বুধবার ● ২১ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৭ এর খসড়া অনুমোদন হওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানাই তবে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ নেই
অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৭ এর খসড়া অনুমোদন হওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানাই তবে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ নেই
শামসুল আলম স্বপন ::(৭আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.০৫মি.) অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৭ এর খসড়া অনুমোদন হওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানাই তবে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ নেই ।কারণ আমরা অনলাইন নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটি দীর্ঘ দুই বছর ধরে যে খসড়া নীতিমালা তৈরী করেছিলাম তা মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৭ সাথে যথেষ্ট অমিল এবং ফারাক রয়েছে। ২০১২ সালে তথ্যমন্ত্রণালয়ের চাপিয়ে দেয়া অনলাইন নীতিমালার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন (বনপা) যে আন্দোলন করেছিল তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হলেও অনুমোদিত খসড়া নীতিমালায় নিউজ পোর্টাল মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়নি বরং নীতিমালাটি আমলাতান্ত্রিক জটিলার বেড়া জালে আটকানো হয়েছে।
অনলাইন গণমাধ্যম মালিকদের সাথে কেন বিমাতা সুলভ আচরণ ?
১. অনুমোদিত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে “অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের জন্য কমিশনে নির্ধারিত ফি দিতে হবে।” কিন্তু আমরা যখন নীতিমালা চুড়ান্ত করি সেখানে কোন ফি রাখার কথা বলা হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রিন্ট মিডিয়া ( সংবাদপত্র ) নিবন্ধন নীতে সরকারকে কোন ফি দিতে হয় না। সে ক্ষেত্রে অনলাইন সংবাদপত্র নিবন্ধনের জন্য ফি দিতে হবে কেন ? একই দেশে দুই আইন সংবিধানের সাথে সাংঘষিক কিনা ? ভেবে দেখতে হবে।
২. অনুমোদিত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে “মুদ্রিত পত্রিকা বা টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী যারা নিবন্ধন নিয়েছে, তাদের নতুন করে আর নিবন্ধন নিতে হবে না। তবে পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে হলে কমিশনকে তা অবহিত করতে হবে।”
আমাদের প্রশ্ন এমন অনেক দৈনিক পত্রিকা আছে যা নিবন্ধন নেয়ার পর সপ্তাহে একদিন কিংবা মাসে একদিন অথবা ডিক্লেয়ারেশন টিকিয়ে রাখার জন্য ৩ মাসে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে থাকে । তাদের যদি অনলাইন চালাতে নিবন্ধন নেয়া না লাগে তা হলে অনলাইন মালিকদের নিবন্ধন নেয়া লাগবে কেন? অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের পর আমরা কি প্রথম আলো, ইত্তেফাক কালের কন্ঠের মত কাগজের পত্রিকা প্রকাশ করতে পারবো ? কারণ প্রিন্ট মিডিয়ার অনুমোদন দেন ডিসি সাহেব । আর অনলাইন সংবাদ পত্র নিবন্ধন দিচ্ছেন ডিসি সাহেবদের বস সচিব মহোদয়। তা হলে আমরা কেন অনলাইন নিবন্ধন নিয়ে কাগজের পত্রিকা প্রকাশ করতে পারবো না ?
পুরো খসড়া নীতিমালা না পড়ে এর আলোচনা কিংবা সমালোচনা করা সম্ভব নয়। তবে আমরা জানি আমলার চাইবে সব সময় তাদের কর্তৃত্ব বজায় থাক এবং জটিলতার মা্ধ্যমে টু-পাইস কামাই হোক।
বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন (বনপা)’র পক্ষ থেকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলবো অনলাইন নিউজ পোর্টাল মালিকদের স্বার্থ বিরোধী কোন নীতিমালা যেন চাপিয়ে না দেয়া হয়। কারণ সরকার বিরোধী একটি গোষ্ঠির হাতে গোনা কয়েকটি নিউজ পোর্টাল ছাড়া অধিকাংশই নিউজ পোর্টাল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে পত্রিকা প্রকাশনা করে আসছে। পরিশেষে বলতে চাই “ সাংবাদিকার দালালী ছাড়ুন আর দালালরা সাংবাদিকতা ছাড়ুন ।
শামসুল আলম স্বপন
সভাপতি
বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন -বনপা
মোবা : ০১৭১৬৯৫৪৯১৯
মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৭ এর খসড়া অনুমোদন (সূত্র : www.chtmedia24.com)
ঢাকা প্রতিনিধি :: (৬ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ৭.০১মি.) পত্রিকা,বেতার ও টেলিভিশনের মতো অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকেও সম্প্রচার কমিশনের অধীনে এনে নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
জাতীয় সংসদ ভবনে ১৯ জুন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নিয়মিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৭’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, “গণমাধ্যম নীতিমালার আলোকেই অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করা হয়েছে। অনলাইন মিডিয়াটা যেন সুনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করে… নীতিমালায় সেই গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে, উদ্দেশ্যও বলা আছে।”
তিনি জানান, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম পরিচালনার জন্য সম্প্রচার কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। এই কমিশন গঠিত হবে জাতীয় সম্প্রচার আইনের অধীনে, যা প্রণয়নের কাজ চলছে।
জাতীয় সম্প্রচার কমিশন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের জন্য ‘গাইডলাইন’ তৈরি করবে। বিজ্ঞাপনের হার ও ফি সে অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
আর কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের দেখভাল করবে বলে জানান সচিব শফিউল।
“সম্প্রচার আইন পাস হলে কমিশন চলে আসবে। এই কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে।”
মুদ্রিত পত্রিকা বা টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী যারা নিবন্ধন নিয়েছে, তাদের নতুন করে আর নিবন্ধন নিতে হবে না। তবে পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে হলে কমিশনকে তা অবহিত করতে হবে।
অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের জন্য কমিশনে নির্ধারিত ফি দিতে হবে।
কোনো বিষয়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে কমিশনের কাছে অভিযোগ করা যাবে, কমিশন ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে।
অনলাইন গণমাধ্যমের কোনো তথ্য-উপাত্তের কারণে কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার ক্ষুণ্ন হলে কমিশন শুনানি করে নির্দেশনা জারি বা জরিমানা আরোপ করতে পারবে। জরিমানা কত হবে তা সম্প্রচার আইনে বলা থাকবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুভূতি, সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান, উন্নয়ন ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড, ক্রীড়া ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বক্তব্য, পণ্য, পণ্যের মান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, শিশু ও নারীর অধিকার বিষয়ে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার বিধান এখানেও প্রযোজ্য হবে।
অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞার বিষয়ে জানাতে চাইলে শফিউল বলেন, বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড থেকে বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে রেডিও, টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি লেখা ও মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশি নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে ‘অনলাইন গণমাধ্যম’ বোঝাবে।
“বিজ্ঞাপনের বিষয়ে কমিশন কোড অব গাইডলাইনস তৈরি করবে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটা কর হবে।”
সম্প্রচার আইন না হওয়ায় সম্প্রচার কমিশনের কাঠামোর বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, যেসব অনলাইন চলছে সেগুলো যদি প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী নিবন্ধন নিয়ে থাকে তা বহাল থাকবে। যারা এই নিবন্ধন নেয়নি তাদের নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে।
কোনো অনলাইন গণমাধ্যম রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করলে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, অনলাইন নীতিমালায় এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা নেই। এ সংক্রান্ত অন্যান্য আইন এখানে প্রযোজ্য হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ পর্যন্ত ১৮০০ অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে।