সোমবার ● ৮ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রেড ক্রস- রেড ক্রিসেন্ট সর্বত্র সবার জন্য
রেড ক্রস- রেড ক্রিসেন্ট সর্বত্র সবার জন্য
এ.কে.এম.আজরু উদ্দিন সাফ্দার :: (২৪৫ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ২.৫০মি.) আজ ৮ই মে বিশ্ব রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট দিবস। সারা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশ, যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্ব সহকারে দিবসটি উদযাপিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সোসাইটির ৬৮টি ইউনিট বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করছে।
রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন। সারা বিশ্বব্যাপী অবিরতভাবে এর মানবিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যিনি এই আন্দোলনের মহৎ প্রাণ পুরুষ এবং অক্লান্ত পরিশ্রম ও জীবনের সর্বস্ব বিসর্জন দিয়ে এই বিশ্ব আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সেই মহান ব্যক্তি জীন হেনরী ডুনান্ট এর ১৮৯ তম জন্ম বার্ষিকিতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেই বিশ্ব ব্যাপী ৮ মে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ১৯৯ টি দেশে এই দিবস পালন করা হচ্ছে।
রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা মহাত্মা জীন হেনরী ডুনান্ট ১৮২৮ খ্রীষ্টাব্দে ৮ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের রুভার দেইনিতে জন্মগ্রহন করেন। তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক ০৮ মে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এর গুরুত্ব ও গ্রহনযোগ্যতার আলোকে এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছে Everywhere for everyone অর্থাৎ রেড ক্রস- রেড ক্রিসেন্ট সর্বত্র সবার জন্য।
১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রেড ক্রস ১৫৪ বছরেরও অধিককাল যাবৎ বিশ্বব্যাপী আর্তপীড়িত ও দুঃস্থদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ত্রাণ, পুর্নবাসন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম বাস্তবায়নে তদানিন্তন বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি আইসিআরসি ও আই্এফআরসির সহযোগিতায় অনন্য ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বা যে কোন সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ বা বিপন্ন মানুষের পাশে থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তাদের দুর্দশা লাঘবে নিরলস ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আগামী দিনগুলোতেও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
আর্ত মানবতার সেবায় ও কল্যাণে নিয়োজিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সরকারের একটি সহযোগী সংস্থা হিসাবে যে কোন দুর্যোগ ও মানব সংকটে অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের সেবায় সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির আদেশ ২৬/১৯৭৩ এর মাধ্যমে এ জনহিতকর প্রতিষ্ঠানকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রদান করেছিলেন।
দুর্যোগ প্রস্তুতি, দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস ও দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিক জরুরি সাড়া প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা ও উদ্যোগ দেশে ও বহিঃবিশে^ সুখ্যাতি অর্জন করেছে। এদেশে সংঘটিত প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে সরকার, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও স্থানীয় জনগণ যেভাবে একাত্ম হয়ে বিপন্ন মানুষের সেবায় কাজ করছে তা দেশবাসী ও বহিঃর্বিশ্বির কাছে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা মাধ্যমে এ কথাই প্রমানিত হয়েছে যে মানুষের অসহায় মুহূর্তে সকলেই এক অভিন্ন উদ্দেশ্য তথা মানবতার সেবায় ঐক্যবদ্ধ।
এভাবে দুর্যোগের বিভিন্ন পর্যায়ে যার যার দায়িত্ব সঠিক ও দক্ষভাবে পালনের মাধ্যমে আজ নিশ্চিতভাবে মানুষের দুর্যোগ ঝুঁকি অনেকাংশ হ্রাস পেয়েছে, দুর্যোগের সময় তাদের ক্ষয়ক্ষতি ও ভোগান্তি কমেছে এবং দুর্যোগ পরবর্তীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে সক্ষম হওয়ায় তাদের সহনশীলতা (Resilience) বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অভিব্যক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসাবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সুখ্যাতি আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষভাবে সমাদৃত।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব (Mandate) হিসেবে দুর্যোগ ও দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রম ছাড়া ও হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল সহ ৪টি জেনারেল হাসপাতাল, ২টি চক্ষ ুহাসপাতাল, ও ৫৬টি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবায় অনন্য অবদান রাখা, ১টি মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনা, ৮টি রক্ত কেন্দ্র পরিচালনার মাধ্যমে নিরাপদ রক্তের সরবরাহ, সড়ক ও অন্যান্য দূর্ঘটনায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণবার্তা প্রচার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও মাটিরকিল্লা (মুজিবকিল্লা) স্থাপন ও সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করণ, ৬৮টি ইউনিটের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার বিপদাপন্ন কমিউনিটিতে দুর্র্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কর্মসূচি বাস্তবায়ন, দুর্যোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নদের মধ্যে অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে ও সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসীদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও পরিবারের কাছে পুনঃ একত্রিকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগ ও ভূমিকা প্রশংসনীয় । এছাড়া ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন ও রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবাদান এবং পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণে হাওর অঞ্চলের বাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ এবং পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া হত দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আর্তমানবতার সেবায় সোসাইটি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এতসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে অন্যতম সহযোগী আইসিআরসি, আইএফআরসি ও বিভিন্ন দেশের জাতীয় রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সহযোগীতা করছে। এছাড়া কলেজ, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্য-সদস্যা অর্ন্তভুক্তিকরণ ও তাদেও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যুব সমাজকে মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ করার যে সুযোগ সরকার করে দিয়েছে তা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জন্য ভবিষ্যতে শক্তিশালী স্বেচ্ছা সেবক নেটওয়াক ও আদর্শ নাগরিক গঠনে অনন্য ভূমিকা রাখবে।
আমি বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস ২০১৭ এর সুবাদে প্রিয় রাঙামাটিবাসী সহ সমগ্র দেশবাসীকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মানবিক ও জন কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য সবিনয় আহবান জানাচ্ছি। পরিশেষে আপনাদের সকলের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল,সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
বিশ্ব রেড ক্রস-রেড ক্রিসেন্ট দিবস সফল হউক, স্বার্থক হউক।
লেখক : এ.কে.এম.আজরু উদ্দিন সাফ্দার
ইউনিট অফিসার
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
রাঙামাটি ইউনিট