মঙ্গলবার ● ৯ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » রহস্যময় এক প্রতারকের নাম আহবাব
রহস্যময় এক প্রতারকের নাম আহবাব
সিলেট প্রতিনিধি :: (২৬ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩৫মি.) সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছত্রিশ গ্রামের রিয়াজ
উদ্দিনের বড় ছেলে আহবাব।
নিম্নবিত্ত রিয়াজ উদ্দীনের আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় আহবাব বিভিন্ন বাড়ীতে প্রাইভেট টিউশনি পড়িয়ে লেখাপড়া ও হাত খরছ চালাতো। কিন্তু আহবাব ছিল বাকপটু ও চরম উচ্চ বিলাসী।
গত কয়েক বছর থেকেই আহবাবের চালচলনে আসে ব্যাপক পরির্বতন
আসে। রাতারাতি ৪টি সিএনজি অটোরিক্সা, ১টি পিকআপ ভ্যানসহ দামীমটর সাইকেল ক্রয় করে সে।
এছাড়াও বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা যায়, আহবাব ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা করা হয় গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুল্লাহ হোসনেগীর সাথে। তিনি সুকৌশলে আহবাব তার দলের কেউ নয় বলে দাবী করে আহবাবের দলীয় পরিচয়কে এড়িয়ে গিয়ে সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, আহবাব তার দলের অনেক নেতাকর্মীর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেই সাথে তিনি আহবাবের শাস্তি দাবী করেন।
কিন্তু প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে উপজেলা সভাপতি মুহিবুল্লাহ এক পর্যায়ে শিবিরের কর্মীদের সাথে তার উঠাবসা ছিলো বলে স্বীকার করেন।
তবে অনুসন্ধানে জানাযায়, ২০১৬ সালের তৎকালীন সময়ে শিবিরের মাসিক ম্যাগাজিন কিশোর কন্ঠ পাঠক ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে অতিথী মঞ্চে একই সারিতে
গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুল্লাহ হোসনেগীর সাথে
প্রতারক আহবাব। ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরকন্ঠ পাঠক ফোরামের সিলেট জেলা পূর্ব শাখার প্রধান পৃষ্টপোষক ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিবিরের সাধারন সম্পাদক হাবিবুল্লাহ দস্তগীরসহজেলার দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।
তাছাড়াও আহবাব নিজেকে ছাত্র শিবিরের নেতা এবং জামায়াত নেতা ও ইবনে সিনার ডাইরেক্টর হাবিবুর রহমানের ঘনিষ্টজন দাবী করতো।
উল্লেখ্য, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ছাত্র শিবির নেতা আহবাব প্রতারনার মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার ঘটনায় চলছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে তোলাপাড়।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আহবাব উপজেলার বিভিন্ন পেশার লোকদের কাছ থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা লভ্যাংশ প্রধানের লোভ দেখিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে আনুমানিক ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৬ মে শনিবার রাত থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে।
লাভের আশায় আহবাবের ধোকায় পড়ে প্রতারনার শিকার অনেকেই লোভে পড়ে ১ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বিনোয়োগ করে কথিত ব্যবসায় অংশীদার হয়েছিলেন।
কাউকে লেয়ার মুরগীর খাদ্য কেনাবেচার কথিত ব্যবসার নামকরে আবার কাউকে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালের শেয়ার বিক্রীর ভূয়া চুক্তিপত্র দেখিয়ে ফাদে ফেলে করেছে প্রতারনা।
প্রতারিতদের একজন রানাপিং ছত্রিশ গ্রামের ময়না মিয়া। তাকে ইবনেসিনা
হাসপাতালের দুটি শেয়ার ক্রয়ের চুক্তি পত্রের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে ২ লক্ষ
টাকা। ভুক্তভুগী কয়েকজন জানান ইবনে সিনা হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান আহবাবকে চেনেন না বলে তাদের জানিয়েছেন।
প্রতারনার বিষয়টি লোকমুখে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে তোলাপাড় সৃষ্টি হয়। প্রায় ২০কোটি টাকা নিয়ে প্রতারক আহবাব লাপাত্তার ঘটনাটি নিয়ে শুধু উপজেলা নয় জেলা শহরে চলছে জোড় গুঞ্জন।
এদিকে লোকমুখে প্রতারনার বিষয়টি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়লে ৬ মে শনিবার দুপুর ১২টায় প্রতারক আহবাবের বাড়ীতে প্রতারনার শিকার অনেকেই ভীড় জমিয়ে আহবাবকে বাড়ীতে না পেয়ে প্রতারিত লোকজন ও বিক্ষুব্দ জনতা রবিবার বিকালে তার বাড়িতে আক্রমন করেঘরের ফ্রিজ, টিভি, খাট, ৪টি সিএনজি অটোরিক্সা,
একটি পিকআপ ভ্যান, শ্যালো মেশিন এমনকি বাড়ীর প্রধান গেইট যে যা
পেরেছেন নিয়ে গেছেন ।
সিলেট শহরের তালতলায় বসবাসকারী প্রতরনার শিকার একজন জানান, আহবাবের সাথে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় । এরপর কয়েকজন বন্ধুমিলে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আহবাবরে কথিত পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসায় বিনোয়াগ করেছিলাম। আহবাব লাপাত্তার খবর শুনে তার বাড়ীতে এসেছি।
প্রতারনার অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা জানতে আহবাবের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
বাড়ীতেই পাওয়া যায় আহবাবের মা নাছিমা বেগমকে, তিনি সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, ৬ মে শনিবার রাত থেকে ছেলের খোঁজ পাচ্ছিনা। এদিকে রবিবার থেকে লোকজন আহবাবকে না পেয়ে বাড়ীর সবকিছু লুটে নিয়েছে।
আহবাবের প্রতারনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন আমি এসব বিষয়ে
কিছুই জানিনা, আমার ছেলে দোষী হলে তার শাস্তি হোক। স্থানীয়বাজারের
ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস টিপু জানান, চলতি বছরের ২৯ মার্চ ফার্মের মুরগীর খাবারের ব্যবসার কথা বলে চতুর আহবাব তার কাছ থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে এক টাকাও ফেরৎ দেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকার দলীয় একজন সমর্থক জানান, তার ভাইয়ের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা প্রতারনার মাধ্যমে নিয়ে ছিলো আহবাব। এরমধ্যে ৮লাখ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
জকিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামেরবদরুল হকের ছেলে সোহেল আহমদ
জানান, তিনি ১০ লাখ টাকা বিনোয়োগ করেছিলেন আহবাবের কথায়। তাকেও মুরগীর ফার্মের ব্যবসার কথা বলে টাকাআনে এর প্রেক্ষিতে এক্সিম ব্যাংকের
একটি চেকও দেয় ।
ভুটি টিকর ছত্রিশ গ্রামের মুহিব আলী মাস্টারের নাতি পিন্টুর ৫লক্ষ টাকা, ছত্রিশ গ্রামের জালাল মিস্ত্রী ৭০ হাজার টাকা, গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের চকরিয়াগ্রামের কামরুল ইসলামের ৭লক্ষটাকা, বিয়ানীবাজার উপজেলার চন্দ গ্রামগ্রামের ব্যবসায়ী আবু বকরের ৫লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, একই উপজেলার খাদিম উলি গ্রামের রুনু
মিয়ার ২লক্ষ টাকা , হুমায়ুন নামে এক আইনজীবি ও তার ৩ বন্ধুর প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা।
এরকম কয়েকশ লোকের প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক আহবাব।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) মীর মোহাম্মদ আবু নাসের সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।