সোমবার ● ১৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বাগেরহাটে দরিদ্রের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে দুর্নীতির অভিযোগ
বাগেরহাটে দরিদ্রের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে দুর্নীতির অভিযোগ
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট অফিস :: (১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৩মি.) বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের সৃজনশীল কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নজর দারির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নজর দারিনা থাকায় এ অনিয়মএখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ৪০ দিনের কর্মসূচির নামে চলছে পুকুরচুরি। যার কারণে এ এলাকায় মানুষের মুখে মুখে কর্মসূচি এখন ‘৪০ দিনের চুরি কর্মসূচি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের মহৎ কর্মসূচি।
উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে এই কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে গত ৬ মে থেকে এক যোগে শুরু হয়েছে কর্মসংস্থান কর্মসূচি। প্রতিটি ইউনিয়নেই সংশ্লিষ্ট মেম্বারদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এ কর্মসূচির কার্যক্রম। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন সরকারি কর্মকর্তা ট্যাক অফিসার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তদারকি না থাকায় প্রতিটি প্রকল্পে ইউপি সদস্যর নির্ধারিত শ্রমিক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ আবার কোথাও দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। আবার অনেকে শ্রমিক তালিকায় নামে আছে কিন্তু কাজে নেই। শ্রমিক তালিকায় রয়েছে ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ থেকে দলীয় নেতা কর্মীরা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রকল্প ঘুরে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের দুটি প্রজেক্টে পাওয়া গেছে ব্যপক অসংগতি গিয়ে দেখা গেছে
মার্চ থেকে মে বা জুন মাস পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তেমন কোনক কাজ থাকেনা। এ সময় অতি দরিদ্র পরিবার গুলোর কষ্টে দিন কাটে। এমনটি ভেবে বর্তমান সরকার বছরের প্রথম দিকে ৫/৬ মাস ধরে চালু করেছেন অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী। এই কাজের আওতায় শ্রমিকরা নিজএলাকায় ৬ ঘন্টা কাজ করে ১শ’ ৭৫ টাকা বেতন পাবেন। প্রতিটি পর্বের কাজ চলবে ৪০ দিন। সকল ইউনিয়নে এ কাজের জন্য প্রকল্প তৈরী করা হয়েছে। যারা এই প্রকল্পে কাজ করবে তাদের নিবন্ধন ওহয়ে আছে আগে ভাগেই।
এই কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে গত ৬ মে। কিন্তু কোন কোন প্রকল্পের কাজ আদৌ শুরু হয়নি। শুরু হওয়া অধিকাংশ প্রকল্পে নেই নিবন্ধিত ও নির্ধারিত সংখ্যক শ্রমিক। এই কর্মসূচীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই থাকছে অনিয়ম, দুর্নীতি। কাজ চলছে কাগজ কলমে। যার বাস্তব চিত্রভিন্ন।
রবিবার ১৪ মে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের দুটি প্রজেক্টে পাওয়া গেছে ব্যপক অসংগতি। ৩নং ওয়ার্ডের ফুল হাতা বাজারের কাছে চলছে একটি রাস্তা সংস্কারের কাজ। এখানে প্রতিদিন ১শ’ ৩১ জন শ্রমিক কাজ করার কথা। কিন্তু কাজে আছেন মাত্র ১২ জন। এই প্রকল্পটি দেখা শোনার দায়িত্ব সংরক্ষিত নারী আসনের ইউপি সদস্য মাকসুদা বেগমের। তার স্বামী হারুন অর রশিদের নাম রয়েছে এখানে শ্রমিকের তালিকায়। প্রকল্পটি তিনিই তদারকি করছেন। তবে এখানে কতজন শ্রমিক কাজ করার কথাতা লেবার সর্দার দেলোয়ার হোসেন মোল্লার জানা নেই।
কর্মরত শ্রমিক শহিদুল হাওলাদার, হাসিব, ইমরান, লিয়াকত, ইলিয়াস, সোহেল, হাসান, রিপন ও আবেদ বলেন, ‘আমরা ১শ’ ফুটমাটি কেটে দিবো ১০ হাজার টাকায় এই চুক্তিতে কাজ করছি’। লেবার সর্দার বলেন, ‘শ্রমিক পাওয়া যায়না। তাই নগদ টাকার চুক্তিতে কাজ করানো হচ্ছে’।
১৩১ জন শ্রমিকের স্থলে মাত্র ১২ জন শ্রমিক ও কেন চুক্তিতে কাজ করানো হচ্ছে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মাকসুদা বেগম ছবি বলেন, ‘কোন লোক কাজ করতে চায়না। তাই কাজের স্বার্থেই এভাবে চালানো হচ্ছে’।
এই ইউনিয়নের অপরএকটি প্রকল্প রয়েছে ৪নং ওয়ার্ডে। কাগজ পত্রে এখানে শ্রমিক রয়েছে ৪২ জন। প্রকল্প এলাকায় গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এখানে কোন কাজই শুরু হয়নি’। এ সম্পর্কে প্রজেক্ট চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. মাসুদ হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, ‘আমি ও চেয়ারম্যান সাহেব জরুরি কাজে ঢাকায় আছি। ফিরে এসে কাজ শুরু করবো’।
এ সম্পর্কে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এতো অসংগতি, অনিয়ম কোথাও থাকার কথা নয়। তবে আগামী দিন থেকে ওই ইউনিয়নের সকল প্রজেক্টের কাজ বিশেষ ভাবে নজর দারি করা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বহরবুনিয়া ইউনিয়নের বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। কোন প্রকার অনিয়ম প্রশ্রয় দেওয়া হবে না’।
এ বিষয়ে জানার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন তালুকদারের ০১৭১৫৭৫৭৩১২ নং মোবাইলে একাধিকবার রিংকরা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আনোয়র হোসেন হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ইউনিয়নে উন্নয়নের নামে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। যেন দেখার কেউ নেই। এ জন্যই কি শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক পাঠিয়ে ছিলেন ইউপি নির্বাচনে?