বৃহস্পতিবার ● ২৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » মহাত্মাগান্ধির স্মৃতি বিজড়িত আত্রাই হতে পারে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান
মহাত্মাগান্ধির স্মৃতি বিজড়িত আত্রাই হতে পারে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান
নাজমুল হক নাহিদ,আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: (১১ বৈশাখ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.১২মি.) নওগাঁর আত্রাইয়ের এক সময়ের অবহেলিত গান্ধি আশ্রমের উন্নয়ন কাজ দিন দিন এগিয়ে চলেছে। আত্রাই এর গান্ধি আশ্রমও হতে পারে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান বা পর্যাটন কেন্দ্র। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত, অসহিংস ব্যক্তিত্ব, ভারতবর্ষের জনপ্রিয় নেতা মহাত্মাগান্ধির স্মৃতি বিজড়িত আত্রাই গান্ধি আশ্রম অনেকটাই সেজেগুজে এগুতে যাচ্ছে। আগের মত নেই আর সেই ভুতুরে পরিবেশ, নেই দখলদারিত্বের কালোথাবা। তার পরও বিভিন্ন প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দিনদিন গান্ধি আশ্রমের কলেবর বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যেই ভারতীয় অর্থায়নে সেখানে মহাত্মাগান্ধি ও পিসি রায় মেমোরিয়াল হল গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এ একতলা ভবনকে দ্বিতীয় তলায় উন্নিত করা হচ্ছে। গান্ধির স্মৃতি বিজড়িত সেই গুদামঘরটিও সংস্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নওগাঁ জেলা পরিষদের অর্থায়নে বাউন্ডারি ওয়াল ও দৃষ্টিনন্দন একটি গেট নির্মাণ করা হয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ইংরেজ সমরাজ্যবাদের নির্যাতনের যাঁতাকলে যখন পিষ্ট ভারতবর্ষবাসী। তাদের জুলুম ও নিপিড়নে অতিষ্ঠ বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ। সে সময় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনমনে জায়গা করে নেন ভারতবর্ষের কিংবদন্তি মহাত্মাগান্ধি। হিন্দু মুসলমানের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধর্ম বর্ণের উর্ধে থেকে তিনি এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরেন। ইংরেজদের পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে জনমত সৃষ্টি করেন। জনশ্রুতি আছে যে তিনি এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসহায় মানুষের পার্শে দাঁড়ানোর জন্য ১৯২৫ সালে আত্রাই এসেছিলেন। সে সময় তিনি আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন আজকের এই গান্ধি আশ্রমে অবস্থান করে এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করেন। একই সাথে এলকাবাসীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে তিনি এখানে খদ্দর কাপড় তৈরির তাঁত শিল্প স্থাপন, খাঁটি সরিষার তেলের জন্য ঘানি স্থাপনসহ অনেক স্মৃতি চিহ্নই গড়ে তোলেন।
এ বিষয়ে আত্রাই গান্ধি আশ্রমের সেক্রেটারী জেনারেল ডা. নিরঞ্জন কুমার দাস সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, এক সময় গান্ধি আশ্রমের উন্নয়ন মুখ থুবরে পড়েছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় এমপি মো. ইসরাফিল আলম ও উপদেষ্টা সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান এর উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধন করেন। তাদের প্রচেষ্টায় ভারতীয় অর্থায়নের এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন “মহাত্মাগান্ধী ও পিসি রায় মেমোরিয়াল হল”। এ ছাড়াও এখানে প্রতি বছর আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালিত হয় গান্ধির জন্মোৎসব। এখানে স্থাপন করা হয়েছে আত্রাই ডায়াবেটিস সমিতি। যেখান থেকে প্রতি শুক্রবার এলাকার অসংখ্য ডায়াবেটিস রোগী প্রথমিক চিকিৎসা গ্রহন করেন।
গান্ধি আশ্রমের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের এমপি সাহেবের আন্তরিকতা ও সাবেক এমপির প্রচেষ্টায় বর্তমানে গান্ধি আশ্রম অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এখানে ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনারসহ কুটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কয়েকবার এসেছেন। এখানে একটি পুর্ণাঙ্গ দাতব্য চিকিৎসালয়, কৃষি খামার, মৎস্য খামারসহ বেশ কিছু স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা সংস্থার রয়েছে। যেহেতু এ গান্ধি আশ্রম উপজেলা সদরের একেবারেই সন্নিকটে, রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এবং মনোরম পরিবেশে। তাই এখানে উল্লেখিত স্থাপনাগুলো নির্মিত হলে ও প্রয়োজীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে এটি একটি পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোখলেছুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ভারতবর্ষের জনপ্রিয় নেতা মহাত্মাগান্ধির স্মৃতিধন্য গান্ধি আশ্রম এখন আর অবহেলিত পল্লী নেই। উন্নয়নের ছোঁয়ায় একটি পর্যটন কেন্দ্রে রুপান্তরিত হতে চলেছে। এখানে আধুনিক মডেলের ডাকবাংলো নির্মাণ, বিভিন্ন ভাস্কর্য নির্মাণ ও প্রয়োজীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।