বৃহস্পতিবার ● ৪ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে নানা হয়রানী - রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার : দায়ভার কার ?
মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে নানা হয়রানী - রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার : দায়ভার কার ?
অন্তর মাহমুদ, মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি :: (২১ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৪৪ মি.) খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দায়িত্ব গ্রহনের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন ভূমি সংক্রান্ত নামজারী মামলা ক্রয়-বিক্রয় আবেদনের শুনানি, জমাবন্দী নকল উত্তোলন, রেজিষ্ট্রিকৃত ভূমি রেকর্ড সংশোধন জমা খারিজ (নোটিং) করানো, এডিএম কোর্টের তদন্ত, যুগ্ম জেলা আদালতের তদন্ত প্রতিবেদনসহ নানা প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক কাজে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও কোন সুবিধা না পেয়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিন আরও জানা যায়, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার আলোকে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ প্রাপ্তির আবেদনের সাথে প্রত্যেকের রেকর্ডীয় সম্পত্তির মালিকদের আলাদা-আলাদা প্রত্যেক জনের হালসনের জমাবন্দি নকল সংযুক্ত করতে বলার কারণে, স্থায়ী বাসিন্দা সনদের জন্য বহু সাধারন মানুষ বর্তমানে জমাবন্দি নকল পাওয়ার জন্য আবেদন করছে । সকল নিয়ম মেনে আবেদন করলেও সেই জমাবন্দি নকল পাওয়া যেন রীতিমত সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। কারণ নকল আবেদনের জন্য রয়েছে অফিসিয়াল কর্তা (ইউএনও) আদেশকৃত নির্দেশনার ভোগান্তি। নকল প্রাপ্তির আবেদনের ক্ষেত্রে ২শ টাকা ব্যাংকে জমা করতে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট একটি চালান কোর্ডের মাধ্যমে। জমাকৃত সেই চালানের মুলকপি আবেদনের সাথে জুড়ে দিতে হয়, যা মাটিরাঙ্গা ছাড়া খাগড়াছড়ির অন্য কোন উপজেলা ভূমি অফিসে এই নিয়মের খবর জানা যায়নি, এই ভোগান্তির জন্য সাধারণ ভোক্তভুগীরা শুধুমাত্র কর্তা (ইউএনও) কে দায়ি করেছেন।
এছাড়াও সরকারী আদেশ অনুযায়ী নামজারী মামলার ক্ষেত্রে ৩৩ দিনের মধ্যে একটি নামজারী মামলা নিষ্পত্তি হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও বিগত ২২ নভেম্বর-২০১৬ এর পর থেকে ২৫ এপ্রিল ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় (৬ মাসে) মাত্র ১৫-১৬ টি মামলা (শুনানী) নিষ্পত্তি হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরিত হয়েছে কিনা সন্দেহ রয়েছে । যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাঠানো নামজারী মামলার সংখ্যা। ফলে নামজারী মামলা থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব সরকার আদায় করত সেটা থেকে সরকার সরাসরি বঞ্চিত হচ্ছে। ভূমি রেজিষ্ট্রি কালীন সময়ে নামজারী মামলার অনুকূলে রাজস্ব হিসেবে ভূমির মূল্যের বিপরীতে লাখ প্রতি জেলা পরিষদ ফান্ড আদায় করে ২ দুই হাজার টাকা, জেলা প্রশাসকের ফান্ড আদায় করে পৌরসভাধীন ভূমির ক্ষেত্রে ৩ (তিন) হাজার ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ২ (দুই) হাজার টাকা,আবার পৌরসভার ফান্ড আদায় করে ২ (দুই) হাজার, ইউনিয়ন পরিষদ আদায় করে ১ হাজার টাকা। অন্যদিকে রেকর্ড সংশোধনীর জন্যে ট্রেজারী চালানে দিতে হয় ১১৫০ (এক হাজার একশত পঞ্চাশ ) টাকা। এ সব কারণে নামজারী মামলা ও রেকর্ড সংশোধনীর কাজে স্থবিরতায় সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গার সচেতন মহল মনে করেন, খাগড়াছড়ি জেলার মধ্যে মটিরাঙ্গা উপজেলা সবচেয়ে জনবহুল একটি উপজেলা হওয়া সত্বেও দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতা বিরাজ করছে সরকারী এই জনগুরুত্বপুণ প্রতিষ্ঠানটিতে । নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে তাইন্দং, তবলছড়ি, বড়নালসহ দুর-দুরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ মাটিরাঙ্গা ভুমি অফিসে এসে দিনের পর দিন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। সরকারী কোষাগারের বেতন ও আনুসাঙ্গিক সুবিধা ভোগ করে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও আন্তরিকতার অভাবেই-পশ্চাৎপদ এই জনপদের মানুষ ভূমি সংক্রান্ত কাজের জন্যে চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে তারা মনে করেন। তারা ইউএনও বিএম মশিউর রহমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভারপ্রাপ্ত এর চলমান ভূমি ব্যবস্থাপনার প্রতি প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, নিশ্চয় তিনি কারো পরিকল্পিত উদ্দ্যেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষে সরকারের গুরুত্বপুর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি কে অলস প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। তারা সরেজমিন তদন্ত পূর্বক দ্রুত সরকারের কাছে এই সমস্যা সমাধানের দাবী জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে পৌর আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কারী মো. আবদুর ছাত্তার জানান, তিনি বেশ কয়েকটি নির্ধারিত তারিখে ভূমি কার্যালয়ে উপস্থিত থেকেও তার নামজারী মামলা শুনানি করাতে পারেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কারণে।
এ বিষয়ে মাছ ব্যবসায়ী দুলালের অফিসিয়াল কাজের সহায়তাকারী ও ভুক্তভোগী ব্যক্তি মো. শহীদ মিয়া সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, প্রায় ৬ -৭ মাস মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে ঘুরে ঘুরেও তিনি রেকর্ড সংশোধনী করাতে পারেননি । অফিস সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান ইউএনও বিএম মশিউর রহমান ভূমি সংক্রান্ত অফিসের কোন কাজই করতে চান না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, অল্প কিছুদিন আগে একটি জমাবন্দী নকল উত্তোলন করতে গিয়ে ইউএনও কর্তৃক তিনি হয়রানীর শিকার হয়েছেন । বিষয়টি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলামকে মৌখিকভাবে জানালে জেলা প্রশাসক বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন বলে দাবী করেন।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ আর রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আমাদের জনগনের কাছে এ বিষয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় । বিষয়টি আমি ইউএনও বিএম মশিউর রহমানকে জানালেও তিনি ব্যস্ততার অযুহাতে এড়িয়ে যান। এ সময় ভুমি অফিসের দাপ্তরিক কাজের স্থবিরতায় সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও দাবি করেন।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, প্রথমে মুখ খুলতে চাইলেও পরে তার বক্তব্য প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা ইউএনও বিএম মশিউর রহমান, সিএইচটি মিডিয়া প্রতিবেদককে মুঠোফোনে স্বাক্ষাতকার দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহীর কার্যালয়ে ডেকে পাঠিয়ে পরে তার অফিসে গেলে স্বাক্ষাতকার না দিয়ে কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।