শুক্রবার ● ৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভ্রুণ থেকে বাচ্চা উৎপাদনে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গবেষকদের সাফল্য
ভ্রুণ থেকে বাচ্চা উৎপাদনে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গবেষকদের সাফল্য
ময়মনসিংহ অফিস :: (২২ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.২৮মি.) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এদেশে প্রথমবারের মতো ভ্রুণ থেকে বাচ্চা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন।
গবেষকদের ভ্রুণ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং প্রতিস্থাপন কার্যক্রম পুরোপুরি সফল হওয়ায় এখন গরু ও ভেড়ার ভ্রুণ সংরক্ষণ করে বছরে ৮ থেকে ১০টি বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব হবে ।
২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্ট (হেকেপ) প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগ গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে জাত উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবৎ কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও বহুমাত্রিক কারণে পশু গর্ভধারণের হার এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। তাই স্বল্পতম সময়ে উচ্চগুণ সম্পন্ন অধিক সংখ্যক পশুর বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ওই বিভাগের প্রফেসর ও প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. নাছরিন সুলতানা জুয়েনা এবং প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ড. ফারদা ইয়াসমিন বারী গবেষণা শুরু করেন দেশীয় গবাদিপশুর দুধ ও মাংস উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে জাত উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে । তাদের এ কাজে তিনজন পিএইচডি গবেষক ও বেশ কয়েকজন মাস্টার্স শিক্ষার্থীরাও সহযোগিতা করছেন। দীর্ঘদিনের এ গবেষণায় গত ১ মে সোমাবার রাতে ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের পর একটি ভেড়া দু’টি শাবক জন্ম দিয়েছে যা বাংলাদেশে ভ্রুণ দিয়ে বাচ্চা উৎপাদনে প্রথম সাফল্য।
গবেষকরা জানান, গরু, ভেড়ার ভ্রুণ সংরক্ষণ করে এখন বছরে ৮ থেকে ১০টি বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। গত দেড় বছর ধরে ভেড়ার ভ্রুণ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এ সাফলতা পান তারা। গত সোমবার একটি ভেড়া দু’টি শাবক জন্ম দেয়ার পর শাবক দু’টির নাম দিয়েছেন বাউ-ভি ( আশা ও উৎস) । বাংলাদেশে ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এটিই প্রথম সাফল্য। তারা ৬টি ভেড়ায় ১২টি হিমায়িত ভ্রুণ স্থাপন করেছেন, যা থেকে একটির বাচ্চা প্রসব হল এবং বাকিগুলোরও শিগগিরই বাচ্চা হবে। এছাড়াও এরই মধ্যে গরুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্ভব হয়েছে। এ থেকে শিগগিরই সুস্থ্য এবং মানসম্মত বাছুর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তত্ত্বাবধানে ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাণিজ্যিক খামারেও এ গবেষণা চলছে। এ পদ্ধতিতে মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় ভ্রুণ প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে যা দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে নবদিগন্তের সূচনা করবে।
উন্নত মাতৃদেহে ওভুলেশনের পর তা দেশী জাতের গরু ও ভেড়াতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শতভাগ উন্নতজাতের বাছুর পাওয়া সম্ভব। এছাড়া একজন মাংস উৎপাদনকারী খামারী অধিক মুনাফার জন্য ষাঁড় গরু পছন্দ করে থাকেন। এক্ষেত্রে এভ্রুণ প্রতিস্থাপনের সময় ষাঁড় বাছুর উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একইভাবে দুধ উৎপাদনকারী খামারীর জন্য বকনা বাছুর নিশ্চিতেরও সুযোগ রয়েছে এ পদ্ধতিতে। এছাড়াও দেশের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা খুব কম হওয়ায় খামারীদের লালনপালন ব্যয়ও বেড়ে যায়। খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ পদ্ধতিতে গরু বা ভেড়া গরম হওয়ার সাত দিন পর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করে খামারীদের এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে দেশে উন্নতজাতের বীজ উৎপাদনকারী প্রাণি আমদানি ব্যয়ও কমবে বলে মনে করেন গবেষকরা।
প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ড. ফারদা ইয়াসমিন বারী সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো গবাদি পশুর ভ্রুণ সংরক্ষণ হয়েছে। এতে কৃষকরা প্রয়োজনমতো ভ্রুণ সংগ্রহ করে তা প্রতিস্থাপন করে গবাদি পশুর মানসম্মত কৃত্রিম প্রজনন নিশ্চিত করতে পারবেন। এ লক্ষ্যে স্থায়ী সিমেন ও ভ্রুণ ব্যাংকও তৈরি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. নাছরিন সুলতানা জুয়েনা জানান, সাধারণ নিয়মে প্রতিটি সুস্থ্য গাভী এবং ভেড়া বছরে একটি মাত্র বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় উন্নতজাতের গাভী এবং ভেড়া থেকে সুপার ওভুলেশনের মাধ্যমে বছরে ২৫ থেকে ৩০টি ভ্রুণ উৎপাদন করা সম্ভব।
প্রকল্পের অর্থায়নে রিসার্চ অ্যানিমেল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে উন্নত জাতের গাভী, ষাঁড়, ভেড়ার সিমেন সংগ্রহ করে গবেষণা করা হচ্ছে। ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের ফলে গরু অথবা ভেড়ার বাচ্চা উৎপাদন এবং এর দুধ, মাংস ও চামড়ায় বিপ্লব ঘটবে বলেও তিনি জানান।