রবিবার ● ২৮ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ইজিবাইক,রিকশা ও পাখিভ্যান বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে
ইজিবাইক,রিকশা ও পাখিভ্যান বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে
জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ২.৩৯মি.) ঝিনাইদহ জেলা শহর, মফস্বল ও গ্রামগুলোতে রিকশা ও ভ্যানগাড়ির বিকল্প হিসেবে অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা ও পাখি ভ্যান। অবৈধভাবে চলা এসব বাইক বিদ্যুতের একটি বড় অংশ গিলে খাচ্ছে। কারণ এগুলোর ব্যাটারি বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইজিবাইক আমদানি ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ী সমিতির দেওয়া তথ্যানুয়ী, দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এখন প্রায় ১০ লাখ ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করছে। আর এসব যানবাহন চার্জ দিতে দৈনিক প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। ঝিনাইদহ জেলার হিসাব অনুযায়ী প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ধরা হলে প্রায় ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা ও পাখি ভ্যানে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর, ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ড, হামদহ, চাকলাপাড়া, পায়রাচত্ত্বর ও সদর হাসপাতাল এলাকায় ইজিবাইকের ব্যাপক চলাচল রয়েছে। শহরের এসব গুরুত্বপুর্ন এলাকায় ইজিবাইক এত বেশি বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের চলাফেরাও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে পায়রাচত্ত্বর ও সদর হাসপাতাল এলাকা এখন পুরোটাই ইজিবাইকের দখলে।
ঝিনাইদহ জেলার ৬ থানা এলাকার সাধারন জনগনের সাথে কথা বললে তারা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ভাড়া অন্যান্য যানের চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ায় মূল শহরে এবং তার বাইরে এখন যাত্রীদের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা। আর এগুলোর বেশিরভাগ চালকই সামান্য অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে ব্যাটারি চার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ঝিনাইদহের জেলা-উপজেলাগুলোতে ইজিবাইক চালকরা যে গ্যারেজে গাড়িগুলো রাখছেন, সে জায়গাতেই রাতভর একটি গাড়ির শুধু চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে দিচ্ছেন।
হরিনাকুন্ডু উপজেলাতেও অবাধে চলছে ইজিবাইক। আর এগুলোর চালকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ লাইন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গাড়িগুলো চার্জ দিচ্ছেন। তাছাড়া কালীগঞ্জ, মহেশপুর, শৈলকুপা ও কোটচাঁদপুর শহরে এই যানগুলো চার্জ দেওয়ার জন্য আছে আলাদা দোকান। সেখানে নিয়ম ভঙ্গ করে বিদ্যুতের অপচয় করে গাড়িগুলোতে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাইদহ শহরে এই বাইকগুলো চার্জের জন্য আলাদা করে ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে ইজিবাইকে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এক একটি ঘরে একসঙ্গে ১৫/২০টি করে ইজিবাইকে একটানা ৮ ঘণ্টা করে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তাদের খরচ হচ্ছে ১৫০ টাকা। ঝিনাইদহ শহরের ইজিবাইক চালক জলিল মিয়া বলেন, প্রতিদিন ছয় ইউনিট করে মাসে তার গাড়িতে ১৮০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়।
সূত্র মতে, এসব যানগুলোর বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে পুলিশি অভিযান চালানো হলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এগুলো ঠিকই চলছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, যানগুলোর প্রথম সমস্যা হলো, এগুলো রিচার্জ করতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, আর দেশে যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে সেখানে এই যানগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
ঝিনাইদহ ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শহিদুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, যদিও ঝিনাইদহ শহরের ইজিবাইক, রিকশা ও পাখি ভ্যান একটি জনপ্রিয় যানবাহনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ জন্য বিদ্যুতের কাঙক্ষিত উৎপাদন ব্যবস্থা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তার মতে, অফ পিক আওয়ারে এই যানগুলো চার্জ করা এবং সোলার চার্জিং সিস্টেমে এর রিচার্জের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটি ভাবতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সরকার দেশের ২২টি সড়কে এসব যান চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এরপর সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হওয়ায় উচ্চ আদালত থেকেও এসব যান চলাচলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে একসঙ্গে বহু মানুষের জীবিকা অর্জনের উৎস হওয়ায় সরকারিভাবে বৈধ উপায়ে এই বাহনগুলো চার্জ দেওয়ার ব্যাবস্থা নেওয়া হয়। বিদ্যুৎ অপচয় কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কেরানীগঞ্জের রহিতপুরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এই যানগুলোর জন্য দেশের প্রথম চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করে।