শিরোনাম:
●   লামায় বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রাজধানীতে পিসিপির বিক্ষোভ ●   নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ●   আত্রাইয়ে হলুদ বর্ণে সেজেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ●   অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি ●   সচিবালয়ে আগুন ●   মহালছড়িতে আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেফতার ●   প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের রজতজয়ন্তী উৎসব ●   শাহরাস্তিতে আন্তর্জাতিক ক্বেরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত ●   পানছড়ি ৩ বিজিবি’র পক্ষ থেকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সাথে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় ●   ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তরুণের আত্মহত্যা ●   দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণের ডাক দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ ●   ভোটকেন্দ্রে শূন্যভোটের মাধ্যমে পার্বত্যবাসী ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে ●   ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা নানা সুরতে আবির্ভুত হওয়ার পাঁয়তারা করছে ●   কাউখালীতে উইভ এনজিওর অবহিতকরণ সভা ●   খাগড়াছড়িতে ইত্তেফাকের ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ●   বেগম রোকেয়া এ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক সাব্বির ●   বারইয়ারহাট ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক,সম্পাদক ইউসুফ ●   দীঘিনালায় গলায় ফাঁস দেয়া যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ●   ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে মা নিহত, ছেলে আহত ●   পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা বোর্ড ২য় সভা অনুষ্ঠিত ●   রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত ●   মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন ●   মানিকছড়িতে ট্রাকের নীচে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু ●   আল ফালাহ ইসলামি একাডেমীর সবক প্রদান অনুষ্ঠান ●   ১১ দফা অবহিতকরণে আত্রাইয়ে আলোচনা সভা ●   পার্বতীপুর রেলওয়ে ইর্য়াডের আম গাছে যুবকের আত্মহত্যা ●   রংধনু ক্লাবের কার্যকরী পরিষদ গঠিত ●   কাউখালী তাহেরিয়া রশিদা সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার সভা ●   পাকুন্দিয়ায় ইয়ুথ পিস অ্যাম্বাসেডর গ্রুপ গঠিত ●   বৈরী আবহাওয়ায় ও শীতের তীব্রতায় বাড়ছে কৃষকের দুশ্চিন্তা
রাঙামাটি, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
বৃহস্পতিবার ● ৪ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » পাবনা » গ্রামীন জনপদের শিল্প,সাহিত্য,নাটক,যাত্রা ও সঙ্গীতের সে কাল এ কাল
প্রথম পাতা » পাবনা » গ্রামীন জনপদের শিল্প,সাহিত্য,নাটক,যাত্রা ও সঙ্গীতের সে কাল এ কাল
বৃহস্পতিবার ● ৪ মে ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

গ্রামীন জনপদের শিল্প,সাহিত্য,নাটক,যাত্রা ও সঙ্গীতের সে কাল এ কাল

---ঈশ্বরদী প্রতিনিধি :: পদ্মা নদী বেষ্টিত ঈশ্বরদী উপজেলা। নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার সীমানা থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম -দক্ষিণে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা। ঈশ্বরদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদী। সে সময় নদীর ঢেউয়ের গর্জণে এলাকার মানুষের ঘুম ভাঙ্গতো। যদিও পদ্মার সে চেহারা এখন শুধুই স্মৃতি। বিশাল এলাকা জুরে সবুজ ফসলের মাঠ আর ধুধু বালুচর। পদ্মার সাঁড়া অংশে ছিল ঐতিহাসিক সাঁড়া ঘাট। এ ঘাটে বিদেশী জাহাজ,স্টিমারসহ নদী কেন্দ্রিক নানা যানবাহণ ভিড়তো। দেশী বিদেশীদেরও আসা যাওয়া ছিল চোখে পড়ার মত। নানা দেশীয় সাংস্কৃতির বাতাস লাগতো স্থানীয়দের গায়ে। কিন্তু সে বিষয়ে বুঝা ও চর্চার মানসিকতা ছিলনা কারও। সে সময় এক টাকায় এক ডজন ইলিশ মাছ বিক্রি হতো। ইলিশের গন্ধে ভারি হয়ে থাকতো গ্রাম,পাড়া-মহল্লা।সে সময় যেসব উৎসব হতো তার প্রত্যেকটিতেই ইলিশ মাছ চালের ছাতু,ঢিমে ঘুড়,গুড়ের কাগড়াই ছিল আকর্ষনীয় খাবার । সাঁড়া ঘাটের লাঠি খেলায় ছিল এলাকার আকর্ষনীয় খেলা।সাঁড়া ঘাটের নির্ধারিত স্থানে বড় আয়োজনে খেলা হতো। ভীড় হতো প্রচুর মানুষের। প্রতি বছর নদী এলাকায় বড় মাপের পূঁজা পর্বণের মেলা হতো। নানা সাজে মানুষ পূঁজা ডুবানো দেখতে ও মেলা ঘুড়তে যেত। শিল্প,সাহিত্য,নাটক,সঙ্গীতের লেশমাত্র চর্চা ছিলনা। হিন্দু পাড়াগুলোতে মাঝেমধ্যে বিয়ে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মান্ধাতার আমলের বাদ্যযন্ত্রের সুর শোনা যেত। হিন্দু অধ্যুসিত এলাকা হওয়ার কারণে ১৯০০ সালের দিকে সাঁড়া এলাকায় মৃত শিল্প ও কাঠ দিয়ে তৈরী চাকা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়।

অনুন্নত জীবন যাত্রা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিল্প,সাহিত্য,নাটক ও সঙ্গীতের বিকাশ না ঘটলেও ক্রমান্বয়ে চাকা ও মৃত শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। এক সময় সাঁড়ার আড়ামবাড়িয়া দেশের মধ্যে চাকা শিল্পের জন্য বিখ্যাত হয়ে এলাকার খ্যাতি অর্জণ করে। নদী পথে বড় বড় নৌকা যোগে চাকা দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও পাঠানো হতো। একইভাবে মাটির তৈরী আকর্ষণীয় মৃত শিল্পও ছড়িয়ে পড়ে দেশ বিদেশে। কপি বাতির যুগ থাকায় সন্ধ্যা হলেই মানুষ ঘরমুখো হতো। জীবযন্তুর ভয়ে আতঙ্কিত থাকতো প্রতিটি পরিবারের মানুষ। শিল্প,সাহিত্য,নাটক সম্পর্কে ধারনাও যেমন ছিলনা,তেমনি মহিলারা ছিল পর্দানশীন।

তাছাড়া সে সময় ঈশ্বরদীর বেশীর ভাগ এলাকায় জঙ্গল ছিল। দিনের বেলায় রাস্তায় চলতে মানুষের ভয়ে গা ছম ছম করতো। দিনের বেলাতেই রাস্তায় বিভিন্ন রকমের বাঘ,ভল্লুক,সাপ,বাঘদাসা,সজারুসহ নানান জাতের বণ্য প্রাণী শুয়ে থাকতো ও ঘুরে বেড়াতো। এমনকি মানুষ না পেয়ে অনেক সময় বাঘ বাড়িতে ঢুকে চোখের পলকে পোষা কুকুর ধরে খেতো। অধ্যাপক মোহাম্মদ হবীবুল্লাহ্র বাড়ির কুকুর গুলোও বাঘে খেয়ে শেষ করে। বিষয়টি ভাবতেও অবাক লাগে! এমন অনেক লোম হর্ষক ঘটনা রয়েছে যে, একদিন পাকশীর বাঘইল এলাকায়(বর্তমান ইপিজেড এলাকা) কোন একদিন সকালে স্থানীয় বাঁশ বাগানে পথচারী কাদের মল্লিক ঘুমন্ত অজগরের নিশ্বাসের শব্দ শুনে লোক জড়ো করেন। জড়ো হওয়া লোকজন বুঝতে পারেন বৃষ্টির রাতে সাপটি পেট ভরে খাওয়ার পর বাঁশ বাগানে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। পড়ে সাপটি মারার পর তৎকালিন সাঁড়া থানার ওসি অজগরটিকে তার লোকজন দিয়ে লম্বা বাঁশের সাথে বেঁধে নিয়ে যান থানাতে চামড়া ছাড়ানোর জন্য। মুচিদের ৫ টাকা দিয়ে চামড়া ছাড়িয়ে টেনারীতে পাঠানো হয়। এর পর আর কোন অজগর সাপের দেখা মেলেনি।
যখন হাজারো লোমহর্ষক ঘটনাকে নিত্যদিনের সাথী হিসাবে নিয়ে অদক্ষ,অশিক্ষিত ও বেশীরভাগ মুর্খ মানুষগুলো বসবাস করতো,তখন ঈশ্বরদী অঞ্চলে নাটক,সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চার কথা ভাবাও অকল্পনীয় ছিল। ভাবারমত লোকও ছিলনা। তবে দু’চারজন লোকছিল যারা দু’একটি কবিতা ও গল্প লেখার চেষ্টা করতেন। তারা যা লিখতেন,তা কবিতা বা গল্প কোনটাই হতোনা। তাদের অবস্থা দেখে বীজ অঙ্কুরোদগমনের পূর্ব মুহুর্তের মত মনে হতো। ভাবটা এমন ছিল তারা একটা কিছু করছে বা করতে যাচ্ছেন। এক সময় সাহিত্য চর্চার উদ্যোগ নেন আকবর আলী বিএ।সাহিত্য পত্রিকায় লেখা চাওয়া হয়। কিন্তু লেখা না পাওয়ায় সে পত্রিকাটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। সে উদ্যোগও ভেস্তে যায় সে সময়। কোন শিক্ষকদের গান লিখতে দেখা যায়নি। যা দু’একজন লিখতেন তাও নিম্ন মানের।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর ১৯৪৯ সালে পাকশী এলাকায় নাটক চর্চার বীজ বপন করা হয়। এ সময় পাকশী এলাকায় হিন্দু বাবুদের বসবাস ছিল। রেলের বড় বাবু ও গোলাপ নগরের প্রভাবশালী ব্যক্তি হারেজ উদ্দিন মুন্সী হাসেম আলী মিলনায়তন কেন্দ্রিক প্রথম নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালিন রেল কর্মকর্তারাও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেন। সে থেকেই এ অঞ্চলে নাট্যচর্চা শুরু হয়। সে সময় একটি নাটক মঞ্চায়ন করতে রেহার্সেল দিতে সময় লাগত এক থেকে দেড় মাস। যোগান দেওয়ার কেউ ছিলনা। হারেজ মুন্সির সহযোগি হিসাবে মজিবর রহমান রবি, বাজাজ সরকার, ইয়ার বক্স, বারী সরদার ও মোঃ ওয়াশিক, ক্যাপ্টেইন একিউএম আব্দুর রশিদ, ওকবা, তোফাজ্জল হোসেন তোফা, আতাউর রহমান ডিলু ও কালিপদ কর্মকার, নিয়ামত আলী মাস্টার,জয়নুল আবেদীন ও ফল বিক্রেতা আব্দুল, জয়নাল হোটেলওয়ালা কাজ করতেন। দর্শক ছিল প্রচুর।

মেয়ে দর্শক ছিল চোখে ধরারমত । বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষে হলরুম উপচে পড়তো। মেয়েদের জন্য দোতলায় গ্যালারী ছিল । মজার বিষয় ছিল মেয়ে চরিত্রে কেউ অভিনয় করতোনা। নাটক চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা ছিলনা তাদের। অভিনয় করলে মেয়েদের বিয়ে হবেনা এমন প্রচারও ছিল সমাজে। তাছাড়া সে সময় মেয়েরা পর্দানশীন থাকায় বাধ্য হয়েই হারেজ উদ্দিন মুন্সী তার নাট্য গোষ্ঠির সদস্যদের মধ্যে থেকে মজিবর রহমান রবিকে প্রথম নাটকে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করান। এর পর দত্ত বাবু, নুর আলী গার্ড,আমজাদ মাস্টার,আনু ও আব্দুল খালেককে দিয়েও নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করানো হয়। এরা প্রত্যেকেই পুরুষ হলেও নাটকে অভিনয় করার সময় বড় বড় চুল লাগিয়ে ও কন্ঠ পরিবর্তণ করে ডায়ালগ থ্রো করতেন। মেয়েলি কন্ঠে অভিনয় শুনে দর্শকরা মুগ্ধ হতেন। বিশেষ করে মেয়ে দর্শকরা। এ সব নাটকে মেকআপ ম্যানদের কেরামতি ছিল অন্যরকম। যদিও বর্তমান সময়ের ধারে পাশেও মনে করা যায়না। সুস্থ সমাজ গঠনে এবং যুব সম্প্রদায়কে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হারেজ উদ্দিন মুন্সিরা নাটক চর্চা করতেন। সমাজের প্রতি তারা এতটাই দায়িত্বশীল ছিলেন যে, যখন মেয়ে চরিত্রে কাজ করতে কেউ রাজী হতোনা তখন তারা গোপনে নিসিদ্ধ পল্লী থেকে মেয়ে এনে এবং রাজশাহী থেকে সম্ভবত অঞ্জলীকে এনে নাটক মঞ্চায়ন করতেন। তবে কাউকে জানতে দেওয়া হতোনা নিসিদ্ধ পল্লীর মেয়ের পরিচয়। নাটকে অভিনয় দেখে খুলনার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রাজশাহীর ঐ অঞ্জলীকে বিয়ে করায় একটি মাত্র নারী চরিত্রও হারিয়ে যায় । বিপাকে পড়েন মুন্সিরা ।
গার্লস স্কুলের দিমিনির জামাই করবাবুও শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন। তিনি গানও গাইতেন। এ সময় বাদল নামের আরও একজন রাজশাহীর যুবক পাকশীতে এসে নৃত্য করতেন। একমাত্র প্রমটার হিসাবে চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপিটের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক ড. শামসুল হক প্রমটারের কাজ করতেন। হারেজ উদ্দিন মুন্সির সময় প্রায় ৪০ টির মত নাটক মঞ্চায়ন করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি গল্পই কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল। হায়দার আলী ও তিপান্তর নামের নাটক খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।

এ গুলোর পরিচালক ছিলেন মজিবর রহমান রবি। তিনি প্রায় তিন শতাধিক নাটক মঞ্চায়ন করেছেন ঈশ্বরদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে । শেষ বয়েসে এসে তিনি চ্যানের আই থেকে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও বাংলা ছবিতে পুরস্কার পেয়েছেন। নৃত্যচর্চা ছিলনা বললেই চলে। তবে নৃত্যে প্রদীপ জ্বালাতেন একমাত্র মুসলিম পরিবারের ও সফুরা ফার্মেসীর মেয়ে রমলা। তিনি খুব ভাল নৃত্য করতেন।
তখন পাকশীর রাজা ছিলেন,পদোন ঘোষ। পাকশী ছিল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। পাকশীর মাঠে প্রচুর ঘাস হতো। ঘাস কাটার জন্য মাঠ কিনতো মাড়োয়াড়িরা। তখন পাকশীর আকর্ষণ ছিল নাটক,খেলাধুলা আর গানের অনুষ্ঠান। প্রতিদিন বিকাল ৪ টার মধ্যে এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য্ মাঠের রাখালরা বাড়িতে গরু রেখে ছুটে আসতো পাকশীতে। ইসাহক ও এডওয়ার্ড শিল্ডের খেলা হতো। খুব আকর্ষণ ছিল খেলায়। পাকশীর খেলোয়াড়রা পাকিস্তানে খেলতে যেতেন। শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক মোহম্মদ হবীবুল্লাহ্র মতে, পাকশীতে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে কালিন্দি নাটক ছিল শ্রেষ্ঠ। এটি হাসেম আলী মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয়েছিল। এ মিলনায়তনে রেলের অফিসার ও বাবুদের জন্য গ্যালারীর প্রথম শারীর আসন বরাদ্দ রাখা হতো। সে সময় নারী পুরুষ সকলের মধ্যেই আন্তরিকতা ছিল। খুব সহজেই মানুষ আন্তরিকতার হাত বাড়িয়ে দিত। এখন সে বিষয়ে মানুষ আগ্রহীন। সকল স্থানেই মানুষ আত্মকেন্দ্রিক চিন্তায় ব্যস্ত থাকে । শিল্প-সাহিত্য নাটক,সঙ্গীত চর্চার মাধ্যমে যে কোন এলাকার সুস্থ সমাজ গঠন ও যুব সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করা সহজ।
বর্তমান দেশের টিভি চ্যানেল ও চলচ্চিত্রের শক্তিশালী অভিনেতা তোফাজ্জল হোসেন হাসান ও আমিরুল হক চৌধুরীও এই গোষ্ঠির সদস্য ছিলেন এবং তার নাট্য গুরু ছিলেন মোঃ ওয়াশিক। তাকে প্রথম মঞ্চে উঠান তৎকালিন পরিচালক ও প্রথম নারী চরিত্রের অভিনেতা মজিবর রহমান রবি। সঙ্গীত চর্চার অবস্থাও ছিল জাকজমকপূর্ণ। মাঝেমধ্যে আব্বাস উদ্দিনকে আনা হতো গান শোনানোর জন্য। সে সময় তবলা বাদক পাওয়া যেতনা বলে অনুষ্ঠানও ভাল হতোনা। তারপরও গানের অনুষ্ঠান লেগেই থাকতো। স্কুল কলেজের মেয়েরাও গানে অংশ নিত। স্কুলের ছাত্রী থাকা কালিন সময়ে হাজেরা খাতুন খুব ভাল গান গাইতেন। প্রত্যেক অনুষ্ঠানে দর্শকও হতো প্রচুর। স্কুলে স্কুলেও ছেলেরা নাটক চর্চায় অভ্যস্ত ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জুনিয়রদেরও আধিপত্য শুরু হয়। তারাও আগ্রহী হয়ে নাটক চর্চা শুরু করেন। হারেজ উদ্দিন মুন্সির মৃত্যু হলে ১৯৫১ সালের পর থেকে স্বাধীনতা পূর্ব পর্যন্ত মরহুম ইউসুব আলী চেয়ারম্যান এ অঞ্চলে নাটক চর্চার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। একই সময়ে মরহুম মোহাম্মদ আলী সরদার, পান্না সরদার,আলী খানসহ বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতি মনাব্যক্তিত্ব নাটক , সাংস্কৃতি ও খেলাধুলা চর্চায় নিয়মিত আর্থিক যোগান দিতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এতদঞ্চলের নাটক,সঙ্গীত চর্চায় সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার ,মরহুম আহসান উদ্দিন প্রাং, শহিদুর রহমান বুকু,পিএনএল কালাম, গোলাম মোস্তফা চান্না, মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম, মাহফুজুল ইসলাম রঞ্জু, টুকু, আমজাদ মাস্টার, রাণু, টোকন, পাখি সরদার, হাবিবুল ইসলামসহ নাম নাজানা অনেকেই অংশ নেন।

স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে লক্ষিকুন্ডার শামসুর রহমান শরীফ ডিলু (বর্তমানে ভুমিমন্ত্রী) ও দাশুড়িয়ার শফি উদ্দিন ,জফির উদ্দিন মালিথার দু’টি পৃথক যাত্রা দল ছিল। তাদের দু’গ্রুপের মধ্যে অভিনয়ের প্রতিযোগিতা হতো। তারা সুস্থ সমাজ গঠনে ও যুব সম্প্রদায়কে সাংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইউসুব আলীর দায়িত্ব নেবার বেশ কয়েক বছর পর থেকে ফুরফরা শরীফের পীরের আগমনের পর ৪/৫ টি নাট্যদলের জন্ম হয়। বাবুদের অংশ গ্রহন বন্ধ হয়। কেউই আর্থিক জোগান ঠিকমত দিতে না পারায় ক্রমান্বয়ে নাটক ও গানচর্চা কমতে থাকে। দর্শকও হারিয়ে যায়।কিন্তু ক্ষেদ থেকে যায় অনেকের মধ্যে।
বর্তমানে ঈশ্বরদী অঞ্চলে মৃত ও চাকা শিল্প নিভু নিভু অবস্থায় চললেও যাত্রা শিল্প বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সাহিত্য,নাটক ও সাংস্কৃতি চর্চা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈশ্বরদীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট বড় সাংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র রয়েছে ২৮টি। অতীতের নাটক ,সঙ্গীত চর্চার ধারাবাহিকতায় ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে ঈশ্বরদীর গ্রামীন জনপদ। সাহিত্য, নাটক ও সঙ্গীতে অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে অবস্থান করে নিয়েছেন। অনেকেই মাঝপথে রয়েছেন। যারা আগামিতে জাতীয় পর্যায়ে অবস্থান করে শিল্প, সাহিত্য, নাটক, যাত্রা ও সঙ্গীতে চারণ লালনভুমি ঈশ্বরদীর গ্রামীন জনপদকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে বলে অনেকেরই ধারণা। বর্তমান সময়ে যারা ঈশ্বরদীর নাটক, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতি নিয়ে ভাবেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক উদয় নাথ লাহিড়ী, অধ্যাপক আবুল কালাম, এসএম রাজা, এ্যাড.কামাল হোসেন, টিএপান্না, জহুরুল হক ,ইউনুস আলী টিটি, মিজানুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, বিজয়সহ অনেকেই।

তবে এদের মধ্যে টিএ পান্না যে অন্যতম তা তিনি তার বাস্তব মুখি ও গটন মুলক কাজের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরদীসহ দেশবাসীকে নানাভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

তিনি ২০০৭ সালে ঈশ্বরদীতে ঐতিহ্যবাহী সপ্তক সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ অঙ্গনে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। নিভু নিভু অনেক প্রতিষ্ঠান জেগে উঠে। ২০১০ সালে জাতীয় পর্যায়ের মান সম্পন্ন একাধিক গুণীজন সংবর্ধণা অনুষ্ঠান করে ঈশ্বরদীবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন। দেশের প্রথম তথ্য সচিব ও ভাষা সৈনিক বাহাউদ্দিন চৌধুরী, এটিএন বাংলার প্রধান উপদেষ্টা কবি সাইফুল বারী,লালন শাহ সেতুর ডেপুটি কণসালটেন্ট প্রকৌশলী মেসের আলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মহিলা উদ্যোক্তা কবি সোহানী হোসাইনসহ ৫০ জনকে গুনীজন ও ৫ জনকে রতœগর্ভা মা হিসাবে সম্মাননা দেন। ৬০ কৃতি শিক্ষার্থীকে নগদ ৬০ হাজার টাকা বৃত্তি দিয়েছেন। এসবের পেছনে ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি,সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার, কবি সোহানী হোসাইন ও গণ পরিষদ সদস্য হাজি হাসেম,ইউএনও আবু বক্কর সিদ্দিক,জাকির হোসেন,এসি ল্যান্ড সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। একই সাথে টি এ পান্না কক্সবাজারে একটি বাংলা ছায়া ছবির অভিনয় করতে গিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে ঈশ্বরদী ও পাকশীর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিনের চেষ্টা বাস্তবে রুপ দিয়েছেন। তার চেষ্টা ছিল এসব এলাকাকে শ্যুটিং জোন হিসাবে কাজে লাগানো। এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজে পুঁজি বিনিয়োগ করে ছয়টি নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার করেছেন এবং বিভিন্ন নির্মাতাদের ঈশ্বরদী পাকশী এলাকায় শ্যুটিং করতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।ঈশ্বরদী-পাকশীকে দেশের অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসাবে নির্মাতা ও শিল্পীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি নাটক নির্মাণ করে সুনামও অর্জন করেছেন। এ ক্ষেত্রে সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম,মিসেস সেলিনা ইসলাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ হবীবুল ইসলাম ,হাবিবুল ইসলাম চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন নাট্য ব্যক্তিত্বের সহযোগিতা করেছেন। এ কারণেই গত কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে শ্যুটিং কাজ বেড়েছে।তবে চলতি বছরে নির্মাতাদের আগমন ও শ্যুটিংয়ের কাজ অনেক গুন বেড়েছে। এখনও এলাকায় ২/৩ ছবি ও নাটকের নির্মান কাজ চলছে। অর্থাৎ শ্যুটিংকে ঘিরে এলাকায় নির্মাতারা একদিকে লাখ লাখ টাকা নানাভাবে খরচ করছেন। এতে এলাকার মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হচ্ছে।অন্যদিকে এলাকার পরিচিতিও ঢাকাসহ দেশ বিদেশে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে। বিদেশে অবস্থানকারীরাও ঘরে বসে ঈশ্বরদী পাকশীসহ বাংলাদেশকে নতুন করে দেখতে ও জানতে পারছেন।

এর বাইরেও টিএ পান্না ছয়টিরমত টেলিভিশন নাটক নির্মাণ, প্রযোজনা,গল্প লেখা, অভিনয় করেছেন এবং স্থানীয় অনেক নাট্য শিল্পীকে টিভি নাটকে অভিনয় করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সহযোগিতা করে চলেছেন বহিরাগত নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীদের ,যারা এ এলাকায় নির্মাণ কাজে এসেছেন ও আসবেন। টিএ পান্নার এ ভুমিকা সাম্প্রতিক সময়ে ঈশ্বরদীর শিল্প, সাহিত্য,সঙ্গীত ও নাট্য জগতের একটি বিরল দৃষ্টান্ত। তার নির্মিত ও সদ্য বিটিভিতে প্রচারিত নাটক ঠসা সমাচার দর্শক নন্দিত হয়েছে। কিন্তু হারেজ উদ্দিন মুন্সীর সময়ের মত নাটক চর্চাসহ সকল বিষয়েই শিল্পীসহ সকল স্তরের মানুষের মধ্যে আন্তরিকতার ঘার্তি রয়েছে বলে সকল ক্ষেত্রে খুব সহজেই অনুভব করা যায়। এ বিষয়ে সবখানে কমার্শিল ভাব বিরাজ করছে বলে নির্মাতা,অভিনেতা ও কলাকুশলীদের কেউ কেউ মনে করছেন। সত্তর বছর বয়সী সাহিত্যিক,গল্পকার,ছড়াকার, শিক্ষাজীবি ও অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ৭ সন্তানের গর্বিত পিতা মোহম্মদ হবীবুল্লাহ্, তাঁর সহধর্মিনী হাজেরা খাতুন, তৎকালিন পরিচালক ও নাট্যাভিনেতা মজিবর রহমান রবি ,মোঃ ওয়াশিকসহ কয়েকজন প্রবীন সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকের দীর্ঘ সাক্ষাতকার ও স্মৃতিচারণে বর্তমান সময়ের নাট্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীদের মতে, ঈশ্বরদীর গ্রামীন জনপদের অতীত ও বর্তমান শিল্প,সাহিত্য,নাটক,যাত্রা ও সঙ্গীত চর্চার বাস্তব অবস্থার এসব কাহিণী বেরিয়ে এসেছে। বর্তমান প্রজন্মকে সুস্থভাবে গড়ে তুলতে,মাদকমুক্ত সমাজ গঠণে, বাংগালি সাংস্কৃতিকে ধরে রাখতে সমাজের অর্থশালী, প্রভাবশালী, রাজনীতিবিদ ও সুস্থ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

একই সাথে বাণিজ্যিক মনোভাব পরিহার করে সে¦চ্ছাশ্রমের মনোভাব নিয়ে সাংস্কৃতি চর্চায়ও এগিয়ে আসতে হবে।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)