বুধবার ● ৩১ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিলেটে নিম্নমানের মসলায় বাজার সয়লাব
সিলেটে নিম্নমানের মসলায় বাজার সয়লাব
হাফিজুল ইসলাম লস্কর,সিলেট প্রতিনিধি :: (১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৩৮মি) সিলেটের হাট বাজার ভেজাল ও নিম্নমানের মসলায় সয়লাব। মসলার সাথে মেশানো হচ্ছে ইট ও কাঠের গুঁড়া। সিলেট জেলার উপজেলা বাজার গুলোতে নিম্নমানের মসলার ছড়াছড়ি কিন্তু নেই বাজার মনিটর’র ব্যাবস্থা।
সেই সুজুগে অসাধু ব্যবসায়ীরা রমাজান মাসেও অধিক মুনাফার লোভে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মাংস ও ইফতারি রান্নার মূল উপাদান হলো মসলা। এ জন্য বেশ আগেভাগে প্রস্তুতি সেরে রেখেছে ভেজাল মসলা উৎপাদন ও বিক্রয়কারী সিন্ডিকেট।
ভেজাল ও নিম্নমানের মসলায় ভরে গেছে জেলা’র হাটবাজার। দোকানে দোকানে পৌঁছে গেছে এসব ভেজাল ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মসলা। এসব মসলার মধ্যে মরিচের সঙ্গে ইটের গুঁড়া, হলুদে মটর ডাল, ধনিয়ায় স মিলের কাঠের গুঁড়া ও পোস্তদানায় সুজি মেশানো হচ্ছে।
বেশি মুনাফার লোভে কয়েকটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র বাজারে এসব ভেজাল মসলার জোগান দিচ্ছে। অসাধু দোকানদাররাও বেশি লাভের আশায় এসব ভেজাল মসলা বেশি বিক্রি করছে।
সিলেট জেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে মসলা বিক্রেতা এবং ভেজাল মসলা কিনে প্রতারিত হওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে হাটবাজারের পাশে ফুটপাতে বসে বিক্রি করা খোলা মসলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেজাল রয়েছে। এই ভেজাল মসলা কিনে মানুষ একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছে, আবার অন্যদিকে এসব খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল রোগে।
ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান, রামাদ্বান মাসে মসলার চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এ জন্য ভেজাল ও নিম্নমানের মসলা উৎপাদনকারী চক্রটি বেশ আগে ভাগে দোকানে দোকানে সরবরাহ দিয়েছে এসব ভেজাল মসলা।
এরই মধ্যে বন্দর, বন্দরের ফুতপাতে বেশি, বন্দরের আশেপাশের বাজার, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ঢাকাদক্ষিন, রামধা, গোবিন্দ্রশ্রী, রানাপিং, চারখাই, রাজাগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, শ্রীরামপুর, কুচাই, ওসমানীনগর, তাজপুর, বেগমপুর, শেরপুর, বুরুঙ্গা, উমরপুর, দয়ামীরসহ অনেক হাটবাজারগুলো ভরে গেছে ভেজাল মসলায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাজপুর বাজারের কয়েকজন মুদি দোকানদার জানান, থানায় বেশ কয়েকটি ভেজাল মসলা উৎপাদনকারী সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা গোপন কারখানায় ভেজাল মসলা উৎপাদন ও প্যাকেটজাত করে পুরো ওসমানীনগর ও আশপাশ হাটবাজারের মুদির দোকানসহ খোলাবাজারে সরবরাহ করে।
থানার হাটবাজার ও গ্রামে গড়ে উঠেছে মসলা তৈরির কারখানা। মেশিনে ভাঙ্গিয়ে খুব সহজেই মসলা তৈরি করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল মসলা উৎপাদনকারীরা বাজার থেকে নিম্নমানের মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, গোলমরিচ, দারুন চিনি, তেজপাতা ও পোস্তদানাসহ বিভিন্ন মসলা কিনে কারখানায় নানা ধরনের ভেজাল উপাদান মিশিয়ে প্যাকেট করে ও খোলা অবস্থায় বাজারজাত করে।
সিলেট জেলার বিভিন্ন বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, উৎপাদন কারীরা তিনভাবে বাজারে ভেজাল মসলা সরবারহ করে। কিছু বিক্রি করে প্যাকেট ছাড়া, কিছু বিক্রি করে সাধারণ প্যাকেটে করে আবার কিছু বিক্রি করে নামি-দামি মসলা কম্পানির লেবেল লাগিয়ে। আর এসব ভেজাল মসলা কিনে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোন নজরদারী নেই।
এতে উদ্বিগ্ন ক্রেতারা। তারা বলছেন, দায়িত্বে অবহেলা করে সরকারি কর্মকর্তারা যেমন সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন, তেমনি জনগণ থেকেও সরকারকে বিচ্ছিন্ন করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রোজার মাসে যদি প্রশাসন ঠিকমতো সবজি, মাছ , মসলা ও ফলের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না করে আর ভেজাল খেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
সিলেট ক্যাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য কাউসার চৌধুরী বলেন, অতি লোভের কারণে যারা ভোক্তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব মোবাইল কোর্টটা যেন কঠোরভাবে এবং নিয়মিত করা হয়।
এদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার দাবি করেছেন, ভেজাল রোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে এবং তাদের কর্মকর্তারা এটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন।