শুক্রবার ● ২৩ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » মংলা বন্দরে ১বছরে ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয়
মংলা বন্দরে ১বছরে ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয়
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, মংলা বন্দর থেকে ফিরে :: (৯ আষাঢ় ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ২.৫৩মি.) দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর হিসেবে মংলা বন্দরের যাত্রা শুরু ১৯৫০ সালে। নানা চড়াই উৎরাই পার করে এ বন্দর এখন শুধু লাভজনক প্রতিষ্ঠানই নয়, সম্ভাবনাময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণদুয়ারের দিকে দ্রুত করে এগিয়ে চলছে । বন্দর সূত্র জানায়,গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত লাভের পাল্লাই ভারি ছিল সেখানে। কিন্তু এর পরই নেমে আসতে থাকে দুর্দিন। ১৩১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ায় নিট মুনাফা আসে ৬৪ কোটি টাকা ৭৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এ বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছরে সম্মেলিত মুনাফা হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। গত ২০০৪- ০৫ অর্থ বছরে ১১ কোটি টাকা লোকসান দেয় মংলা বন্দর। পরের বছর এর পরিমাণ ছিল ৯ কোটি টাকা। লোকসানের ধারা অব্যাহত থাকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। তবে ২০০৯ সালে অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কারসহ ৫৭০ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়ায় মংলা বন্দরের গতি ফিরেছে। ৬৭ বছর আগে যাত্রা শুরু করা মংলা বন্দরকে এক সময় বলা হতো নিঝুমপুরী। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বন্দরকে যেতে হয়েছে নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে। অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল বন্দরটি। ব্যবসায়ীরাও হাত গুটিয়ে নেওয়ায় এক পর্যায়ে মংলা বন্দর লোকসানের মুখ দেখতে শুরু করে। তবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেলেও গত ৯ বছরে এ বন্দর অনেকটাই এগিয়েছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত লোকসানের ধারা অব্যাহত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়ায় লোকসান কাটিয়ে বন্দরটি লাভের ধারায় ফিরছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স হাসেম অ্যান্ড সন্স এর মালিক জুলফিকার আলী বলেন,নৌ ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতিসহ সময় মতো মাল খালাস হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। প্রাণ শক্তি ফিরে পাওয়ায় সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এ বন্দরে পণ্য খালাসও বেড়েছে। বন্দরের আরেক ব্যবহারকারী নুরু অ্যান্ড সন্স-এর মালিক এইচ এম দুলাল সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ‘চিংড়ি ও পাট যেটা সরাসরি মংলা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে চলে যেত, এখন সে সব পণ্য আবার মংলা বন্দর দিয়ে রফতানি হচ্ছে। এই বন্দর দ্রুতই গতিশীল হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালীহবে।’
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন,বন্দরে দিন দিন আয় বেড়ে শত কোটি টাকার ঘরে পৌঁছেছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৩১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ায় নিট মুনাফা আসে ৬৪ কোটি টাকা ৭৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পাঁচবছরে সম্মেলিত মুনাফা হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ‘জাহাজের আগমন বেড়ে যাওয়ায় অটোমেটিক বন্দরের আয় বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে কেবল নতুন নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ ও সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ফলে। আগামীতে আরও নতুন নতুন ইকুইপমেন্ট সংযোজন হবে।’
জানাযায়, আয় বাড়ার সঙ্গে মংলা বন্দর দিয়ে সরাসরি রফতানির পরিমাণও বেড়েছে। এক সময় পাট কল গুলোর কারণে পাটপণ্য রফতানির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল এই বন্দর। কিন্তু বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় একের পর এক পাটকল বন্ধ হওয়ায় এই বন্দর দিয়ে রফতানির পরিমাণ কমেছে। তবে আবারও পাট রফতানি বেড়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিক মোস্তফা কামাল সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ‘গত বছর এই বন্দর দিয়ে ৩৮ হাজার ৩২৩ মে. টন পাট রফতানি হয়েছে। চলতি বছরের গত মে মাস পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ৪৩ হাজার ২৭৫ মে. টন পাট।’
বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু এখনও হয়নি। ২০১৮ সালের মধ্যে যখন পদ্মা সেতু হবে তখন এ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। ঢাকা থেকে মংলা বন্দরের দূরত্ব কম হবে, এতে সময় কম লাগবে। এ কারণেই রফতানি যোগ্য আর এমজি গুলো মংলা বন্দর দিয়ে রফতানি হবে। তাতে কোনও সন্দেহ নেই।