শনিবার ● ১৩ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছেলে বিএনপি’র রাজনীতি করায় পিতা ইসহাক আলী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন না
ছেলে বিএনপি’র রাজনীতি করায় পিতা ইসহাক আলী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন না
বেতাগী প্রতিনিধি :: (৩০ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৪৪মি.) সদ্য মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করণে আমার বাবা প্রয়াত ইসহাক আলী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন না কারণ তাঁর ছেলে এধরনের অভিযোগ করেন বেতাগী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক। অভিনব যুক্তি! প্রশ্ন হলো ? বাবার অপরাধ (!) কোথায় ? এভাবেই আবেগ জড়ানো কন্ঠে অভিযোগ করলেন বেতাগী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন।
তার বাবা মির্জাগঞ্জের দোকলাখালি ঘরামি বাড়ির ঐতিহাসিক অপারেশনে সক্রীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যে অপারেশনে কয়েকজন কুখ্যাত রাজাকার নিহত হয়েছিলো। সেই অভিযোগে বেতাগী বড় পুলের (বর্তমান টাউন ব্রীজ) ওপর থেকে রাজাকাররা তাঁকে আটক করে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে বেতাগী থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে রবগুনা মহকুমা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সবশেষে নেয়া হয় পটুয়াখালি পাকবাহিনীর ক্যাম্পে।যে ক্যাম্পটি ছিলো মূলত একটি কসাইখানা- মৃত্যুকূপ। পাকবাহিনীর সেই ক্যাম্পে তিনি আটক ছিলেন দুই মাস বাইশ দিন।
সেখানে লাইনে দাঁড় করিয়ে তাঁদের ওপর গুলি ছোড়া হয়। অলৌকিকভাবে আল্লাহর রহমতে যারা বেঁচে ছিলেন তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। যুদ্ধবন্দী হিসেবে তাঁদের খেতে দেয়া হতো সামান্য রুটি, গোছলের জন্য পানি পর্যন্ত তাঁদের দেয়া হয় নি। সেদিন অনেকের মতো তিনি শহীদ হলে তাঁর জায়গা হতো কোনো বধ্যভূমিতে। তাঁর ছিলো ব্যক্তিগত বন্দুক। যে বন্দুক পুরো মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তখন একটি বন্দুক ছিলো সোনার হরিণ। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকার একজন যুদ্ধবন্দী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে রিলিফের ঢেউটিন এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক এমপি অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরু, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার হাতেম মিলিটারি, যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোতালেব শিকদার, উপজেলা মুক্তিযেদ্ধা কমান্ডার ওয়াজেদ হাওলাদার, ডেপুটিকমান্ডার আবুল কাসেম ও মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম ফারুক সিকদারসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধারা তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সুপারিশ ও সমর্থন জানান।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভায় তাঁকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদানের ব্যাপারে সকলে ঐকমত্য পোষণ করেন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে তার সন্তান বেতাগী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এই বিষয়টি-ই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় বলে তার অভিযোগ।
তিনি জানান কোনো একজন এই অপযুক্তিটি উপস্থাপন করলে থমকে যায় সিদ্ধান্ত। ৬ জনের বাছাই কমিটির ৩ হ্যাঁ আর ৩ না। অবশ্য না লিখেছেন যে তিনজন তারা কেউ এই অঞ্চলের বাসিন্দা নন। তাঁরা তাদেরকেই চেনেন না। কীভাবে মফস্বলের সেই তিনজন কমিটির সদস্য হলেন সেটাই তার মূখ্য প্রশ্ন। স্থানীয়দের দাবি কেবলমাত্র দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একজন যুদ্ধকালীন যুদ্ধবন্দী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার প্রত্যাশার এভাবেই অপমৃত্যু ঘটেছে। অভিমানে জামুকা’য় আপীল পর্যন্ত করেননি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল ওয়াজেদ হাওলাদার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন,আমি নিজেও ইসহাক আলীর বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করেছি। তিনি যুদ্ধবন্দী হিসেবে জেল খেটেছেন আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। কোন অদৃশ্যে কারণে বাছাইতে তার স্বীকৃতি পেলেন না।