বৃহস্পতিবার ● ১ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » জনতা মাল্টিপারপাস সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবারসহ খাগড়াছড়িতে আত্মগোপন
জনতা মাল্টিপারপাস সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবারসহ খাগড়াছড়িতে আত্মগোপন
অশোক রায় বাপ্পি, ঈশ্বরদী :: (১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.২৮মি.) জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটি সোসাইটি, জনতা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি এবং জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান, খন্দকার আবুল কালাম আজাদ ও অন্যান্য কর্মকর্তারা ঈশ্বরদী অফিসের ব্যবস্থাপক ও স্থানীয় সমবায় কর্মকর্তার সহযোগীতায় ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন অফিসের প্রায় ৪’শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঈশ্বরদীসহ রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের ৪০ অফিসে আমানতকারীদের জমা রাখা এই টাকা নিয়ে তারা বিদেশে পাড়ী দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। টাকা না পেয়ে আমানতকারীরা দেশের বিভিন্ন থানা ও কোর্টে মামলা করেও কোন সমাধান না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। একই ভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ঐ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় কর্মরত নিরপরাধী কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠানের কুষ্টিয়া জেলার তারা গুনিয়ায় প্রধান কার্যালয়ের সাবেক অর্থ পরিচালকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমানতকারীদের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, ২০১০ সালে কুষ্টিয়া জেলার তারা গুনিয়ায় জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটি সোসাইটির প্রধান কার্যলায় স্থাপন করেন খন্দকার আবুল কালাম আজাদ, নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার রফিকুল আলম বিদ্যুৎ, খন্দকার শরিফুল আলম চঞ্চল ও জান্নাতুল ফেরদৌস শিলাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
একই সময়ে পর্যায়ক্রমে ঈশ্বরদী, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটি সোসাইটি ও আরবান ফাইনান্স এন্ড কমার্স মাল্টিপারপাস নামে ৪০টি অফিস ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করে অল্পদিনেই তারা জনগণকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। টাকার মালিকরা বিশ্বাস করে এসব অফিসে এফডিআর, ডিপিএস ও বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয় হিসাবের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে থাকে। একই সাথে তারা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করে তোলে। ২০১২ সালে সরকার এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপর কড়া নজরদারী শুরু করলে তারা কৌশল অবলম্বন করে। ঈশ্বরদী অফিসের নাম পরিবর্তন করে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি করা হয়।
একই সময় অন্যান্য অফিসেরও নাম পরিবর্তণ করা হয়। পৃথক নামে পৃথকভাবে নিবন্ধন ও করা হয়। পৃথকভাবে নিবন্ধন নেওয়ার পর রাজশাহীতে বিভাগীয় পর্যায়ে কেন্দ্রিয় সমবায় সমিতি চালু করা হয়। এর পর ঈশ্বরদী উপজেলা সববায় কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অফিস এলাকার সমবায় কর্মকর্তাদের বিশেষ কায়দায় ম্যানেজ করে প্রত্যেক অফিসের জন্য অফিস ব্যবস্থাপনা পরিষদ গঠন করা হয়। সমবায় আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর আমানতকারী ও ঋণ গ্রহীতাদের মধ্য থেকে অফিস ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার কথা। কিন্তু সমবায় কর্মকর্তারা মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে খন্দকার আবুল কালাম আজাদ গংকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদ গঠন করে কার্যক্রম চালাতে সহযোগিতা করেন।
এ সুযোগে খন্দকার আবুল কালাম আজাদ গং ২০১০ সাল থেকেই বিভিন্ন অফিস থেকে সুকৌশলে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর ব্যবস্থাপক ও পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে প্রধান কার্যালয়ে সংগ্রহ করতে থাকেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শুধু ঈশ্বরদী অফিস থেকেই লভ্যাংশসহ ১’কোটি ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একই ভাবে অন্য ৩৯ শাখা থেকেও প্রায় ৪’শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গিয়ে অফিসগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন। এতে ঈশ্বরদীসহ অন্যান্য অফিসগুলো অর্থ সংকটে পড়ে যায়। দীর্ঘদিন অর্থ সংকটের মধ্যেও ঈশ্বরদীসহ বেশ কয়েকটি অফিস স্থানীয় সমবায় কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের তত্ত্বাধানে চলতে থাকে। কিন্তু লোনারদের চাহিদা মত লোন দিতে এবং আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী সময়মত আমানতের টাকা ফেরত দিতে না পাড়ায় অফিস কর্মচারীরা নানা প্রকার ঝুঁকি হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতির মধ্যে পড়ে অফিসগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
ঈশ্বরদী অফিসও একই ভাবে গত ১৫ মে ২০১৭ইং তারিখে কর্মচারীরা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। সূত্রমতে, চলমান অফিসগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আজাদ গং এর পক্ষ থেকে ঈশ্বরদী অফিসসহ বিভিন্ন অফিসে সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে হুমকী প্রদান করা হয়। এফডিআর হোল্ডারদের নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে সু-কৌশলে এফডিআর হোল্ডার ও লোনারদের মধ্যে মোবাইল ফোনসহ নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে অফিস চালাতে বাধাগ্রস্থ ও দ্রুত বন্ধের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়।
এদিকে ঈশ্বরদী অফিস থেকে প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া ১’কোটি ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকার চেয়ারম্যান কর্তৃক স্বাক্ষরীত প্রাপ্তি শিকারপত্র কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির রাজশাহী অফিস থেকে ঈশ্বরদী অফিসকে দেওয়া হলেও কোন টাকা তারা ফেরত না দিয়ে নানা তালবাহানা করে যাচ্ছে।
সূত্রমতে, ৪০টি অফিসের প্রায় ৪’শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঐ আজাদ গং বিদেশে পাড়ি দেওয়ার অপচেষ্টার খবরে আমানতকারীরা ঈশ্বরদী,পাবনা, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, শেড়পুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, পোড়াদহ, মেহেরপুর, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ঢাকাতে পৃথক মামলা করে টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সূত্রটি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পান এবং আজাদ গং কোনভাবেই যেন বিমান বা সড়ক পথে বিদেশ পাড়ী দিতে না পড়ে সেজন্য সংশ্লিষ্ট বর্ডার গুলোতে জরুরি ভিত্তিতে আজাদ গংয়ের বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারী কারার অনুরোধ জানিয়েছেন ভোক্তভোগীরা। গোপন সূত্রে জানা গেছে জনতা মাল্টিপারপাস সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবারসহ খাগড়াছড়িতে আত্মগোপন করে আছে।