বৃহস্পতিবার ● ১১ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » থামছে না আলীকদমে অবৈধ বালি উত্তোলন
থামছে না আলীকদমে অবৈধ বালি উত্তোলন
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: (২৮ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৪৩মি.) বান্দরবানের আলীকদমে বলুমহাল ইজারা ছাড়াই বেআইনিভাবে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তেলন করা হচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আলীকদম উপজেলার তৈন খাল ও মাতামুহুরী নদীর তীর থেকে প্রতিনিয়ত প্রভাবশালী একটি মহল বালু উত্তোলন করছে। তবে গত মঙ্গলবার আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ নায়িরুজ্জান মোবাইল কোর্টের মাধ্যকে বালু ভর্তি একটি ট্রাক আটক করে ওই কোম্পানীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। পরে ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহারের অজুহাতে প্রভাবশালী ওই ঠিকাদার কোম্পানী ‘তাহের ব্রাদার্স লিঃ’ এর ‘ইজারামূল্য’ ছাড়া উত্তোলিত কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালিকে ‘জায়েজ’ করার চেষ্টা করছে প্রভাবশালীরা।
সরেজমিন জানা গেছে, মেসার্স তাহের ব্রাদার্স লিঃ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যান্টঃ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। উপজেলা সদরেই নির্মিতব্য এ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিকে বালি ফিলিং এর দায়িত্ব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ উঠেছে, সে সব ব্যক্তির কাছে বালি উত্তোলনের বৈধ কোন অনুমতি নেই। এরা মানছেন না বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, এ সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়নকারি হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকেন। পুলিশ এতে সহায়তা করে। ৯মে মঙ্গলবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একটি বালির ট্রাক আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমাণ আদায় করা হয়েছে।
এ আইনে উল্লেখ আছে, জেলা প্রশাসক থেকে বালুমহাল ‘ইজারাগ্রহীতা’ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বালি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ। ‘ইজারামূল্য’ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েই বালি উত্তোলন করতে হয়। অথচ এ আইনের বালাই নেই আলীকদমে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা সদরেই হাজার হাজার ঘনফুট অবৈধ বালির স্তুপ গড়ে উঠলেও প্রশাসনের নজর নেই। উপজেলা সদরের মাতামুহুরী নদী ও তৈনখালের কয়েকটি পয়েন্ট থেকে গত মাসাধিককাল ধরে অবৈধভবে বালি তোলা হচ্ছে।
আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন বালুমহাল ইজারা প্রদান করা না হয়ে থাকলে, উক্ত বালুমহাল হতে এ আইনের অধীন ইজারা প্রদান ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে বালু বা মাটি উত্তোলন, পরিবহণ, বিপণন ও সরবরাহ করা যাবে না এবং এই মর্মে কোন রাজস্বও আদায় করা যাবে না’। ১৫(১) ধারায় আছে, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা হতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন’।
বুধবার দুপুরে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্সের প্রকৌশলী ফাহিম ফেরদৌস বিপুল সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সাব-কন্ট্রাক্টারের মাধ্যমে বালি সংগ্রহ করছি। এসব বিষয় তারা জানবেন। সাব-কন্ট্রাক্টর ‘ইজারামূল্য’ ছাড়া বালি দিলে তা গ্রহণ করবেন কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা খবর নিয়ে দেখছি। যদি এসব বালি অবৈধ প্রমান হয় তবে আমরা আজই বন্ধ করে দেব।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মঙ্গলবার একটি বালিভর্তি ট্রাক আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বালি পাচারের সংবাদ পেলে আরো অভিযান করা হবে।