শুক্রবার ● ২৬ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » এটা দেশের সংস্কৃতির ওপর চপেটাঘাত : ভাস্কর মৃণাল হক
এটা দেশের সংস্কৃতির ওপর চপেটাঘাত : ভাস্কর মৃণাল হক
ঢাকা প্রতিনিধি :: (১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বেলা ২.০৩মি.) সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যটি গ্রিক দেবী থেমিসের নয় বলে জানিয়েছেন ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক।
ভাস্কর্যটি সরানোর সিদ্ধান্তে ব্যথিত চিত্তে তিনি জানান, ‘এ ভাস্কর্য কোনও গ্রিক দেবীর নয়। বরং এটি বাঙালি মেয়ের ভাস্কর্য। যার হাতে বিচারের প্রতীক।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মৃণাল হক। তিনি বলেন, ‘এ ভাস্কর্য কোনও গ্রিক দেবীর নয়। এটি সম্পূর্ণ বাঙালি মেয়ের ভাস্কর্য।
শাড়ি-ব্লাউজ পরা একজন বাঙালি নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে এ ভাস্কর্যে। আর এখানে দাড়িপাল্লা বিচারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’
মৃণাল হক বলেন, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলাটা দেশের সংস্কৃতির ওপর চপেটাঘাত।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে এ বিষয়ে গতকাল জানানো হয়েছে। ভাস্কর্য সরিয়ে হয়তো অ্যানেক্স ভবনের সামনে স্থাপন করা হতে পারে।
আমি আমেরিকায় রাজকীয়ভাবে ছিলাম। দেশকে ভালোবেসে আমি এখানে এসেছি। আমি ঢাকা শহরে প্রায় ২৫টির মতো ভাস্কর্য করেছি। প্রায় সবগুলোই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে করেছি। এর আগে দেশে ভাস্কর্যের কোনও কনসেপশন ছিল না। আমি সেটা দিয়েছি।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমার হাত-পা বাঁধা। দেশের শান্তির স্বার্থে অনেক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কষ্টকর।’ কথাগুলো বলার সময় তার চোখ জলে ছলছল করছিল।
ভাস্কর্যটি যেন পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া না হয়, সেজন্যই তিনি ভাস্কর্য সরানোর কাজটি তদারকিতে এসেছেন।
এ প্রসঙ্গে মৃণাল হক বলেন, ‘আমাকে চাপ দিয়ে এটা সরানো হয়েছে। আমাকে এটা সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই আমি এখানে এসেছি।’
মৃণাল হক বলেন, ‘আমার কিছু বলার নাই। অনেকের অনেক ক্ষমতা আছে। আমি বানিয়েছি, আমাকে সরাতে বলা হয়েছে আমি তদারকি করছি।’ কান্না জড়িত কন্ঠে মুখ ঢেকে তিনি আরও বলেন, ‘এসব বলতে গেলে বিপদ। এর আগে আমার বানানো লালনের ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। আমাকে গতকাল জানান হয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য। বৃহস্পতিবার রাতে এটি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।
এর আগে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলতে অথবা জাতীয় ঈদগাহ থেকে যেন দেখা না যায়, তার ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া গত ২৫ এপ্রিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেবেন।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের সামনে গত ডিসেম্বর মাসে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর মৃণাল হক।
ডান হাতে নিচের দিকে ধরা একটি তলোয়ার আর বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দাঁড়ানো নারী। হাইকোর্টের সামনে এই ভাস্কর্যটি স্থাপনের প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে হেফাজতে ইসলামসহ দেশের কয়েকটি ইসলামি দল।
তাদের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দেশে সুপ্রিম কোর্টে ‘থেমিসের মূর্তি’ থাকতে পারে না। এছাড়াও জাতীয় ঈদগাহ থেকে এই ভাস্কর্যটি দেখা যায় বলে এটি না সরালে আসন্ন ঈদুল ফিতরে এই ঈদগাহে কেউ ঈদের নামাজ পড়বেন না বলেও ঘোষণা দেয় আওয়ামী ওলামা লীগ।