রবিবার ● ৪ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » গাছ, মাছ, ঘাষ-সবে মিলে করি চাষ
গাছ, মাছ, ঘাষ-সবে মিলে করি চাষ
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১.২২মি.) ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী। নিজের কাজ শেষে সকালে বাইসাইকেল নিয়ে বের হন তিনি। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য। করছেন নানা প্রকার সহযোগীতা। দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রযুক্তিগত সাহায্য। উদ্দেশ্যে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধ করে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলা। জানা গেছে, মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আর্টের কাজ শুরু করে ইদ্রিস আলী।
ঢাকা, যশোর, ইশ্বরদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে দীর্ঘ ১২ বছর কাজ করার পর ফিরে আসেন দেশে। “গাছ, মাছ, ঘাষ-সবে মিলে করি চাষ, গরু যদি থাকে পাশে দুধে-মাছে বার মাস” এ শ্লোগানে গড়ে তোলেন নার্সারী। বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। নামের সাথে যুক্ত হয়েছে গ্রীণ চাষী। নিজের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তণ হওয়ার পর তিনি জৈব গ্রাম গড়ে তোলার আন্দোলনে নেমেছেন।
নিজ জন্মভূমি লক্ষীপুর গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন জৈব পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষাবাদ করার। গ্রামের ২৫০ জন কৃষক-কৃষাণীদের নিয়ে গড়েছেন কৃষক মাঠ স্কুল ও ক্লাব। প্রতিদিন সুবিধামত সময়ে গ্রামের কৃষক ও কৃষাণীদের নিয়ে আলোচনা করছেন কিভাবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায়। দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। তার এই আন্দোলনে সহযোগিতা করছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিস। তাদের সহযোগিতায় গ্রামের ৩’শ টি বাড়িতে জৈব সার উৎপাদনের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। তৈরী করা হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার। এতে একদিকে উৎপাদন হচ্ছে জৈব সার অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ব্যবহার করা লাগছে না কৃষকদের।
লক্ষীপুর গ্রামের কৃষাণী শাবানা খাতুন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, তার বাড়ীর আঙ্গিনায় কিছুটা জায়গা ছিল। জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। কৃষক ইদ্রিস আলী দু’বছর আগে এসে পরামর্শ দেন জৈব সার তৈরী করার জন্য। গরুর গোবর, রান্না শেষে ফেলে দেওয়া জঞ্জাল জৈব সার তৈরীতে এখন কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। জৈব সার তৈরীর প্রদর্শনী প্লটের পাশে তিনি চাষ করছেন সবজি। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে তিনি তার উৎপাদিত সবজি নিজে খাচ্ছেন সেই সাথে বিক্রিও করছেন। একই গ্রামের কৃষক নুর নবী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, বাড়ীর আঙ্গিনা বা মাঠে সবজিসহ ফসল উৎপাদনের জন্য এখন তিনি জৈব সার ব্যবহার করছেন। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার কারণে ফলনও ভালো হচ্ছে। এছাড়ার তার উৎপাদিত সবজি ও ফসলের চাহিদাও ভালো।
কৃষক লাবু খান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, ইদ্রিস আলী তার কৃষক মাঠ স্কুল ও ক্লাবের প্রতিদিন সুবিধামত সময়ে বৈঠক করি আমরা। সেখানে আমাদের নানা প্রকার পরামর্শ দেন ইদ্রিস আলী। তারমত কৃষক যদি জেলার প্রতিটি গ্রামে থাকতো তাহলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বিষমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারতো। আর দেশটি জৈব পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেত। এ ব্যাপারে কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে নিতে গ্রাম, ইউনিয়ন তথা জেলাকে জৈব চাষের জেলা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
ইদ্রিস আলী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বিষযুক্ত খাবার খেয়ে মানুষ নিরবে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমি চাই দেশের প্রতিটি মানুষ যেন বিষমুক্ত খাবার খেয়ে বাঁচতে পারে। আমার সাধ্যমত আমি আমার গ্রামটিকে বিষমুক্ত ফসল আবাদ করার জন্য সংগ্রামে নেমেছি। আমার এই সংগ্রামে সহযোগিতা করছে সদর উপজেলা কৃষি অফিস। তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মাধ্যমে আমি কাজ করে যাচ্ছি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, কীটনাশক ও অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ভয়াবহতা থেকে রক্ষার জন্য ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিস নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধ করে জৈব কৃষির দিকে ঝুকে পড়ছি।
আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল করতে কৃষক ইদ্রিস আলী দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষক ইদ্রিস আলীকে সকল প্রকার প্রযুক্তিগত সহযোগীতা করা হচ্ছে। কৃষক ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে বাড়ীতে এফওয়াইএম এর খামার জাত সার তৈরী করা হচ্ছে। এতে গ্রামটি জৈব পদ্ধতিতে চাষের দিকে ঝুকে পড়েছে। ইদ্রিস আলীর মত আমরা যদি আরও নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারি তাহলে সারাদেশে স্বাস্থ্যকর নিরাপদ শাক-সবজি, ফলমুল ও ফসল উৎপাদিত হবে এতে পুষ্টি সমৃদ্ধ জাতি তৈরী হবে এবং আমরা কৃষিতে আরও একধাপ এগিয়ে যাব।