রবিবার ● ৪ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সুরমা নদীর ভাঙ্গনে আতংকিত এলাকাবাসী
সুরমা নদীর ভাঙ্গনে আতংকিত এলাকাবাসী
সিলেট প্রতিনিধি :: (২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৪৩মি.) গৌরিপুর সুরমা ডাইকের মারাত্মক ভাঙ্গনে যেকোন সময় নদীতে বিলিন হতে পারে জীবন আলো করার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, দোকানপাট ও ডাইক সংলগ্ন ঘরবাড়ী। ফলে আতংকিত ডাইক সংলগ্ন এলাকাবাসী।
শেষ পর্যন্ত কানাইঘাট পৌরসভার ডালাইচর ও সদর ইউপির গৌরিপুর, কান্দেবপুর সুরমা ডাইকের ভয়াবহ ভাঙ্গন রক্ষা করা গেল না। সীমানা প্রাচীর সুরমা ডাইকে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে যার ফলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রক্ষাবাধ প্রকল্পের ব্লকের বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় ধ্বসে পড়ছে ব্লক সহ এলাকাবাসীর একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা সুরমা ডাইক।
শনিবার ভোর রাতে গৌরিপুর সুরমা ডাইকের বড় অংশ একেবারে ভেঙ্গে গিয়ে ডাইকের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা দিয়ে তীব্র বেগে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
সুরমা নদীর পানি আরো বেড়ে গেলে ভাঙ্গন কবলিত ডাইক দিয়ে তীব্র বেগে পানি প্রবেশ করে কানাইঘাট পৌর শহর, উপজেলা প্রশাসন, ডালাইচর, গৌরিপুর, কুওরঘড়ি, কান্দেবপুর, লক্ষীপ্রসাদ, বিষ্ণুপুর, রায়গড়, চাউরা সহ ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ও ৬নং সদর ইউপির বড় অংশ পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ফসল সহ মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এলাকাবাসী।
এদিকে ডালাইচর, গৌরিপুর, সুরমা ডাইক সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ মারাত্মক ভয়াবহ ভাঙ্গন এবং তার মধ্যে গৌরিপুর ডাইকের অংশ পুরোপুরি ভেঙ্গে গিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভাঙ্গনের খবর পেয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম, ভাঙ্গন কবলিত গৌরিপুর সুরমা ডাইক সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় রাহাত আনোয়ার সম্প্রতি উক্ত ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটকে নির্দেশও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গৌরিপুর-সুরমা ডাইকের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা যাতে করে দ্রুত সেখানে বাঁশের গড় দিয়ে এবং বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানো যায় সেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। আজকের মধ্যে সেখানে ভাঙ্গন ঠেকাতে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, এব্যাপারে এলাকার সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রয়োজনে সকলে মিলিত প্রচেষ্টায় এবং স্বেচ্ছাশ্রমে আমরা সবাই মিলে ডালাইচর এবং গৌরিপুর সুরমা ডাইকের ভাঙ্গন প্রতিরোধ করব। স্বেচ্ছাশ্রমের মধ্য দিয়ে সবকিছু করা সম্ভব, নতুবা ভাঙ্গন ঠেকাতে না পারলে এলাকার বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস পূর্বে কান্দেবপুর ও গৌরিপুর সুরমা ডাইকে ভাঙ্গন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ভাঙ্গন টেকাতে ১৫ লক্ষ টাকা প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ দেওয়ার পরও কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ না করায় আমরা ভাঙ্গন প্রকিরোধ ঠেকাতে পারিনি।
ইনশাহআল্লাহ গৌরিপুর ও ডালাইচর সুরমা ডাইকের মারাত্মক ভাঙ্গন কবলিত এলাকা রক্ষার জন্য আমরা দ্রুত এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এর আগে শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহসিনা বেগম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন আচার্য, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে এব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেটে জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ারের সাথে কথা বলেন।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহসিনা বেগম, সিলেটের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এম. সাজ্জাদুল হাসান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিভাগীয় উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ, উপ-প্রকৌশলী আব্দুল মতিন, উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমদ, উপজেল যুবলীগের আহ্বায়ক এনামুল হক, কানাইঘাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তাজ উদ্দিন, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন, সাংবাদিক মুমিন রশিদ, উপজেলা পরিষদের সিএ বিপ্লব কান্তি দাস অপু ও জাকারিয়া।
এলাকাবাসী মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও বন্যার পানি থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করার জন্য দ্রুত গৌরিপুর সুরমা ডাইকের ভাঙ্গন কবলিত এলাকার কাজ শুরু করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।