মঙ্গলবার ● ২৩ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » নবীগঞ্জে ধাত্রী - চিকিৎসক এর দায়িত্বহীনতায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু
নবীগঞ্জে ধাত্রী - চিকিৎসক এর দায়িত্বহীনতায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: (৯ জৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.২৫মি.) নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর সুজাহাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম পেশায় রাজমিস্ত্রী। বিয়ে করেছিলেন গত প্রায় ১১মাস পূর্বে। সন্তান প্রসবকালে তার স্ত্রী ও সন্তান উভয়েরই মৃত্যু হয়েছে। ধাত্রী ও কথিত মহিলা চিকিৎসক শাহেনা আক্তারের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার কারণে তার স্ত্রী ও নবজাতক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে মনে হয়েছে।
২২ মে সোমবার মা মনি প্রকল্পের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান প্রশ্রবকালীন সময়ে কয়েকজন মা ও সন্তানের মৃত্যুর তালিকা তৈরী করে। মা মনি প্রকল্পের উদ্যোগে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ইনাতগঞ্জ উপস্বাস্থ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. চম্পক কিশোর সাহা সুমন,পরিবার উপজেলা পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহাদাত হোসেন, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক রাকিল হোসেন, মা মনি প্রকল্পের আব্দুল আহাদ ও উপজেলা স্বাস্থ পরিদর্শক আব্দুল খালেক।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় তদন্ত কমিটির লোকজন দীঘলবাকের রাধাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়িতে যান তার স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করতে। কথা হয় রফিকুলের পিতা জবরুল ইসলাম ও মা ছালেমা বেগমের সাথে। তদন্ত কমিটিকে তারা জানান,গত প্রায় ১১মাস পূর্বে রুবী বেগম(২০)কে বিয়ে করে তাদের ছেলে রফিকুল। বিয়ের দুই মাস পরেই রুবী পেটে সন্তান ধারণ করেন। তারা ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রসহ বিভিন্ন রিপোর্ট দেখিয়ে বলেন আমরা গরীব হলেও চিকিৎসা করাতে কোন ক্রুটি করিনি। তারা জানান,সর্ব শেষ গত ২৩ মার্চ রুবীকে নিয়ে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় তারা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
একদিন পর ২৫মার্চ ব্যাথা শুরু হলে রুবীকে নিয়ে স্বামী রফিকুল বান্দের বাজার ডা. শাহেনা বেগমের কাছে যান। যাওয়ার সাথে সাথেই তিনি ডেলিভারী করেন। কিন্ত জন্ম নেয় একটি মৃত কন্যা সন্তান। এ সময় রুবীর শারিরীক অবস্থা অবণতি হলে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ডেলিভারী করার আগে শাহেনা বেগম পূর্বের কোন ডাক্তারের ব্যবস্থা পত্র দেখেননি বলেও তারা জানান।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়,বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্র ও রিপোর্টগুলো দেখে পরিস্কার বুঝা গেল উচ্চ রক্তচাপ জণিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে ডেলিভারী না করে হাসপাতালে রেফার্ড করে দিলে হয়তো বাচানো সম্ভব হতো। এ ব্যাপারে ধাত্রী শাহেনা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার কাছে নিয়ে আসার পর আমি তার পেশার চেকআপ করেছি। পেশার ছিল ১শত ৬০ বাই ১শ’। উচ্চ রক্ত চাপ থাকার পরও কেন করলে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,তাদের অনুরুদে আমাকে ডেলিভারী করতে হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,শাহেনা বেগম একজন ধাত্রী। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে নিজেকে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সে একজন হাতুড়ে চিকিৎসক । তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বৈধ অবৈধ ডেলিভারী করে রাতারাতি হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। ডাক্তার লেখার কোন এখতিয়ার না থাকার পরও তিনি প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার শব্দটি লিখে রোগী সাধারনদের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছেন। এসব অবৈধ টাকা দিয়ে তিনি মোস্তফাপুর পাঠানহাটি গ্রামে জায়গা ক্রয় করে গড়ে তোলেছেন দোতলা আলিশান বাড়ী। হাতুড়ে ধাত্রী ডা. শাহেনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে একই দিন বগ ভাকৈর পর্ব ও বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়নে হলিমপুর ও ফতেহ পুর গ্রামে গর্ভাবস্থায় ও ডেলিভারীকালীন সময়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে সময় মতো হাসপাতালে না নেয়ার কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।