডিয়ার গনমাধ্যম কর্মীদের নাজুক অবস্থা ঠিক সেই সময়ে মহাজোট সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)আইনের ৫৭ ধারা থাকছে না, এমন ঘোষনাকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন (বনপা)।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এর এই ঘোষনার দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন (বনপা)।